মঙ্গলের বুকে ‘অজানা’ উড়ন্ত বস্তুটি আসলে কী! সাড়া দিল ভিনগ্রহের বাসিন্দারা?

ঠিক যেন উড়ন্ত চাকতির (Flying Object) মত দেখতে এক বস্তু মঙ্গলের বুকে খুঁজে পেল মঙ্গলের আকাশে প্রদক্ষিণ করা ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার (Ingenuity Helicopter)। এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে ২৭ এপ্রিল অর্থাৎ গত বুধবার। নাসার পার্সিভেরেন্স রোভারের (Perseverance Rover) প্যারাশ্যুট সিস্টেমের ইঞ্জিনিয়ার (Parachute System Engineer) আয়ান ক্লার্কের (Ian Clark) মতে, ঠিক যেন বহিঃর্জগত (Otherworldly) থেকে আসা, এক খণ্ড চাকতি।

মঙ্গলের বুকের ঘটনাবহুম মুহুর্তকে নজরে রাখা এবং তা ক্যামেরাবন্দি করাই ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারের কাজ।  গত সপ্তাহে ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার তার ছাব্বিশতম প্রদক্ষিণ শেষ করার আগে, দশটি ছবি ক্যামেরাবন্দি করে। তখন সে ১,১৮১ ফুট উচ্চতায়। তখনই চোখে পড়ে সেই দৃশ্য।

ক্যামেরাবন্দি হওয়া চাকতিটির ব্যাস (Diameter) প্রায় পনেরো ফুট। মঙ্গলের মাটিতে আছড়ে পড়ার সময়ে ঘন্টায় আটাত্তর মাইল বেগ ছিল চাকতিটির। যার ফলে আংশিক ভাবে ভেঙেও গেছে এটি। আয়ান ক্লার্কের মতে, এ যেন কল্পবিজ্ঞানের গল্পের কোনো চিত্র ফুটে উঠেছে লাল গ্রহের উষর মাটিতে।

নাসার (NASA) তরফ থেকে জানানো হল, আসল সত্য। সমস্ত আশা বিচূর্ণ করে নাসা জানাল, সেই উড়ন্ত বস্তুর মত দেখতে চাকতি আদতে ভিনগ্রহী বা এলিয়েনরা ফেলে যায়নি। এটি পার্সিভেরেন্স রোভারেরই একটি অংশ, যা পার্সিভেরেন্স রোভার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লাল গ্রহের বুকে পড়ে রয়েছে। এই যন্ত্রাংশকে  প্রযুক্তিগত ভাষায় ব্ল্যাকশেল (Blackshell) বলে। এবং এটি বিছিন্ন হয়েছে পার্সিভেরেন্স রোভারের মঙ্গলের মাটিতে পা রাখার সময়ে। পার্সিভেরেন্স রোভার  ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম পা রাখে লাল গ্রহের মাটিতে।

বিগত এক বছর  যাবৎ মঙ্গলের মাটিতে পার্সিভেরেন্স রোভার ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলের ভূ-প্রকৃতি, সেখান থেকে পূর্বে বয়ে চলা নদীর অববাহিকা, সেই নদী থেকে তৈরি ব-দ্বীপ, সবই খুঁটিয়ে দেখছে সে। ছবি তুলে পাঠাচ্ছে নাসা এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (California Institute of Technology) ল্যাবে। তা পর্যবেক্ষণ করছে গবেষকরা।

বিগত এক বছর ধরে ব্ল্যাকশেলটি বিছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলেও, এর ছবি প্রকাশিত হয় সম্প্রতি।

মঙ্গলের মাটি থেকে প্রায় দেড় মাইল উঁচুতে থাকাকালীনই পার্সিভেরেন্স রোভার থেকে একটি প্যারাশ্যুট এবং এই ব্ল্যাকশেলটি বিছিন্ন হয়ে গেছিল। স্কাইক্রেন (Skycrane) নামক একটি রকেট চালিত সিস্টেম পার্সিভেরেন্সের বাকি অংশকে নিয়ে মঙ্গলের মাটিতে পা রাখে। অন্যদিকে, বিছিন্ন হওয়া ব্ল্যাকশেল এবং প্যারাশ্যুট, পার্সিভেরেন্সের প্রাথমিক ল্যান্ডিংয়ের স্থান জেজে়রো খাত (Jazero Crater) থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে মঙ্গলের মাটিতে পড়ে।

কিছুদিন আগেও নাসা নিজেদের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটি ছবি পোস্ট করে, যা দেখে মনে হয় যেন মঙ্গলের বুকে ভিনগ্রহী কোনো বাসিন্দা পায়ের ছাপ ফেলে রেখে গেছে। তারও কিছুদিন আগে ভীনগ্রহের বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করতে পুরুষ ও নারীদেহের নগ্ন ছবি মহাকাশে পাঠিয়েছিল নাসা। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই বুঝি সেই চোখ ধাঁধানো ছবি দেখে ভিনগ্রহীরা সাড়া দিলেন। পরে নাসার তরফেই জানানো  হয়, সেটি আদতে একটি মঙ্গলের বুকে একটি খাত, যার মধ্যে আবার আঁচড়ের মত দেখতে কিছু অংশ আছে। খুব উচ্চমানের ক্যামেরায় (High-resolution Camera) ধরা পরে এত পুঙ্খানুপুঙ্খ এই চিত্র।

নাসার  সাম্প্রতিক প্রকাশ করা এই চাকতির ছবির আসল বিবরণ শুনে নেটিজে়নদের অনেকেই দাবি করছেন, পৃথিবীকে কলুষিত করার পর, মহাকাশকে স্পেস জাঙ্ক (Space Junk) দিয়ে ভরিয়ে আংশিক দূষিত করে, এবার মানুষ নেমে পড়েছে অন্যান্য গ্রহগুলিকে দূষিত করবে বলে। তবে অনেকেই আবার বলছেন, মঙ্গল অভিযানের পথে এরকম ঘটনা তো ঘটতেই পারে।

আয়ান ক্লার্ক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, চাকতির মত দেখতে ব্ল্যাকশেলের এই ছবিটি নিয়ে নানা মনগড়া কথা হয়তো বলা যায়। কিন্তু এটি বিছিন্ন কী ভাবে হল পার্সিভেরেন্স রোভার বা পার্সির মূল দেহ থেকে, তা বোঝার জন্য প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে সুগভীর জ্ঞানের প্রয়োজন।

More Articles