পেঁয়াজ ২২০ টাকা, ১ ডজন কলা ১১৯ টাকা! এবার কি অনাহারই ভবিতব্য পাকিস্তানের?

Pakistan Price Hike: এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০১ শতাংশ! ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি পাকিস্তানে এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেত ৩৬.৭ টাকায়।

পেঁয়াজ ২২০ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগি ৩৮৩ টাকা কেজি, মুগ ডাল ১ কেজি ২৫২ টাকা, ১ ডজন কলা ১১৯ টাকা, সরষের তেল ৫৩২ টাকা প্রতি কেজি, দুধ ১ কেজি ১৪৯ টাকা। মানুষ খাবে কী? বাঁচবে কীভাবে? শ্রীলঙ্কার পর ভারতের আরেক পড়শির দেশেও কি তাহলে শুরু হবে জনগণের আন্দোলন? পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার মতো পরিস্থিতি যে নেই, বলাই বাহুল্য। ২০২২ সালে ব্যাপক বন্যার সঙ্কট থেকে বাঁচতে না বাঁচতেই মুদ্রাস্ফীতির গনগনে আগুনে পড়েছে প্রতিবেশী দেশের মানুষ।

এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০১ শতাংশ! ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি পাকিস্তানে এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেত ৩৬.৭ টাকায়। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতি কেজির দাম হয়েছে ২২০.৪ টাকা। ডিজেলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে এবং পেট্রলের দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। চাল, ডাল এবং গমের দামও এক বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ১২.৩ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দ্বিগুণ হয়ে ২৪.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মূলত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতির হার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১১.৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হয়েছে ৩২.৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ। শুধু খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার সমস্যা নয়, সার্বিকভাবেই পাকিস্তানের অর্থনীতির হালও বেশ খারাপ। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। এক বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে তার পরিমাণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আরও পড়ুন- আরও এক মুম্বই হামলার ছক! যে ভাবে পাকিস্তানি পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গেল

বৈদেশিক মুদ্রা কোনও দেশকে তার দেশিয় মুদ্রার মূল্য একটি নির্দিষ্ট হারে এবং ডলারের চেয়ে কম রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে বড়সড় সাহায্য করে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার তহবিলই। আন্তর্জাতিক স্তরে যা আর্থিক বাধ্যবাধকতা আছে কোনও দেশের তা মেটাতেও সাহায্য করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল। অভ্যন্তরীণ প্রকল্পে অর্থায়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার জন্যই মূলত কেনও দেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে যত্নে রাখে।

তবে পাকিস্তানের এহেন দুর্দশায় বৈদেশিক মুদ্রার বরাভয়টুকুও নেই। পাকিস্তানের মুদ্রার মূল্য ডলারের বিপরীতে অত্যন্ত দুর্বল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি টাকার মূল্য ছিল ১৬০.১, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১৭৭.২ এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হয়েছে ২২৪.৮।

জিডিপির শতাংশের হিসেবেও পাকিস্তানের সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২০১১ সালে জিডিপির শতাংশ হিসাবে সাধারণ সরকারি ঋণ ছিল ৫২.৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে হয় ৬০.৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড অনুযায়ী ৭৭.৮ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে ঋণের৷

পাকিস্তান বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে তাতে এই সহায়তা খড়কুটোও নয় সম্ভবত। খুব শিগগিরই আরও আর্থিক সহায়তার জন্য বিশ্বের কাছে হাত পাততে হতে পারে পাকিস্তানকে।

More Articles