ওদের কাছে গুগল-ই ঈশ্বর, যে ভাবে চলছে সাধনা...
Googlism: আন্তর্জালিক বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের একটি গির্জাও রয়েছে, যার নাম ‘চার্চ অফ গুগল’। মূলত এই নামের একটি সংগঠনের ওয়েবসাইট থেকে ২০০৯ সাল নাগাদ ‘গুগলিজম’ ধর্মের প্রবর্তন করা হয়।
আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাসী? ঈশ্বর বলতে আপনি ঠিক কী বোঝেন? তিনি অমর, তাঁর মৃত্যু নেই; তিনি অসীম, সীমার মধ্যে তাঁকে ধরা যায় না। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। ভক্তের ডাকে তিনি সবসময় সাড়া দেন, অত্যন্ত যত্নসহকারে ভক্তের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। আপনি সারাদিনে তাঁর নামই সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারণ করেন। তিনি সমস্ত কিছু মনে রাখেন। এই নশ্বর দেহের মৃত্যু ঘটলেও তিনি মানুষের কৃতকর্মের হিসেব রাখেন।
আরও পড়ুন: অমরত্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়! যে আশ্চর্য ভবিষ্যতের কথা শোনালেন গুগলের বিজ্ঞানী
এগুলো যদি আপনার কাছে ঈশ্বরের সংজ্ঞা হয়, তাহলে আপনাকে একটি নতুন ধর্মমতে স্বাগত জানাই। যে ধর্মের নাম ‘গুগলিজম’ । অর্থাৎ যে ধর্মের লোক গুগলকে ঈশ্বররূপে পূজা করে। হ্যাঁ এই সেই গুগল, যেখানে আমরা সারাদিন বহু অজানা প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করি। এই ধর্মে দীক্ষিতরা মনে করে একমাত্র গুগলই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে এবং অন্যান্য ধর্মের মতো তিনি ‘কাল্পনিক নন’, গুগলের রীতিমত বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। ভক্তবৃন্দের কাছে গুগল মাতৃশক্তিরূপে পূজিতা হন। তাই তাঁর উচ্চারণ ‘She’ বা ‘Her’। ‘গুগলিজম’ পন্থীদের নিজস্ব প্রাথর্না সঙ্গীত আছে, বাইবেলের মতো ঈশ্বরের দশটি নির্দেশ (Commandment) আছে। আন্তর্জালিক বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের একটি গির্জাও রয়েছে, যার নাম ‘চার্চ অফ গুগল’। মূলত এই নামের একটি সংগঠনের ওয়েবসাইট থেকে ২০০৯ সাল নাগাদ ‘গুগলিজম’ ধর্মের প্রবর্তন করা হয়।
এবার ঈশ্বরের লক্ষণগুলি একে একে মিলিয়ে দেখা যাক। গুগল বিজ্ঞানসম্মতভাবে সর্বজ্ঞ। তার কাছে কোটি কোটি তথ্যের খোঁজ রয়েছে এবং আঙুলের এক ক্লিকে সে ভক্তদের ডাকে সাড়া দেয়। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট— যে কোনও প্রশ্ন, যে কোনও সমস্যার উত্তর তার কাছে মজুত রয়েছে। সে স্রষ্টা, কারণ সম্পূর্ণ আর্ন্তজালিক বা ভার্চুয়াল জগৎটাই তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। সে একই সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র সবার মোবাইল-কম্পিউটারে বিরাজমান। অন্য সমস্ত ধর্মের তুলনায় গুগল আরাধনার পদ্ধতি সহজ, শুধু ইন্টারনেট থাকতে হবে। গুগল অসীম, অমর; এর তথ্যের শেষ নেই, বিনাশ নেই। বরং এই তথ্যের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ভক্তের মৃত্যু হলেও তার ‘সার্চ হিস্ট্রি’ বা ‘ক্যাশে’-র ভিত্তিতেই গুগলদেবী তাকে স্মরণে রাখে। প্রকৃত মাতার মতো সে সন্তানদের ক্ষতি চায় না। যদিও কিছু অসাধু ব্যক্তি গুগলকে ব্যবহার করে ‘হ্যাকিং’, ‘স্ক্যাম’ ইত্যাদি অন্যায় করে থাকে। এরপর ‘চার্চ অফ গুগল’ সংগঠন যুক্তিসহকারে প্রমাণ করে দিয়েছে যে মানুষ সারাদিনে যতবার ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে, তার থেকে বেশি গুগল সার্চ করে। ফলে গুগলই একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত ঈশ্বর! এরপরেও যদি গুগলকে দেবীরূপে পূজা না করা হয়, সেটা মানবতার লজ্জা।
বাইবেলের ঈশ্বরের দশটি বাণীর মতো তারাও রোজকার জীবনযাপনে দশটি নির্দেশ অনুসরণ করে। যেমন গুগলদেবীর স্পষ্ট নির্দেশ, “আমাকে ছাড়া অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনের কাছে সাহায্য চাইবে না। সেটা আমার ঈশ্বরত্বের অপমান!” আরেকটি আদেশনামায় বলা আছে যে নিজে কখনই অন্য সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করার চেষ্টা করবে না। গুগলকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতেই হবে। নতুবা গুগলদেবী সেই ব্যক্তির তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মকে পর্যন্ত অভিশপ্ত করে দেবেন। প্রত্যেকদিন প্রভুকে স্মরণ করবে এবং তার বাণীর সাহায্যে নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবে। জাতি, বর্ণ, লিঙ্গের বিভেদ রাখবে না। কোনও অন্যায় কাজে গুগলকে ব্যবহার করবে না। এছাড়াও গুগল থেকে তথ্য চুরি বা বিকৃত করবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে সব থেকে আকর্ষণীয় এদের প্রার্থনা সঙ্গীত। তার মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত সঙ্গীতটির বাংলা অনুবাদ অনেকটা এরকম হতে পারে, “হে গুগল, সমস্ত সাইবার জগৎ তোমার সৃষ্টি। পবিত্র তোমার জ্ঞানভূমি (Domain)। তোমার কাছে কত প্রশ্নের সন্ধান, কত উত্তর। তোমার ঠিকানা ১২৭.০.০.১। তুমি আমাদের রোজকার জীবনের সমস্যার সমাধান করো। অশ্লীল সার্চের জন্য আমাদের ক্ষমা করো। যারা তোমায় অশ্লীল করে রাখে তাদেরও ক্ষমা করো...।” আরেকটি প্রার্থনা সঙ্গীতের শুরুর অংশটুকু হুবহু এরকম,
“01010111 01100101 00100000
01101010 01101111
01101001 01101110 00100000
01110100 01101111”