দেশ সংকটের দিকে যাচ্ছে! অরাজকতার ইঙ্গিত পাচ্ছি, কেন বললেন মোদি?

Modi in Parliament: বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই এদিন মোদি বক্তৃতা শুরু করেন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে। তোষণ ও দুর্নীতি ইস্যুতে ঘুরিয়ে এদিন বিরোধীদেরই কটাক্ষ করেন মোদি।

গত দু'দিন ধরে একের পর এক বিরোধী সাংসদের তোপের মুখে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল। মঙ্গলবার সকালেও একাধিক বিরোধী সাংসদ নিশানা করে বিজেপিকে। এ দিনই পালা ছিল লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের। মঙ্গলবার জবাবি ভাষণ দিতে উঠতেই তুমুল হইহট্টগোল শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। তার মধ্যেই নিজের বক্তব্য রাখেন মোদি। শুরু করেন বিরোধীদের পাল্টা নিশানা করতে।

বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই এদিন মোদি বক্তৃতা শুরু করেন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে। তার পরেই শুরু হয় বিরোধীদের উদ্দেশে একের পর এক কটাক্ষ। তোষণ ও দুর্নীতি ইস্যুতে ঘুরিয়ে এদিন বিরোধীদেরই কটাক্ষ করেন মোদি। একই সঙ্গে গত দুদিন ধরে বিরোধী সাংসদরা যে আচরণ সংসদে করেছেন, ঘুরিয়ে তারও নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্ডিয়া জোটকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, জনমত আমাদের পক্ষে গিয়েছে৷ ফলে কিছু মানুষের হারের যন্ত্রণা আমি বুঝতে পারছি৷ পৃথিবীর সবথেকে বড় নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ ফের একবার আমাদের তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে৷ মোদির কথায়, “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র আমাদের তৃতীয়বারের জন্য নির্বাচিত করেছে। ওদের নয়। আমরা বিকশিত ভারতের সংকল্প নিয়ে মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। দেশের মানুষ বিবেচনা করেই আমাদের ফের ক্ষমতায় এনেছেন। অনেকে হাজার অপপ্রচার করে, মিথ্যা ছড়িয়েও পরাজিত হয়েছে। তাই কষ্ট হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ রাহুলের বক্তব্য! বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন তুলে স্পিকারকে চিঠি বিরোধী দলনেতার

নরেন্দ্র মোদি যখন লোকসভায় নিজের বক্তব্য রাখছেন, সে সময় ক্রমাগত মণিপুরের জন্য বিচার চেয়ে একযোগে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা৷ গত দু'দিনে বিরোধীরা সবচেয়ে বেশি তোপ দেগেছেন মণিপুর ইস্যুতেই। একই সঙ্গে বিরোধীরা ‘তানাশাহি নহি চলেগা’ বলেও স্লোগান দিতে থাকেন। গত দশ বছরের তুলনায় এবার লোকসভায় বিরোধীদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি৷ ফলে একজোট হয়ে বিরোধীদের স্লোগান চলতে থাকায় মোদির কথা শোনাই কার্যত মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়৷ তা সত্ত্বেও বিরোধীদের বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেই গত দশ বছরে তাঁর সরকারের সাফল্য একে একে তুলে ধরতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী৷

মোদি এদিন বলেন, “আমরা সবসময় দেশকে এগিয়ে রাখি। সুশাসনকে এগিয়ে রাখি। আমাদের টার্গেটই হচ্ছে দেশকে এগিয়ে রাখা। গত ১০ বছরে আমাদের সব কাজ দেশকে প্রাধান্য দিয়েই।” প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তাঁর সরকার গত ১০ বছর লাগাতার সবকা সাথ- সবকা বিকাশের চিন্তাধারা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিরোধীদের নিশানা করে মোদি এদিন বলেন, “আমরা তুষ্টিকরণে নই, সন্তুষ্টিতে বিশ্বাসী।” এদিন বিরোধীদের হট্টগোলে বারবার বক্তৃতা থামাতে বাধ্য হয়েছেন মোদি। বিরক্তির সুরে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “মানুষ কংগ্রেসকেও জনাদেশ দিয়েছে। সেটা বিরোধী আসনে বসে থাকার। আপনারা এখানেই বসে থাকুন।”

চেনা আত্মবিশ্বাসে ফেরার চেষ্টা করেন এদিন মোদি। গরিবদের কল্যাণ থেকে শুরু করে জনসেবার কথা বারবার নিজেদের সাফল্যের খতিয়ান হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে এ দিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে ফের ২৫ কোটি দারিদ্র দূরীকরণের দাবি করেন মোদি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচারের প্রতি জিরো টলারেন্সের কথা। যার জন্যই দেশবাসী বিজেপিকে আশীর্বাদ করেছে বলেই দাবি প্রধানমন্ত্রীর। বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য ভারত, তাদের প্রতিটা নীতি, কাজই সেই কথা মাথায় রেখে। একই সঙ্গে 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' নীতির কথা বলেছেন মোদি।

একদিন আগেই বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে সওয়াল তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। সে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি মহলে জোরদার চর্চাও হয়। সোমবারই রাহুলের সেই বক্তব্যের নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সেই বক্তব্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে বাদ দেওয়া হয় সংসদের রেকর্ডিং থেকেও। সে বিষয়টি নিয়ে মোদির এদিনের বক্তব্য, "সোমবার সংসদে অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুরা সহনশীল বলেই ভারতের বিরাটতা আজও টিকে রয়েছে। সেই হিন্দুদের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বলা হয়েছে, হিন্দুরা নাকি হিংসাত্মক। এ রকম আপনারা! দেশের হিন্দুদের সঙ্গে এই আচরণ!" এখানেই না থেমে মোদি এ-ও জানান, "দেশে হিন্দুদের গালি দেওয়া এখন একটা ফ্যাশন। ঈশ্বরের রূপ দর্শন করতে হয়। তা প্রদর্শন করতে নেই।"

আরও পড়ুন: মোদির প্রিয় ম: মুসলিম, মাদ্রাসা, মাংস… মণিপুর কই? প্রশ্ন মহুয়ার

ভোটের আগে একাধিক জনসভায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চেনা মেজাজেই এদিন ফের লোকসভায় দেখা গেল মোদিকে। কংগ্রেসকে নিশানা করে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ৬ দশক ধরে কংগ্রেস শাসন করার পর আজ অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। কংগ্রেস দক্ষিণের গিয়ে উত্তরের বিরুদ্ধে, উত্তরে গিয়ে দক্ষিণের বিরুদ্ধে বলে। মহাপুরুষদের বিরুদ্ধে বলে। ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন চায়। অরাজকতা তৈরিই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে মোদির দাবি, দেশে আর্থিক অরাজকতা চায় কংগ্রেস। নিজেদের রাজ্যে কংগ্রেস যে পথে এগোচ্ছে তাতে আর্থিক গোলযোগ আটকানো অসম্ভব। ইচ্ছে করেই এমন ব্যবস্থা করছেন যাতে ওদের রাজ্যগুলি দেশের আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে মোদি যতই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, বিরোধীদের সমস্বরে স্লোগানের সামনে কিছুটা হলেও দুর্বল দেখাচ্ছিল মোদিকে। 

মোদির বক্তব্যের মধ্যেই বিরোধীদের স্লোগানে কার্যত কাঁপতে থাকে লোকসভা। মণিপুর থেকে শুরু করে সুবিচার চাওয়ার দাবি, এমনকী 'তানাশাহি নেহি চলেগি'র মতো একাধিক স্লোগানে ফেটে পড়তে থাকে সংসদ। তার মধ্যেই বক্তৃতা চালিয়ে যান মোদি। কথা বলতে বলতে অনেকবারই থমকে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বেশ কয়েকবার জলও খেতে দেখা যায় তাঁকে। তার মধ্যেও বারবার 'বিকশিত ভারতে'র কথা বলে বিরোধীস্বরকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিরোধীদের জোরের সামনে ভাষণ গুলিয়ে এক কথা বারবার বলতেও শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকেই। বিরোধীদের এই ভয়ঙ্কর রূপে যে খানিকটা হলেও ভয় পেয়েছে মোদি সরকার, তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এদিনের লোকসভা অধিবেশনে।

More Articles