সিবিআইয়ের চার্জশিট দেখে চরম প্রতিক্রিয়া আরজি কর অভিযুক্তের, কোর্টে যা জানাল ধৃত সঞ্জয়
RG Kar Case: সরকারি আইনজীবীর কাছ থেকে সই করে নেওয়া সেই প্রতিলিপি দেখে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার দাবি করে, সে কিছুই করেনি। কিছুই জানে না সে।
আরজি কর কাণ্ডের প্রায় ৫৮ দিন পরে গত সোমবার আরজি কর কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেখানে আরজি কর কাণ্ডের জন্য মূল অভিযুক্ত হিসেবে রাখা হয়েছে সঞ্জয় রায়ের নামই। সেই মামলার চার্জশিটের প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের হাতে। আর সেই প্রতিলিপি পেয়ে সঞ্জয় জানায়, সে কিছুই করেনি। এমনকী সে কিছুই জানে না।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ৯ আগস্ট হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে ওই জুনিয়র নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। মধ্যরাতের পর হাসপাতালে তার দীর্ঘ শিফটের এক পর্যায়ে তিনি বিশ্রামের জন্য ওই রুমে গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে তার নগ্ন রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তপক্ষ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী তার শরীরে ২৫টি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
সেই ঘটনার পরের দিনই সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে অভিযুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয় রায়কে ৯ আগস্ট ভোর ৪.০৩ মিনিটে সেমিনার কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। অপরাধস্থলে সঞ্জয়ের ব্লুটুথ হেডফোনও খুঁজে পায় কলকাতা পুলিশ। সিবিআই তদন্তে নেমে সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্ট করে। সেখানে তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য খুঁজে পায় সিবিআই। এরপরে ধৃতের নার্কো পরীক্ষা করাতে চেয়েছিল সিবিআই। তবে সেই পরীক্ষায় অনুমতি দেয়নি ধৃত সঞ্জয়। প্রথম থেকেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে, চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডে শুধু কি সঞ্জয়, নাকি আরও কেউ মিলিত ভাবে ঘটায় এই নক্কারজনক ঘটনাটি। তবে শেষপর্যন্ত আরজি কর কাণ্ডে আরও কোনও প্রধান অভিযুক্ত খুঁজে পাননি সিবিআই তদন্তকারীরা। সোমবার সিবিআইয়ের ২১৩ পাতার চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম দেখা যায় সেই সঞ্জয়েরই।
আরও পড়ুন: পশুর মতো প্রবৃত্তি! ধৃত সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা যা বলছে
সরকারি আইনজীবীর কাছ থেকে সই করে নেওয়া সেই প্রতিলিপি দেখে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার দাবি করে, সে কিছুই করেনি। কিছুই জানে না সে। মঙ্গলবারই ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ারকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে এজলাসে দাঁড়িয়ে ধৃত সন্দীপ জানায়, সে কিছু বলতে চায়। এর পরেই তাকে কাঠগড়ায় আনা হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় জানায়, ‘‘আমি কিছু বলতে চাই। আগের দিনও বলতে পারিনি। কিছু বলতে না পারলে তো সব দোষ আমার উপর পড়বে।’’বিচারক তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আপনার যা বলার, সব বলতে পারবেন।’’ অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার তখন বলেন, ‘‘হুজুর, আমি কিছু করিনি। ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।’’ এর পরে ধৃতকে অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারকের কাছে আনা হয়।
সিবিআই সোমবার আদালতে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, যেখানে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (দীর্ঘক্ষণ অজ্ঞান অবস্থায় ধর্ষণ) এবং ১০৩ (খুন) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে। পরবর্তী শুনানিগুলি যাতে ‘ইন-ক্যামেরা’ (একান্তে, সর্বসমক্ষে নয়) হয়, সিবিআইয়ের আইনজীবী সেই দাবি তুলেছেন। ধৃতের আইনজীবীর দাবি, সিবিআইয়ের চার্জশিটে বেশ কিছু ছবির কথা বলা হয়েছে। সেগুলি এখনও হাতে পাননি তাঁরা। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, কিছু ছবি তাঁরা পরে দেবেন। আর কিছু ছবির ফরেন্সিক পরীক্ষা চলছে। ধৃতের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চান। বিচারক এই নিয়ে লিখিত আবেদন জানাতে বলেছেন।
আরও পড়ুন: জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে এবার গণইস্তফা সিনিয়রদের, কী হতে চলেছে নবান্নের পরবর্তী পদক্ষেপ?
মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায়ের নাম থাকলেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের নাম রয়েছে। প্রমাণ লোপাট, তদন্তের দিক ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে থাকলেও খুনের সঙ্গে সরাসরি যোগের প্রমাণ দাখিল করেনি সিবিআই আদালতে। প্রশ্ন উঠেছে, কী হতে চলেছে এর পরে সিবিআইয়ের পদক্ষেপ? সেদিন আদালতেই বা কী জানাতে চেয়েছিল ধৃত সঞ্জয়? এর আগেও নিজেকে আদালতে নির্দোষ বলে জানিয়েছিল সে? সত্যিই কি অন্য কিছু জানাতে চাইছে আদালতে সঞ্জয়, যা ঘুরিয়ে দিতে পারে তদন্তের মোড়। প্রশ্ন থাকছেই।