জীবনযাত্রায় ছোট্ট একটা বদল! তাতেই ম্যাজিকের মতো সারবে ডায়াবেটিস
Preventing Diabetes: শরীরচর্চাতেই রয়েছে ডায়াবেটিসের সমাধান, বলছে গবেষণা।
ডায়াবেটিসের মোক্ষম দাওয়াই শরীরচর্চা। রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীরে উপস্থিত রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু শরীরচর্চার মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়েই নতুন নতুন রক্তনালি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার ফলে ডায়াবেটিসের কুপ্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এমনটাই জানা গেছে ফেডারেশন অফ আমেরিকান সোসাইটিস ফর এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি-র প্রকাশিত নতুন গবেষণা রিপোর্টে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিরাময়ে এই রিপোর্ট অত্যন্ত কার্যকর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ব্যায়াম করলে এই ধরনের রোগীরাও যথেষ্ট উপকৃত হবেন, বলছেন গবেষকরা।
ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্তের পরিসংখ্যান
সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, প্রতি ১১ জন ভারতবাসীর মধ্যে ১ জন ভারতীয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মোট ৭৭ মিলিয়ন ভারতীয় ডায়াবেটিসে রোগের শিকার, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে আগামী ২৩ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে হবে ১৩৪ মিলিয়ন। বিশ্বে প্রতি ছ'জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজন ভারতীয়। আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশই টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ৭ লক্ষ ভারতীয় ডায়াবেটিস ও এই সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যায় ভুগে মারা গেছে। সুতরাং, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ডায়াবেটিসের মোকাবিলার জন্য সঠিক কৌশল অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন: হাড়ের ব্যথা থেকে ডায়াবেটিস, নিমেষে সারাবে, আজই খাদ্যতালিকায় যোগ করুন সস্তার এই শস্য
ডায়াবেটিস কীভাবে রক্তনালির ক্ষতি করে?
যে প্রক্রিয়ায় শরীরে নতুন রক্তনালি গঠিত হয়, তাকে অ্যাঞ্জিওজেনেসিস বলে। ডায়বেটিসের ফলে শুধুমাত্র রক্তনালির ক্ষতিসাধন হয়, তাই নয়, অসুস্থতা ও ক্ষত নিরাময়ের সময় নতুন রক্তনালি গঠনের সহজাত প্রক্রিয়াও বাধা পায়। এছাড়াও রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারণে এন্ডোথেলিয়াল কোশের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, যা রক্তবাহের দেওয়ালের অন্যতম উপাদান। ফলে তা নতুন রক্তবাহ তৈরি হতে দেয় না শরীরে।
বিজ্ঞানীরা নতুন এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথম প্রমাণ পেলেন যে, একজন ডায়াবেটিক রোগী দিনে মাত্র ৪৫ মিনিট মাঝারি তীব্রতার শরীরচর্চা করলেও এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছেন। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে তাঁর দেহে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, ফলে এটিপি এবং প্রোটিন সরাসরি দেহকোষে সরবরাহ হয়। আর এতেই অ্যাঞ্জিওজেনেসিস প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শরীরচর্চা কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শরীরচর্চার সবচেয়ে উত্তম ও ফলপ্রসূ উপায় হলো, নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটা। এই রোগের প্রধান সমস্যা, ইনসুলিনের অভাব বা অকার্যকারিতা। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। শরীরচর্চা করলে দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলসুলিন ক্ষরণ হয়। আর এই ইলসুলিন পেশিকোশে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে প্রয়োজন হয়। তাই শরীরচর্চা করলে সহজে কোশে ইনসুলিন প্রবেশ হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কীভাবে শরীরচর্চা করবেন?
ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ঘাম ঝরানো উচিত। জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শরীরচর্চা করলে ডায়াবেটিস কমতে বাধ্য।
১. হাঁটা: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটার কোনও বিকল্প নেই। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটা অভ্যেস করুন। তবে হ্যাঁ, একদিন বেশিক্ষণ হাঁটার বদলে সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন হাঁটুন দেখবেন ওষুধের মতো কাজ করবে এই অভ্যাস।
২. নাচ: অনেকেই নাচতে ভালবাসেন। শরীর থেকে ঘাম ঝরানোরও খুব ভালো উপায় নাচ করা। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে নাচ প্র্যাকটিস করুন। এর জন্য আগে থেকে নাচের তালিম নেওয়া থাকতে হবে, এমন কোনও ব্যাপার নেই। পছন্দমতো গান চালিয়ে শুধু হাত-পা নাড়ান। ঘাম ঝরানোই এক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে নাচের মাধ্যমে শরীরচর্চা করে শরীর ও মন- দুইই ভালো রাখুন, সুগারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৩. বাগান করা: অনেকেরই বাড়িতে বৃক্ষরোপণ বা বাগান করার শখ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই অভ্যেস কোনও কসরত ছাড়াই আপনাকে সুস্থ করে তুলবে। তাই বাড়িতে গাছ লাগান, মাটি কুপিয়ে সার দিন। চিকিৎসকদের মতে, বাগান করার মাধ্যমে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এবং অ্যারোবিক অ্যাকটিভিটি একই সঙ্গে করা সম্ভব।
৪. ওয়েট লিফটিং: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্ট্রেন্থ ট্রেনিং খুবই গুরত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ওয়েট লিফটিং করতে পারেন, যা খুবই উপকারী। ডাম্বেল বা ভারী কোনও জিনিস জিনিস নিয়ে বাড়িতেই এই অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর জন্য আলাদা করে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫. যোগব্যায়াম: ডায়াবেটিস রোগীরা যোগব্যায়াম অভ্যেস করতে পারেন। শুধু ডায়াবেটিস নয়, একাধিক শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। পাশাপাশি হাড় শক্ত হবে, হাড়ের নমনীয়তা বাড়বে এবং ঘুমও ভালো হবে।