মাত্র ৩৯-এই মৃত্যু, অথচ প্রথম ভারতীয় হিসেবে হলিউড কাঁপিয়েছিলেন এই মাহুত পুত্রই!
Actor Sabu Dastagir: সাবু দস্তগীরের জন্ম ১৯২৪ সালে তৎকালীন মহীশূর রাজ্যে। একজন মাহুতেরই পুত্র ছিলেন সাবু।
রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর গল্প থেকে সিনেমা তৈরি হবে। গল্প বাছা শেষ, লোকেশনও বাছা শেষ, কেবল অভিনেতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কিছুতেই। সিনেমা বিদেশি পরিচালকের কিন্তু তাতে ভারতীয় মুখ চাই। হাতি নিয়ে সিনেমা। সাল ১৯৩৭। তথ্যচিত্র নির্মাতা রবার্ট ফ্ল্যাহার্টি বহুকাল ধরেই চাইছেন রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর গল্প টুমাই অব দ্য এলিফ্যান্টস গল্পটি পর্দায় তুলে ধরবেন। তথ্যচিত্রটির নাম রেখেছেন এলিফ্যান্ট বয়। কিন্তু যুতসই কোনও ভারতীয় মুখই খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর মনে ধরল ১৩ বছরের কিশোর সাবু দস্তগীরকে। কে জানত, ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে হলিউডে সাড়া ফেলা প্রথম অভিনেতা হয়ে উঠবেন সাবু!
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় অভিনেতাদের হলিউডে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেড়েছে। ইরফান খানের সময় অবধি ব্যাপারটা বেশ গর্বের ও আশ্চর্যের ছিল, তারপর এই গ্লোবাল মার্কেটে অভিনেতাদের পরিসর বৃদ্ধি জলভাত। স্টার ট্রেকে অভিনয় করেছিলেন পার্সিস খাম্বাট্টা, তারপর ইরফান খান একাধিক ব্লকবাস্টারে নিজের উপস্থিতি দিয়ে মাত করে ফেলেছেন। তবে শুরুটা তো হয়েছিল সেই কোনকালে! স্বাধীনতার ঢের আগে, সাবু দস্তগীরের হাত ধরেই। হলিউড তারকা হওয়া প্রথম ভারতীয় অভিনেতার সফর শুরু হয়েছিল সেই ১৯৩০-এর দশকে।
এলিফ্যান্ট বয় সিনেমার জন্য সাবুর চেয়ে যথাযথ অভিনেতা কেউ হতেই পারতেন না। সাবু দস্তগীরের জন্ম ১৯২৪ সালে তৎকালীন মহীশূর রাজ্যে। একজন মাহুতেরই পুত্র ছিলেন সাবু। তাঁর অভিনীত প্রথম এই সিনেমা বেশ সাফল্যও পায়। তারপর একাধিক সিনেমায় ডাকাডাকি! তবে সেসব আর ক'দিনই বা! সাবু নিজেও জানতেন না হলিউডের আকাশে তিনি ক্রমেই ম্রিয়মাণ নক্ষত্র হয়ে উঠছেন।
এলিফ্যান্ট বয়ের পরেই ১৯৩৮ সালের 'ড্রাম' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সাবু। বলা যায় হলিউডে তাঁর স্থান পাকা করেছিল এই সিনেমাটিই। প্রযোজক আলেকজান্ডার কোর্দার এই সিনেমা কিশোর সাবুকে টেনে নিয়ে যায় আমেরিকায়। সেখানে প্রতিষ্ঠা দেয় এবং নতুন কর্মজীবনের এক ঝকঝকে দরজা খুলে দেয়।
১৯৪০ সালে, সাবু তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। দ্য থিফ অব বাগদাদ সিনেমাতে আবু চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন সাবু। সিনেমাটি ব্যাপক হিট হয় এবং সাবুর অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়েন চলচ্চিত্র সমালোচকরা। ঠিক ২ বছর পর, ১৯৪২ সালে জোল্টান কোর্দার দ্য জঙ্গল বুক সিনেমায় মোগলি চরিত্রে অভিনয় করেন সাবু। আরাবিয়ান নাইটস, হোয়াইট স্যাভেজ এবং কোবরা ওম্যানের মতো হিট সিনেমাতেও তাঁর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে মুক্তি পাওয়া একের পর এক এই সিনেমাগুলি ভারতীয় হিসেবে হলিউডে এক অন্য আসন পেতে দেয় সাবুর জন্য পেয়েছিল৷ ১৯৬০ সালে হলিউড ওয়াক অব ফেমের একজন তারকা ছিলে অভিনেতা সাবু।
তবে ওই যে, ম্রিয়মাণ নক্ষত্রের কাহিনি। একের পর এক এত সিনেমা ও খ্যাতির পর ১৯৪৪ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন সাবু দস্তগীর। সাবু মার্কিন সেনাবাহিনীর তালিকাভুক্ত হন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধও করেন। ওই যুদ্ধে বীরত্বের পদকও জিতেছিলেন সাবু। ১৯৪৫ সালের পর, সাবু স্রেফ হলিউড চলচ্চিত্রেই কাজ করেছিলেন কিন্তু সাফল্য আসেনি আর। ১৯৪৭ সালের হিট চলচ্চিত্র ব্ল্যাক নার্সিসাসের মতো সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি নজরে আসে ঠিকই কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে তাঁর অভিনয় ধীরে ধীরে মূল জায়গা থেকে সরে যেতে শুরু করে।
এবার বলিউডের সিনেমায় চলে আসেন সাবু। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় মাদার ইন্ডিয়া। মেহবুব খান সাবুকে মাদার ইন্ডিয়াতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করান। এটিই ছিল বলিউডে সাবুর অভিষেক। তবে ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ায় এই ভূমিকাতে আর কাজ করা হলো না সাবুর! সুনীল দত্তের হাতে চলে গেল সেই বিখ্যাত চরিত্রটি। সাবুর আর ভারতের কোনও সিনেমাতেই কাজ করে ওঠা হয়নি। ১৯৬৩ সালে আ টাইগার ওয়াকস সিনেমা দিয়ে হলিউডে প্রত্যাবর্তন হয় ঠিকই তবে তার তিন মাস পর, হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাবু। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৯।