ভিনগ্রহীর যান, না শত্রুদের নজরদারি? অবশেষে বিজ্ঞানের হাত ধরেই ইউএফও-র রহস্যভেদ?

UFOs Defy Physics Pentagon NASA : মাঝেমধ্যেই হানা দেয় এই ইউএফও। তাহলে কি সেই দেশেই কোনও গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে?

মাঝ আকাশে হঠাৎই অজানা এক বস্তু ঘোরাফেরা করছে। কখনও গোল চাকতির মতো জিনিস, কখনও বা আলোর রেখা। বিশ্বজুড়ে বারবার এমন ঘটনা ঘটেছে, আর তা নিয়ে মানুষের উৎসাহেরও শেষ নেই। এমন অজানা বস্তু বারবার আকাশে ঘোরাফেরা করে কেন? ওরা কি আদৌ পৃথিবীর? নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’র কথা। ক্রেনিয়াস গ্রহের অ্যাংয়ের কাহিনি কি সত্যি হবে? অন্য গ্রহ থেকে জীবরা কি মাঝেমধ্যেই চক্কর কেটে যায় পৃথিবীর আকাশে?

এমনই নানা প্রশ্ন বহু বছর ধরে বারবার ভিড় করে আমাদের মাথায়। সামান্য অজানা আলো দেখলেই মন আনচান করে। এই বুঝি ভিনগ্রহ থেকে কেউ নেমে এল। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি, সিনেমা তাহলে সত্যি হবে! কিন্তু বাস্তবে এখনও তেমনটা হয়নি। ভিনগ্রহ থেকে কেউ এসেছে কিনা, সে সম্পর্কেও কোনও খবর নেই। তবে ইউএফও-র আনাগোনা লেগেই আছে। ইউএফও বা আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট, বাংলায় যাকে বলে উড়ন্ত চাকতি, সেটি প্রায়শই দেখা যায়। গোটা বিশ্ব তো বটেই, বিশেষ করে আমেরিকার আকাশে মাঝেমধ্যেই হানা দেয় এই ইউএফও। তাহলে কি সেই দেশেই কোনও গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে?

দীর্ঘ অনেকগুলো বছর ধরেই ইউএফও এবং ভিনগ্রহী এলিয়েনদের অস্তিত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। বিজ্ঞানীদের স্বাভাবিক দাবি, গোটা মহাবিশ্বে কেবলমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ থাকতে পারে না। আরও অন্যান্য অজানা গ্রহে নিশ্চয়ই রয়েছে জীবনের বীজ। কিন্তু সেগুলো এখনও অজানা। তার মধ্যে এই ইউএফও-র দর্শন আরও রহস্যের দিকে ইঙ্গিত করে। তারইমধ্যে সাম্প্রতিক কালে মার্কিন নৌবাহিনীও নাকি ‘রহস্যময় অজানা বস্তু’র সন্ধান পেয়েছে। তাদের পেরিস্কোপে ধরা পড়েছে সেই চাকতির ছবি।

কী এই ইউএফও? সাধারণ ভাষায় আকাশে ঘুরে বেড়ানো এমন বস্তু, যা মানুষের অজানা, রহস্যময়। ১৯৫২ সালে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তবে এখন একটু একটু করে ধারণা বদলাচ্ছে। পেন্টাগন আর নাসা এই রহস্যময় বস্তুর তদন্তে নেমে পড়েছে। এখন ইউএফও নয়, তাদের কাছে এই বস্তুগুলি হল ইউএপি (UAP) বা আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা (Unidentified Aerial Phenomena)। ২০২২ সাল থেকেই উঠেপড়ে লেগেছে পেন্টাগন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। কোনও হাওয়ায় ভেসে আসা কথা বা তত্ত্ব নয়; বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে এই রহস্যময় ইউএফও-র উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা। সঙ্গে রয়েছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্র। মূল লক্ষ্য হল, বিজ্ঞান আর পদার্থবিদ্যাকে হাতিয়ার করে রহস্যভেদ করার।

এখনও পেন্টাগন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কাজ চলছে। পাশাপাশি নাসাও এই বিষয়ে গবেষণা করছে। তারই মধ্যে ঘটে গিয়েছে বিশেষ একটি ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে মাত্র কয়েকদিন আগেই দেখা গিয়েছে রহস্যময় উড়ন্ত বস্তু। বেলুনের মতো বস্তুগুলি আসলে কী? বিস্তর গবেষণার পর জানা গেল, চিনের পাঠানো বিশেষ বেলুন। এর মাধ্যমে গোপনে নজরদারি রাখছিল তারা। তারপর থেকে গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কাজের দিকে আরও বেশি করে নজর দেওয়া হয়।

এরইমধ্যে উঠে এসেছে একটি বিশেষ তথ্য। পেন্টাগনের অল ডোমেইন অ্যানোমালি রেজোলিউশন অফিসের প্রধান ডঃ শন কির্কপ্যাট্রিক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আভি লোয়েব বিজ্ঞানের মাধ্যমে একটি তত্ত্ব পেশ করেছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, যদি দূরের কোনও গ্রহ থেকে সত্যিই কোনও মহাকাশযান আসে, তাহলে তার গতিবেগ অত্যন্ত বেশি হবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ওই গতির জন্য আকাশে উল্কা বা ধূমকেতুর মতো আগুনের গোলা তৈরি হবে। বাতাসের ঘর্ষণ আর গতির জন্য মহাকাশযানের চারিদিকে আগুন ধরে যাবে। সেইসঙ্গে প্রবল ঘর্ষণের ফলে রেডিও সিগনালও বের হবে, যা র্যা ডারে সহজেই ধরা যাবে।

কিন্তু এখনও এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কি উড়ন্ত চাকতির রহস্য মিটতে চলেছে? ভিনগ্রহী নয়, বরং শত্রু দেশের রহস্যময় নজরদারির বস্তুই বারবার চক্কর কাটে আকাশে? সেজন্যই কি আমেরিকায় সবচেয়ে বেশিবার ‘ইউএফও’ বা ইউএপি দেখা গিয়েছে? দেশের সুরক্ষার জন্য আপাতত এই মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গুরুত্ব দিচ্ছে পেন্টাগনও। তবে গবেষণা এখনও জারি রয়েছে। পরবর্তীতে কী উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।

More Articles