বাস থেকে নামিয়ে তালিবানি কায়দায় খুন! পাকিস্তানে কেন বারবার জঙ্গি-নিশানায় পঞ্জাবের মানুষজন?
Balochistan Bus Attack: সোমবারের এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন দেশের প্রেসিডেন্ট আসিফ আল জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এই ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন শরিফ।
অর্থনৈতিক দুরবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা তো লেগেই রয়েছে পাকিস্তানে। তারই মধ্যে ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। এবার রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো হামলা চলল পাকিস্তানে। তালিবানি কায়দায় বাস থেকে নামিয়ে খুন করা হল ২৩ জন বাসযাত্রীকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত ১০টি গাড়ি।
বালুচস্তানের মুসাখেলে সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, রারাশামের কাছে আগে থেকেই হাইওয়ে আটকে দাঁড়িয়েছিল বেশ কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী। ওই পথ দিয়ে আসা সমস্ত বাস ও ট্রাককে এক এক করে থামাতে থাকে তারা। নামতে বাধ্য় করা হয় যাত্রীদের। খতিয়ে দেখা হয় প্রতিটি যাত্রীর পরিচয়পত্র। এর পর বেছে বেছে ২৩ জন যাত্রীকে গুলি করে মারে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, যে ২৩ জন যাত্রীকে গুলি করে খুন করা হয়, তাঁরা সকলেই পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা। তাঁদের খুন করার পর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে দশটি গাড়িতে। সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজিব কাকর বলেছেন, ‘‘নিহতদের বড় অংশই পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা। খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। মৃতদেহগুলি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ৪৫ দিনে ১১ বিলিয়ন ডলার ধার! যে ভাবে ডুবছে পাকিস্তান
ঘটনায় উদ্বেগের ছায়া সমগ্র পাকিস্তান জুড়েই। কেন এই হামলা, কী উদ্দেশ্য তা এখনও স্পষ্ট নয়। কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত এই হামলার দায়ও স্বীকার করেননি। পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মহসিন নকভি এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। কার্যত এই হামলাকে বর্বরচিত আখ্যা দিয়ে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন তিনি। এখনও পর্যন্ত হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে হামলা চালাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসন সূত্রে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় মানুষদের হাইওয়ে থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
তবে বেছে বেছে কেন পরিচয়পত্র যাচাই করে পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দাদেরই নিশানা করল সন্ত্রাসবাদীরা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তিন বালুচিস্তানের বাসিন্দা রয়েছেন বলেও খবর। কেন পঞ্জাবের বাসিন্দাদের আলাদা করে বাছাই করে খুন করা হল, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। আচমকা সাধারণ নাগরিকদের উপর এ হেন সন্ত্রাস হামলায় উদ্বেগ দেশের বিভিন্ন মহলে। বালুচস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই হামলার পিছনে রয়েছে জঙ্গি-হাতই। পঞ্জাব প্রদেশে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ করারও আশ্বাস দেন তিনি।
এমন হামলা অবশ্য বালুচস্তানে প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে একাধিক এমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসমূলক হামলা হয়েছে সেখানে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বালুচস্তানের কেচ জেলার তুরবাতে বন্দুকবাজদের হাতে খুন হন পঞ্জাব থেকে আসা ৬ শ্রমিক। সেই ঘটনায় নিহতেরা দক্ষিণ পঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলেই জানিয়েছিল পুলিশ। জাতিগত পটভূমির জন্যই তাঁদের নিশানা করা হয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। ২০১৯ সালে গোয়াদর জেলার ওরমারার কাছে বাস একই রকম ভাবে বাস থামায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্মী-সহ মোট ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল তারা। ২০১৫ সাল নাগাদ ২০ জন নির্মাণ শ্রমিককে খুন করা হয় তুর্বতের কাছে এক শ্রমিকশিবিরে। নিহতরা সকলেই সিন্ধু ও পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন:শাহওয়াজ প্রধানমন্ত্রী, জারদারি প্রেসিডেন্ট! পাকিস্তানের হাল ফেরাবে জোট সরকার?
সোমবারের এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন দেশের প্রেসিডেন্ট আসিফ আল জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এই ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা ও আহতদের চিকিৎসায় সাহায্যের কথাও জানিয়েছেন তিনি। খুব বেশিদিন হয়নি, পাকিস্তানের তখ্তে এসেছে নয়া সরকার। সেই নয়া সরকারের আমলে ক্রমশ নীচের দিকে নামছে পাকিস্তানের আর্থিক ও সামাজিক অগ্রগতির গ্রাফ। দেনায় জেরবার দেশ। তার মধ্যে নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসের আবহ। যা স্বাভাবিক ভাবেই মুখ পোড়াচ্ছে নয়া সরকারের। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান থেকে সমূলে সন্ত্রাসকে উৎপাটনের প্রতিশ্রুতিতে অনড় অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে প্রেসিডেন্ট জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শরিফ, দু'জনকেই।