মেয়েকে ছাড়া শুধুই অন্ধকার! পুজো যেভাবে কাটাবেন নির্যাতিতার পরিবার

RG Kar: ৯ অগস্টের ঘটনার পর বিরাট বদলে গেছে সোদপুরের ওই পরিবারের জীবন। আগে দুর্গাপুজোর জন্য প্যান্ডেল বাধা হত বাড়িতে, আলো জ্বলত। এবার তার বদলে বাড়ির সামনে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ।

প্রতিবার প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে বাড়ির পুজোয় সকলকে আমন্ত্রণ, পুজোর জোগাড়, সব কিছু কার্যত একা হাতে সামলাতেন আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসক। এমডি-তে সুযোগ পেয়েই ২০২২ সালে বাড়ির গ্যারাজেই পুজো শুরু করেছিলেন। গোটা বাড়ি সেজে উঠত আলোয়। আসতেন বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজন অনেকেই। এবার সেই বাড়ি অন্ধকার। মেয়ে নেই। বলতে বলতে চোখের জল বাধ মানে না নির্যাতিতার মায়ের। জানান, তাঁর দুর্গার বিসর্জন হয়ে গিয়েছে আগেই। তবে লড়াই বাকি এখনও, সে কথাও জানাতে ভোলেন না তিনি।

আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলন এখনও চলছে। ধর্মতলায় অনশনে বসেছেন ফের জুনিয়র ডাক্তারেরা। ৯ অগস্টের ঘটনার পর বিরাট বদলে গেছে সোদপুরের ওই পরিবারের জীবন। আগে দুর্গাপুজোর জন্য প্যান্ডেল বাধা হত বাড়িতে, আলো জ্বলত। এবার তার বদলে বাড়ির সামনে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। যেখানে ষষ্ঠী থেকে চার দিন ধর্নায় বসবেন আরজি করের চিকিৎসকের বাবা-মা। পাশে থাকবেন আত্মীয়স্বজনেরাও। নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছেন, চাইলে যে কেউ আসতে পারেন এই ধর্নাস্থলে। তবে মঞ্চে থাকবেন শুধুই আত্মীয়েরাই।

আরও পড়ুন: জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ৩৬ ঘণ্টা পার! উৎসবমুখী মানুষের কিছু আসে-যায়?

নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, তিন বছর আগে মেয়ের আবদারে বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। বাড়ির গ্যারাজে রাখা হয়েছিল প্রতিমা। সে সময় বাড়িটা আলোয় ঝলমল করত। সকাল থেকে মেলা বসে যেত। এ বছর পরিবারের সকলের সঙ্গে একটু অন্য ভাবেই পুজো কাটাতে চাইছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘বাড়িতে চার দিন পুজো হত। খুব আনন্দ হত। এ বার খুব কষ্টে রয়েছি। তাই ঘরের সামনে ধর্নামঞ্চ করেছি। ষষ্ঠী থেকে চার দিন সেখানেই বসব। পরিবারের লোকজন থাকবেন। যাঁরা আসতে চাইবেন, আসবেন।’’ নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, রাজনীতিকেরাও চাইলে আসতে পারেন সেখানে। তবে মঞ্চে তাঁদের স্থান হবে না। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘রাজনীতির রং আমরা চাই না।’’

গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের চার তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ঘটনায় বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছিল শহর কলকাতা তো বটেই, গোটা রাজ্য জুড়ে। পুজোর আবহেও প্রতিবাদ কর্মসূচী চলছে। আরজি করের নির্যাতিতার বিচার এবং সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেছেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। প্রায় চল্লিশ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে তাঁদের অনশনের। নির্যাতিতার মা জানান, তাঁর মেয়ের বিচারের দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা সকলেই এখন তাঁর সন্তান। ওঁদের কথা ভেবে তিনি এখন কষ্ট পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েকে হারিয়েছি। জুনিয়র ডাক্তারেরা যে আন্দোলন করছেন, তা দেখে ঘরে বসে আমার কান্না পাচ্ছে। ওরা না খেয়ে আছে। আমি তো এখন ওদেরও মা। ওরা আমার সন্তান।’’

এর পরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন। রাজ্য সরকারের মানবিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নির্যাতিতার বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়ে সরকার কোনও কথা বলেনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। উল্টে অসহযোগিতা করছে।’’ এমনকী আন্দোলনরতদের জন্য ন্যূনতম বায়ো-টয়লেটের পর্যন্ত ব্যবস্থা করা হয়নি। এই সব প্রশ্ন তুলেই নির্যাতিতার পরিবারের জিজ্ঞাসা, এত কিছু সত্ত্বেও কেন মানবিক হচ্ছে না সরকার।

আরও পড়ুন:দেহ উদ্ধারের পর সেমিনার রুমে কাদের ভিড়? যে সব প্রশ্ন তুলে দিল আরজি কর কাণ্ডের ভাইরাল ভিডিও

পুজোর আবহেই সামনে এসেছে এ রাজ্যেরই আরও দু'টি ধর্ষণের ঘটনা। যা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। জয়নগরে বছর নয়েকের একটি শিশুকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। পটাশপুরে ধর্ষণের পর খুন করা হয় এক বধূকে। সেই জয়নগর ও পটাশপুরের কথা উল্লেখ করে নির্যাতিতার বাবা-মা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সরকার মানবিক ভাবে চিন্তাভাবনা না করলে জয়নগর, পটাশপুরের মতো ঘটনা থামবে কী করে? থামার লক্ষণ দেখছি না।’’ এই সঙ্গে নিজের রাজ্যে এই ধরনের দুই ঘটনা তাঁদেরকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছে বলেও জানান নির্যাতিতার বাবা। একই সঙ্গে নির্যাতিতার মায়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, ‘‘মা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, হাসপাতালের ভিতরে কী করে আমার মেয়ের সঙ্গে ওই কাণ্ড হয়েছিল? তথ্যপ্রমাণ লোপাটও কি দুর্ঘটনা?’’ তাঁদের প্রশ্ন, হাসপাতালের ভিতরে এ রকম হলে কোথায় রয়েছে সুরক্ষা?

জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন থেকে শুরু করে আরজি কর নির্যাতিতার পরিবারের একাধিক দাবি, কোনও কিছুতেই টনক নড়েনি সরকারের। সে নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করতেও দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সেই অনমনীয় অসহযোগিতার বিরুদ্ধেই ফের প্রশ্ন তুলে দিলেন আরজি কর নির্যাতিতার পরিবার।

 

More Articles