গোঁয়ার্তুমি করে জকোভিচ কি ফরাসি ওপেনে খেলার সুযোগও হারাবেন
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকার। বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। অস্ট্রেলিয়া ওপেনে তাঁর যোগদান ঘিরে যেভাবে নাটকীয় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াজগত তা দেখে কেউ হতাশ, কেউ আবার বলছেন, শেখার আছে।
চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ওপেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলকে টিকা নিতেই হবে অথবা চিকিৎসকের ছাড়পত্র আনতে হবে। জকোভিচ টিকা নিয়েছেন কিনা তা প্রথম দিকে জানাতে চাননি। প্রথমে তাঁর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও পরে ছাড়পত্র পান, একথা টেনিস তারকা নিজেই ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন। তবে নির্ধারিত দিনে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে পা রাখতেই জটিলতা সৃষ্টি হয়। জকোভিচের ভিসার আবেদন পত্রে ভুল থাকায় তাঁকে বিমানবন্দর থেকে বেরনোর অনুমতিই দেওয়া হয় না। স্বয়ং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন। তিনি জানান,' কীসের ভিত্তিতে জকোভিচকে মেডিক্যাল প্যানেল ছাড় দিয়েছে তা জানাতে হবে। সেই বক্তব্য আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হলেই তাঁর খেলার প্রশ্ন উঠছে। না হলে পরের উড়ানেই তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। নিয়ম সকলের জন্যই সমান, আমাদের দেশে কারও জন্য আলাদা কোনো সুবিধা থাকতে পারে না'। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর ভিসা বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন নোভাক জকোভিচ।এই অবস্থায় সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ জকোভিচের পাশে দাঁড়ান। আদালতের রায় টেনিস তারকার পক্ষে গেলেও অস্ট্রেলিয়া সরকার মানেনি সে কথা। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হক তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দ্বিতীয় বারের জন্য জকোভিচের ভিসা বাতিল করেন। তিন বছর আর সে দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না টেনিস তারকা। হক জানিয়েছেন, ' জনস্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে'।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় কয়েক লক্ষ করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।সারা বিশ্বের চিকিৎসকমহল বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে টিকাই একমাত্র ভরসা। এমন কঠিন সময়ে দাঁড়িয়েও জকোভিচের এহেন গোঁয়ার আচরণ দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন ছাড়া কিছুই নয়। বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা করোনা বিধি ভাঙার যে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন তা মহামারী মোকাবিলার পক্ষে দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি প্রতিষেধক নিতে অনিচ্ছুক একথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত বিভাগকে জমা দেওয়া নথিতেও ভুল তথ্য দিয়েছেন। এমনকী করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরেও তিনি মাস্ক ছাড়াই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তাঁর মত প্রথম সারির তারকার কাছ থেকে এমন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনের মত আচরণ অপ্রত্যাশিত। প্রসঙ্গ যখন জনস্বাস্থ্য তখন তাঁর টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকা উচিত নয়। এব্যাপারে বিখ্যাত টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালও তাঁকে একহাত দিয়েছেন।
অনেকেই জকোভিচের এমন আচরণের পিছনে অন্য কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, জকোভিচ সর্বিয়ার বেলগ্রেডে জন্মগ্রহণ করেছেন যেখানে বিকল্প চিকিৎসার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁর নিজেরও এ ব্যাপারে যথেষ্ট পড়াশোনা রয়েছে। এর আগে বহু ঘটনায় তাঁর প্রমাণও মিলেছে। তাই এটা নতুন কিছু নয়। জকোভিচ মনে করেন, খাদ্যাভাস ও আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেই করোনা নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলা করা সম্ভব। জকোভিচের ব্য়ক্তিগত আদর্শ থাকতেই পারে কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে তিনি শারীরিক অবস্থার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম অতিমারী পরবর্তী দুনিয়ায় সাধারণ মানুষের সে ক্ষমতার যে বিন্দুমাত্র নেই তা বলাই বাহুল্য। কাজেই অন্যের ভালো না করুন, ক্ষতি কি জকোভিচ করতে পারেন? তাছাড়া প্রশ্ন উঠছে ভ্যাকসিন নেননি একথা লুকোলেন কেন জকোভিচ, সত্যটা স্বীকার করে, আদর্শের ঢাক পিটিয়েই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলেন না কেন?
আরও পড়ুন-সুভাষ না রাসবিহারী, বাঙালির প্রাণের নায়ক সব্যসাচী আসলে কে!
সদ্য জানা গিয়েছে নোভাক জকোভিচ টিকা নিতে আগ্রহী না হলেও তিনি করোনার ওষুধ তৈরির সাথে যুক্ত। ডেনমার্কের ' কোয়ান্টাবায়োরেস' সংস্থার সিইও ইভান লনকারেভিচ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থা করোনার ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।২০২০ সালের জুন মাসে তাঁদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন টেনিস তারকা। সংস্থায় ৮০ শতাংশ মালিকানাও রয়েছে বলে জানান তিনি। ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও স্লোভেনিয়াতে ওই সংস্থার ১১ জন বিজ্ঞানী করোনার ওষুধ তৈরির কাজ করছেন। ইতিমধ্যে নাকি কয়েক দফার ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। তবে টেনিস তারকা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। জাকোভিচের একটি সুক্ষ্ম সুতোর উপর দিয়ে হাঁটছেন, একদিকে তিনি ব্যক্তি অধিকার প্রয়োগ করছেন। অন্য দিকে তাঁর পেশাদারি স্বার্থ তার ব্যক্তি অধিকারের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধরা যাক কেউ বাজারি ফল সবজি খান না কারণ তিনি মনে করেন তাতে কীটনাশক রয়েছে, তা তিনি করতেই পারেন, কিন্তু তিনি যদি কীটনাশকের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন তা তো পরস্পরবিরোধী। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের দায় অন্যেরা নিতে যাবে কেন, নিজে করোনা আক্রান্ত জেনেও জকোভিচ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ালেন। আসলে বিপদে ফেললেন বহু মানুষকে। একাংশ অবশ্য মনে করেন, ব্য়ক্তিরুচি আর ব্যবসায়িক স্বার্থ আলাদা হতেই পারে। তবে জকোভিচের তথ্যগোপন করার প্রবণতাকে কেউই সমর্থন করছেন না।
করোনার টিকা না নিলে ফরাসি ওপেনেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না জকোভিচ। সে দেশেও টিকা সংক্রান্ত একটি আইন পাশ হয়েছে চলতি মাসেই। আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফরাসি ওপেন খেলতে হলে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন জকোভিচ কি করে সেটাই দেখার…