আপনার অজান্তেই সমাজমাধ্যমে যেভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে আপনার শিশু!
Abusive Material Claim: প্রধান অভিযোগ, নাবালক-নাবালিকাদের অ্যাকাউন্টে যৌন কন্টেন্ট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যৌন নিগ্রহকারী প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নাবলক-নাবালিকার অ্যাকাউন্ট ও তথ্য।
সম্প্রতি একটি আভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলে জানা গিয়েছে, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের অভিভাবক সংস্থা মেটার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন লক্ষাধিক নাবালক-নাবালিকা প্রাপ্তবয়স্কদের যৌনাঙ্গের ছবি বা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত কনটেন্ট পান তাঁদের অ্যাকাউন্টে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে নিউ মেক্সিকো মেটার বিরুদ্ধে ২০২৩-এর ডিসেম্বরে একটি মামলা করে। সেই মামলার শুনানিতে একটি নতুন নথি পেশ করেছে নিউ মেক্সিকো। মেটার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, নাবালক-নাবালিকাদের অ্যাকাউন্টে যৌন কন্টেন্ট পৌঁছে দিচ্ছে তারা। আর যৌন নিগ্রহকারী প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নাবলক-নাবালিকার অ্যাকাউন্ট ও তথ্য।
মামলাকারীরা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে এই তথ্যের উপস্থাপনা করা হয়েছিল। ২০২১-এর একটি নথি থেকে মেটা-কর্মীদের বয়ান উদ্ধৃত করে তাঁরা বলেন, প্ল্যাটফর্মটির একটি রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম "পিপল ইউ মে নো"। কর্মীদের কাছে এ'টি কম বয়েসী উপভোক্তাদের সঙ্গে সম্ভাব্য যৌনশিকারির সংযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল।
মামলাটিতে দাবি করা হয়েছে, কর্মচারীরা বহু বছর আগেই মেটা কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অ্যালগরিদম পুনরায় খতিয়ে দেখতে অস্বীকার করে, এবং সতর্কবার্তায় কান দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করে না। অ্যালগরিদমটি এখনও পিওয়াইএমকে নামে কর্মীদের মধ্যে কুখ্যাত, জানায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
আরও পড়ুন : রিলস দেখছেন সারাক্ষণ! ইনস্টাগ্রাম রিলসের ভয়াবহ দিক জেনে আঁতকে উঠছে বিশ্ব
মেটা এই নতুন নথির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তারা বলেছে, নিউ মেক্সিকো এ'খান থেকে খানিক খুবলে, ওখান থেকে খানিক খাবলে, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ভাবে নির্বাচিত কিছু অংশ তুলে ধরে মেটার কাজকর্ম সম্বন্ধে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। কোম্পানির দাবি, বাচ্চাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকা মানুষজন 'দাগী অপরাধী"। মেটা বহুরকম ভাবে বাচ্চাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। বাচ্চাদের অভিভাবকেরা যাতে এ'ব্যাপারে খেয়াল রাখতে পারেন─সেই ব্যবস্থাও করেছে তারা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ২০২০ সালের আরেকটি আভ্যন্তরীণ ইমেইলের কথোপকথন থেকে দেখিয়েছে, আমেরিকায়, ফেসবুক মেসেঞ্জারের থেকে ইনস্টাগ্রামে ৩৮ গুণ বেশি 'সেক্স টক' করা হয় বাচ্চাদের সঙ্গে। ইমেলটিতে কোম্পানিকে আবেদন জানানো হচ্ছে, প্লাটফর্মটিকে আরও সুরক্ষিত করার জন্য। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে 'চাইল্ড সেফটি: স্টেট অব প্লে' নামে একটি উপস্থাপনায় অভিযোগ করা হয়, ইনস্টাগ্রামে শিশু সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রায় কিছু নেই বললেই চলে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন হেনস্থার বিষয়টিকে বা মানুষ পাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ প্লাটফর্মটি─এমনটাই অভিযোগ মেতার বিরুদ্ধে।
শুধু নিউ মেক্সিকো নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও চল্লিশটি রাষ্ট্র ২০২৩-এর অক্টোবরে মেটার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের বক্তব্য, তরুণদের উপর এই মাধ্যমের কুপ্রভাব কতটা, সে'সম্বন্ধে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে মেটা। মেটার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের টিনএজারদের প্রোফাইলে ক্ষতিকর কন্টেন্ট আসা বন্ধ করা হবে। নিজের ক্ষতি করার পোস্ট বা ভিডিও, হিংসাত্মক ভিডিও— ইত্যাদিকেও ক্ষতিকর বলেই মনে করছে মেটা।