সংসদে উচ্চবর্ণ ওবিসি সমান সমান, স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরে প্রথমবার

Lok Sabha Representation: সব মিলিয়ে এ বার লোকসভায় ২৬% উচ্চ বর্ণের এমপি রয়েছেন। স্বাধীনতার পর প্রথমবার উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধি সংখ্যা সবচেয়ে কম। অন্যদিকে,অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) থেকেও রয়েছেন ২৬.২% প্রতিনিধি।

ক্ষমতাবানকে প্রশ্ন করার প্রধান কেন্দ্র সংসদভবন। তাই সেখানে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কি তাই হয়? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিস সংসদ ভবনেই, অথচ একদশকে দিনের পর দিন সংসদে মুখ না দেখানোর রেকর্ড গড়েছেন তিনি। মোদি জমানার দ্বিতীয় দফায় সংসদে আলোচনা ছাড়াই তিনটি কৃষি বিল বলবৎ করা হয়ে গিয়েছিল। এই অনুপস্থিতি, অন্যকে সুযোগ না দেওয়ার ট্র‍্যাডিশনে এবার ছেদ পড়তে চলেছে সম্ভবত। কারণ, তৃতীয় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় মোট ৭২ জন আছেন। তাঁদের মধ্যে ওবিসি ২৭ জন। বিজেপি এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় মন্ত্রীসভায় জোটসঙ্গীদেরও মন রাখতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বার লোকসভায় ২৬% উচ্চ বর্ণের এমপি রয়েছেন। স্বাধীনতার পর প্রথমবার উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধি সংখ্যা সবচেয়ে কম। অন্যদিকে,অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) থেকেও রয়েছেন ২৬.২% প্রতিনিধি। স্বাধীনতার পর প্রথমবার উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধি ও ওবিসির প্রতিনিধির সংখ্যা মিলে গেল। ইন্ডিয়া জোট এবং এনডিএ জোট দু'তরফেই ওবিসিদের প্রতিনিধি রয়েছেন। তবে ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোটের তুলনায় বেশি ওবিসি সাংসদ দিয়েছে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবারেও এনডিএ জোটে উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরাই সংখ্যায় বেশি।

এনডিএ-এর চালচিত্র

এনডিএ-তে ৩৩.২% ব্রাহ্মণ-রাজপুতদের মতো উচ্চবর্ণ এবং ১৫.৭% অন্যান্য উচ্চবর্ণের সাংসদ হয়েছেন। উচ্চবর্ণের মোট ২১ জন সাংসদ হয়েছেন। ওবিসিদের থেকে রয়েছেন ২৬.২%, দলিতদের থেকে ১৩.৩%, এবং আদিবাসীদের থেকে ১০.৮% জনপ্রতিনিধি। মোট ২ জন বৌদ্ধ, ২ জন শিখ এবং ১ জন খ্রিস্টান সাংসদ হয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপিতে ২৪০ জন বা এনডিএ জোটে ২৯৩ জনের মধ্যে মুসলিম এমপি - র সংখ্যা শূন্য। উল্লেখ্য, এনডিএ জোটে একজনও মুসলিম সাংসদ নেই।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতার পর এই প্রথম! দেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল না একজন মুসলিম সাংসদেরও

এক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশের হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৮০%। তাঁদের মধ্যে তথাকথিত উচ্চবর্ণ ২৬% এবং ওবিসি প্রায় ৪৩%। অর্থাৎ উচ্চবর্ণের জনসংখ্যা ওবিসিদের তুলনায় কম। তবুও স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর এই প্রথমবার লোকসভায় একই অঙ্কের উচ্চবর্ণ এবং ওবিসি সাংসদ পাওয়া গেল। এনডিএ-র ক্ষেত্রে তবুও উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিত্বই বেশি। আবার ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনে মোট ৭৮জন মুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার মধ্যে ২৪ জন মুসলিম জনপ্রতিনিধি লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২৪ জনের মধ্যে ২১ জন জনপ্রতিনিধিই বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার। এনডিএ জোটে একজনও মুসলিম সাংসদ নেই। এখানে বলা দরকার, সম্প্রতি ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিউ রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২০ অর্থাৎ কোভিডকালে ধর্ম নিয়ে সামাজিক শত্রুতার সূচকে ১৯৮ টি দেশের মধ্যে ভারতের নাম ছিল শীর্ষে।

ভোট আবহে বঙ্গের ২০১০ সাল থেকে ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তিনি লড়বেন, হাইকোর্টের রায় কিছুতেই মানবেন না। মোদি অবশ্য বলতে চেয়েছিলেন বিরোধিদের শিক্ষা দিয়েছে আদালত। আসলে মোদি একই সঙ্গে বিরোধিদের জব্দ করতে চেয়েছিলেন আবার মুসলিম সমাজকেও একহাত নিয়েছিলেন।

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, গত লোকসভা থেকেও আসন কমেছে বিজেপির। উত্তরপ্রদেশের ফৈজবাদ আসনে রামমন্দিরের অবস্থান। এখানেও বিজেপি হেরে গিয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি যে ফলপ্রসূ হয়নি তা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।

আরও পড়ুন:RSS-এর কৌশল! যে ছকে বারবার মুসলিম ভোট ঘরে আনতে চেয়েছে বিজেপি

প্রসঙ্গত, এক দশকে মোদি সরকার প্রায়ই সংবিধানের বেড়া ভেঙেছে। ক্ষমতাসীনরা 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটি আইনি ঘোষণা ছাড়াই মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেখতে গেলে ওবিসিরা সংখ্যায় উচ্চবর্ণের থেকে বেশি। তারপরও স্বাধীনতার ৭৭ বছরে তাঁদের সাংসদ ও উচ্চবর্ণের সাংসদের সংখ্যা এক। আবার এনডিএ- তে  উচ্চবর্ণই বেশি। সাংসদের তালিকা ফের বৈষম্যেরই ইঙ্গিত করছে। ফলে প্রশ্ন ওঠে, সংবিধানের 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি বর্তমান ভারতবর্ষে আদৌ কোনো তাৎপর্য বহন করে? রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যেই সংবিধানের কাটাছেঁড়া চলছে না কি? দুর্ভাগ্যজনক এরাই দেশের ক্ষমতাসীন

More Articles