মদবোঝাই গাড়ি দুর্ঘটনায় ভিজল শুখা বিহার, বোতল দেখেই ঝাঁপ স্থানীয়দের

Liquor Looting in Bihar: প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বাঁচাতেই এসেছিলেন তাঁরা, তবে এসে দেখলেন যাত্রী কেউ নেই, পড়ে রয়েছে শুধু পেটি পেটি মদের বোতল।

জনস্বার্থে মদ্যপানে রোখ টেনেছে সে রাজ্যের সরকার। নিঃসন্দেহে খুবই বড় পদক্ষেপ। ২০১৬ সাল থেকেই বিহারে মদ বিক্রি ও সেবন নিষিদ্ধ। সরকার যতই কড়া হোক না কেন, শুক্রবার রাতবিরেতে, উৎসব-পাব্বণের মরসুমে বিপিনবাবুর সুরায় গলা ভেজাতে ইচ্ছা করে না কোনও কোনও বিহারবাসীর, তা তো আর হলফ করে বলা যায় না। লকডাউনের সময় পড়শি রাজ্যের মদের দোকানগুলিতে যে ভাবে উপচে পড়েছিল সুরাপ্রেমীদের ভিড়, তা দেখে বলাই যায়, অমৃতের উপর এই বঞ্চনা মাঝে মাঝে নিশ্চিত বড় বেঁধে বিহারবাসীর মনে। না হলে মদবোঝাই গাড়ির দুর্ঘটনাস্থলে এ ভাবে উপচে পড়ে নাকি মানুষের ভিড়!

সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে শুখা রাজ্য বিহারে। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় বিহারের গয়ায় একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে মদবোঝাই একটি গাড়ির। তবে তাতে হতাহত ক'জন বা কতটা, তা বোঝার দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেন গাড়ির আরোহীরা। দুর্ঘটনার পরেই ছুটে আসেন স্থানীয়রাও। না, প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বাঁচাতেই এসেছিলেন তাঁরা। তবে গাড়ির কাছে এসে তারা যা দেখলেন, তাতে মাথা ঘুরে যাওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। গাড়িতে আরোহী তো কেউ ছিলই না। বদলে ছিল শুধু পেটি পেটি মদের বোতল।

আরও পড়ুন: মদে চুমুক দিতে সোনার ‘স্ট্র’! সুরাপ্রেমের তাক লাগানো ইতিহাস…

সুরাকে কেন্দ্র করে তো মারমার কাটকাট বেঁধে গিয়েছিল দেবতা ও অসুরদের মধ্যেও। বিহারবাসী তো মনুষ্যমাত্র। ফলে মদের বোতল দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরাও। কেউ বগলে তো কেউ কোচরে, যে যেখানে পারলেন পটাপট গুঁজে ফেললেন বোতলগুলি। খবর ছড়াতেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করলেন মানুষজন। এ তো শুধু মেঘ না চাইতেই জল নয়, রীতিমতো সুরার বোতল। ড্রাই স্টেট বিহারে যে তা দুর্মূল্য, তা তো আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। সকলেই চান, অন্তত একটি করে বোতল বগলদাবা করতে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় ভিড়-হুড়োহুড়ি সরাতে ঘটনাস্থলে আসতে হয় পুলিশকেও। তবে কার্যত দর্শকের ভূমিকাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল তাদের।

সময় যত গড়াল, তত ফাঁকা হতে লাগল মদের গাড়ি। ততক্ষণে যে যার মতো মদসংগ্রহ সেরে হাসিমুখে পাড়ি দিয়েছেন ঘরের পানে। আজকের রাতটা যে তাদের কাছে উৎসবের রাত বলাই বাহুল্য। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির চারপাশেও কমে গিয়েছে ভিড়। এতক্ষণে কর্তব্য করার সময় পান পুলিশকর্মীরাও। তাঁরা গাড়িটিকে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় থানায়।

আরও পড়ুন: গোয়ার অহংকার ফেনি, সুরাপ্রেমী মাত্রই চেনেন, পাঁচ শতকের যে গল্পটা আজও অজানা

সেই মদ লুটের ভিডিও কেউ কেউ ক্যামেরাবন্দিও করেছেন ততক্ষণে। সেসব ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিওতে স্পষ্ট ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজনের মুখও। আর তাঁদের কপালে শনি নাচছে বলেই মনে করছে আবগারি দফতর। তারা জানিয়েছে, ওই ভিডিও দেখে লুটেরাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিহারে তো আর শুধুমাত্র মদ বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, একই সঙ্গে নিষিদ্ধ মদ সেবনও। ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে একে তো মদ লুটের অভিযোগ, তার উপর আবার নিষিদ্ধ মদ সেবনের অভিযোগ, জোড়া চার্জ চাপতে চলেছে তাদের ঘাড়ে। ফলে লুটের মদ হজম করে যে একটা দিন স্বস্তির ঘুম দেবেন বিহারের সেই সুরাপ্রেমীদের দল, তেমন সুখের ঘটনা বোধহয় ঘটছে না আদপেই।

 

More Articles