আদালতে পা দিতেই চড়াও পাক রেঞ্জার্স বাহিনী! কেন গ্রেফতার করা হল ইমরান খানকে?

Imran Khan Arrested : রীতিমতো কিডন্যাপের ভঙ্গিতে গ্রেফতার প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, আসল কারণ কী?
পদ থেকে সরলেও শিরোনাম থেকে কোনওদিনই সরেননি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।সিংহাসন হারানোর পর থেকেই একের পর এক প্রায় শতাধিক মামলায় নাম জড়িয়েছে ইমরান খানের। হিসেব বলছে এ যাবৎ তাঁর নামে মোট ১২০টি মামলা দায়ের রয়েছে পাক আদালতে। ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হবে কি হবে না, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এর আগেই বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা বাহিনী তাঁর লাহোরের বাসভবনে তাঁকে আটক করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাতে বারবার বাধা দিয়েছে ইমরান খানের সমর্থকেরা। চলতি বছরের মার্চ মাসেও ইমরান খানকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছিল পাক পুলিশ। অবশেষে গতকাল দুপুরে তাঁকে আটক করা হয়েছে, এমনটাই প্রাথমিকভাবে জানা যায় টুইটার বার্তায়। যদিও এই গ্রেফতারির আসল কারণ নিয়ে জলঘোলা এখনও শেষ হয়নি।
 
মঙ্গলবার দুপুরের ঘটনা। ইসলামাবাদ হাই কোর্টে সবে পা দিয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হয় পাক রেঞ্জার্সের বিশাল বাহিনী। দুটি সাঁজোয়া ধরনের গাড়ি আটকে দেয় আদালতের গেট। তারপরই ঘটে যায় আসল ঘটনাটি। যেন মুহূর্তের মধ্যে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ইমরান খানকে। এ যেন এক্কেবারে কিডন্যাপ করার মতো ভঙ্গি। ঘটনার অভিঘাতে রীতিমতো হকচকিয়ে যান খোদ আদালতের বিচারকও। আদালত চত্বরে হাজির জনতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সাময়িক আতঙ্কও।  কিন্তু কেন এমন কাণ্ড ঘটালো পাক রেঞ্জার্স? এখানেই শেষ নয়, এর পর থেকে সম্পূর্ণ ঘটনাটি যেন মোড় নিতে থাকে টুইটারে। সেখানেই ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসফের তরফে দাবি করা হয়, ইমরানকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে, মারা হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা। এমনকি দলের অভিযোগ, ইমরানকে ধরার সময়ে আদালত চত্বরে সাধারণ মানুষের উপরেও চড়াও হয়েছিল পাক রেঞ্জার্স।
 
আরও পড়ুন - ইমরানই প্রথম নন, যেভাবে বারবার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীরা
 
ইমরান খানের আজকের গ্রেফতারির আসল কারণ কী? জবাবে উঠে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদিন আসলে দুটি পূর্ব মামলার শুনানির জন্য আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছিল ইমরান খানকে, এমনটাই খবর সূত্রের। আল কাদির ট্রাস্টের জমি হস্তগত করার মামলায় অভিযোগ বেশ জোরালো হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি জল গড়ায় FIR দায়ের পর্যন্ত। এই সূত্রেই আদালত চত্বরে পা রাখেন তিনি। এই আকস্মিক গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না ইমরান খান। এদিন আদালতের বাইরে ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে পাক রেঞ্জার্স বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীও আহত হয়েছেন বলে খবর।
 
অন্যদিকে আরও একটি কারণকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী এসেছিলেন ভারত সফরে। সেই নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি ইমরান খান। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে কীভাবে বিদেশ সফর সম্ভবপর হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রীর পাশাপাশি দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ শানিয়ে ছিলেন ইমরান। লন্ডনে রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার দরুন দেশীয় খরচের দিকটিকে তুলে ধরেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন , তাঁর এই কটাক্ষই হয়তো কাল হল শেষমেশ। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি সে দেশের প্রশাসন। এটাই কি তবে রাতারাতি কিডন্যাপের ভঙ্গিমায় আটকের আসল কারণ? উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না এই বিষয়টিও। নচেৎ এর আগে থেকেই তো বহু অভিযোগ ছিল ইমরানের বিরুদ্ধে।
 
আরও পড়ুন - কোটি টাকার উপহার ইমরান বিক্রি করছেন চোরবাজারে?
 
এদিকে ইমরানের এই আকস্মিক গ্রেফতারি ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রবল বিক্ষোভ। লাহোর এবং করাচিতে পুলিশ ইমরান খানের সমর্থকদের লক্ষ্য করে জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তেও বাধ্য হয়েছে। প্রবল বিক্ষোভের এই আগুন ছড়িয়েছে পেশাওয়ারেও। ইসলামাবাদের রাস্তায় শতশত বিক্ষোভকারী রাজধানী থেকে বেরনর ও ঢোকার প্রধান মহাসড়কটি অবরোধ করে রেখেছে। বিক্ষোভ এতটাই জোরালো হয় যে দিকে দিকে মানুষ রাস্তার সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলেছে, কোথাও আবার রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজ দুমড়ে ভেঙে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করেছে এবং পাথর বর্ষণ তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের তরফে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা বলা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

এদিনের ঘটনায় অবাক খোদ জাস্টিস ফারুকও। তিনি পাক পুলিশকে নির্দেশ দেন, আদালতে এসে জানাতে ইমরানকে গ্রেপ্তারের আসল কারণ। এর পরে ইসলামাবাদ পুলিশ এর তরফে একটি টুইট বিবৃতি দিয়ে ইনস্পেক্টর জেনারেল আকবর নাসির খানের জানান, ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায়। যদিও পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, ইসলামাবাদের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ আছে, কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই একের পর এক টুইট বার্তাই বুঝিয়ে দেয় পাকিস্তানের মাটিতে জ্বলছে আগুন। ঘটনার আগামী প্রতিক্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে এখন সকলে। ঠিক কোন পরিস্থিতি ধেয়ে আসছে ইমরানের দিকে সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে সামনের ভোটে যে এই ঘটনা বড় রকম অভিঘাত আনবে এ কথা অবশ্য হলপ করেই বলা যাচ্ছে।

More Articles