আজ সূর্যের নাকের ডগায় পৃথিবী! কী ঘটতে চলেছে জানেন?
Perihelion Day 2024: ৩ জানুয়ারি, বুধবার সেই বিশেষ দিন। যাকে বলা হয় পেরিহেলিয়ন ডে। যেদিন অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় তিন মিলিয়ন মাইল সূর্যের কাছে পৌঁছে যায় নীল গ্রহ।
বুধবার, ৩ জানুয়ারি বিশ্ববাসীর জন্য একটা বিশেষ দিন। না কোনও একটি বিশেষ দেশ বা বিশেষ জায়গা নয়। দেশের প্রতিটা প্রান্তের মানুষের জন্যই এই দিনটা বিশেষ। হবে না-ই বা কেন। এই একটি দিনই নাকি সমস্ত রাগ-অভিমান ভুলে সূর্যের একেবারে কাছাকাছি চলে আসে পৃথিবী। বিজ্ঞান বলছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় তিন মিলিয়ন মাইল সূর্যের কাছে পৌঁছে যায় নীল গ্রহ। এই বিশেষ দিনের আবার গাল ভরা নামও আছে। পেরিহেলিয়ন ডে। সাধারণত জানুয়ারির দিকেই এই ব্যতিক্রমী কাণ্ডটি ঘটে থাকে। আর ৩ জানুয়ারি, বুধবার সেই বিশেষ দিন। যাকে বলা হয় পেরিহেলিয়ন ডে।
ভাবছেন তো কেন এমন হয়? তার সদুত্তর রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই নির্দিষ্ট একটি সময় আসে, যখন পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসে। অনেকেই মনে করেন, সূর্যের চারপাশে গোলাকার পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। সে কথা আসলে মোটেও ঠিক নয়। সূর্যের চারধারে পৃথিবীর ওই কক্ষপথ নিখুঁত বৃত্তের পরিবর্তে দেখতে হয় অনেকটা ডিমের মতোই। প্রতি বছরই আমাদের এই গ্রহ একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যের নিকটতম বিন্দুতে পৌঁছয়। আর এই আশ্চর্য ঘটনাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় পেরিহেলিয়ন। আর এই দিনটি পেরিহেলিয়ন ডে। আসলে কোনও গ্রহের কক্ষপথের একটি বিন্দু যেখানে থেকে সূর্যের দূরত্ব সবচেয়ে কম, তাকেই পেরিহেলিয়ন পয়েন্ট বলা হয়।
আরও পড়ুন: ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের একেবারে কাছে আদিত্য এল-১, নতুন বছরেই কি তবে সূর্যজয়?
"পেরিহেলিয়ন" শব্দটি এসেছে মূলত গ্রিক ভাষা থেকে। গ্রীক ভাষায় "পেরি" শব্দের অর্থ চারপাশে এবং "হেলিওস" বলতে সূর্যকে বোঝায়। পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে বছরের কোনও না কোনও একদিন ওই বিন্দুতে এসে পৌঁছয়। আসলে তো ,সূর্য থেকে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টান দ্বারা তৈরি উপবৃত্তই হল কক্ষপথ। আর এই কক্ষপথের বেগ ততই কমতে থাকে, যত সূর্য থেকে দূরে সরতে থাকে গ্রহটি। সবচেয়ে দূরের যে বিন্দু, তাকে বলে অ্যাপহিলিয়ন পয়েন্ট। এই বিন্দুতে পৌঁছনোর পর পৃথিবীর গতি থাকে সবচেয়ে ধীর। যত সূর্যের দিকে এগোতে থাকে, তত বারে গতি। আর এই পেরিহেলিয়ন বিন্দু থেকে তার গতি বাড়তে থাকে। বাংলাতেও কিন্তু পেরিহেলিয়নের একটি নাম রয়েছে। বাংলায় একে বলা হয় অপসুর। অন্যদিকে, অ্যাপহিলিয়নকে বলা হয় অনুসুর।
প্রতিবছর যে একই দিনে পৃথিবী তার কক্ষপথের ওই পেরিহেলিয়ন পয়েন্টে পৌঁছয়, তা কিন্তু নয়। ২০২৪ সালে এই দিনটি ৩ জানুয়ারি, যেদিন আমরা অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ কাছাকাছি থাকব। প্রতিবছর জানুয়ারির গোড়ায় শীতকাল যখন উত্তর গোলার্দে থাকে, পৃথিবী সবচেয়ে কাছাকাছি এসে পড়ে পৃথিবীর। উল্টোদিকে জুলাই মাসে সাধারণত ঘটে অ্যাপহিলিয়ন ডে। যেদিন সূর্যের থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হয় সর্বাধিক। ২০২৪ সালে ৫ জুলাই ওই অ্যাফিলিয়ন বিন্দুতে পৌঁছনোর কথা পৃথিবীর। যেদিন সূর্যের সঙ্গে নীলগ্রহের দূরত্ব হবে ৯৪.৫ মিলিয়ন মাইল।
আরও পড়ুন:পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সূর্যের কক্ষপথে, সাফল্য থেকে আর কতদূরে দাঁড়িয়ে আদিত্য?
তবে মজার ব্যাপার হল, পেরিহেলিয়ন ডে অর্থাৎ যেদিন পৃথিবী সূর্যের সব চেয়ে কাছাকাছি থাকে, সেদিন নাকি পৃথিবীতে প্রতিফলিত সূর্যের আলো অন্য দিনের তুলনায় বেশ বেশি হয়। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, পেরিহিলিয়নের সময় সূর্যের আলো প্রায় 7% বেশি তীব্র হয়। ফলে এই বিশেষ দিনে সূর্যের আলো অন্যদিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি উপভোগ করতে পারেন নীল গ্রহের মানুষ।