তামাকেই মৃত্যু! যে কারণে দেশে হু হু করে বাড়ছে মুখের ক্যানসারে আক্রান্তর সংখ্যা
Oral Cancer: ভারতে ওরাল ক্যানসার-আক্রান্তদের সংখ্যা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছেও।
ভারতে হু হু করে বাড়ছে মুখের ক্যানসারে আক্রান্তর সংখ্যা। দেশে মোট ক্যানসার-আক্রান্তদের অর্ধেকই মুখের ক্যানসারের রোগী। চিন্তা আরও বাড়িয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত ল্যানসেট গবেষণা রিপোর্ট। ল্যানসেট রিপোর্ট বলছে, ক্যানসার-আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। অথচ মোটা অঙ্কের লাভের আশায় তামাক, গুটখা, সিগারেট বিড়ি, খৈনি নিষিদ্ধও করা সম্ভব হচ্ছে না। অতীতে বহুবার একাধিক তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেও যে খুব কাজ হয়েছে তার প্রমাণ মেলেনা। ভারতে ক্যানসার-আক্রান্তদের সংখ্যা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছেও। তবে মুখের ক্যানসার সামান্য চেষ্টা করলেই রোখা সম্ভব।
ওরাল ক্যানসার বা মুখের ক্যানসারের লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে মুখের ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা যায়। তবে বিকল্প কোনও চিকিৎসা না করে সমূলে ক্যানসার-আক্রান্ত অংশকে অপারেশনের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়।
১. মুখের মধ্যে কোনও সাদাটে বা লালচে প্যাচ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষত কোনও ব্যক্তি যদি চেন স্মোকার বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন তবে জিভের সাদা প্যাচ বা লিউকোপ্লিয়া ক্যানসারের প্রথম স্টেজ।
আরও পড়ুন: পাউডারেই লুকিয়ে ক্যানসারের বিষ, ভারতের শিশু ও মহিলারা কতটা বিপদে
২. গলা বা গলার কোনও ফোলা অংশ যা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু কোনও ব্যথা অনুভব হয় না বললেই চলে। অনেকের খাবার খাওয়ার সময় ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।
৩. মুখের ভেতরে কোনও ব্যথাহীন ফোলা অংশ, যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, এমন হলেও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
৪. ঠোঁটের ওপর বা মুখের ভেতর বহুদিন ধরে ক্ষত তৈরি হয়েছে, যা ওষুধ খেয়েও সারছে না, ফেলে না রেখে শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. জিভ নাড়াতে অসুবিধা বা মুখ খুলে কথা বলতে সমস্যা হতেও পারে।
কারা বেশি আক্রান্ত হন মুখের ক্যানসারে?
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় পুরুষরাই সবচেয়ে বেশি ভুগছেন মুখের ক্যানসারে। মৃত্যুর ঘটনাও এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। নিয়মিত জর্দা, পান, খইনি, বিড়ি, সিগারেট, গুটখা প্রভৃতি তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের জন্যই এমন পরিণতি। অ্যালকোহল পান করলেও মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষের উদাসীনতা এবং পারিবারিক ইতিহাসও এর জন্য দায়ী।
ল্যানসেট-এর রিপোর্ট বলছে, ভারতের প্রায় ২৮ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক গ্রহণ করেন। ফলস্বরূপ, এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষের অকালমৃত্যু হয়। মুখের ক্যানসারে আক্রান্তদের ৬০ শতাংশ রোগী ক্যানসার শনাক্তকরণের পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা গেছেন। ভারতে ৩০ বা তার বেশি বয়সি মৃত ব্যক্তিদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দুজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাকজাত দ্রব্য, এঁদের কেউই ধূমপান করেন না। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২৮ কোটির মধ্যে ২২ কোটি ভারতীয়ই নাকি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মূলত কিশোর বয়সে তামাকের প্রতি আসক্তি জন্মায়।
ভারতে গুটখা নিষিদ্ধ করা হলেও তা সহজেই যে কোনও দোকানে পাওয়া সম্ভব। তাই শুধু নিয়ম চালু করেই সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
মুখের ক্যানসার রুখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কমিটির প্রস্তাব
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে গুটখা, খইনি, পানমশলার মতো তামাকজাত দ্রব্য নিষিদ্ধ করার বিষয়ে। পাশাপাশি বিমানবন্দর, রেস্তোরাঁ বা প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করা ও দোকান থেকে খুচরো সিগারেট খাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি কথার প্রস্তাব দিয়েছে ওই কমিটি। এছাড়া ক্যানসার যাতে একেবারে প্রথম ধাপেই ধরা পড়ে, সেজন্য প্রতি বছর দেশবাসীর ক্যানসার পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করার জন্য সুপারিশ করেছে কমিটি। রিপোর্ট বলছে, ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা ভারতে অনেক, কারণ দেরিতে রোগ নির্ণয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং পরিকাঠামোর অভাবকেই এজন্য দায়ী করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কমিটির এই রিপোর্ট সম্প্রতি কমিটির চেয়ারম্যান রামগোপাল যাদব রাজ্যসভায় পেশ করেন। সেখানেই এই সুপারিশগুলি জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
তবে সুপারিশগুলিকে কতখানি বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব, তার ভার এখন সরকারের ওপর।