বিশেষ অধিবেশনের শুরুতেই দিনশেষ পুরনো সংসদ ভবনের! সেন্ট্রাল ভিস্তায় লেখা হবে কোন নতুন ইতিহাস?

Special Session of Parliament : তবে পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশনে দেশবাসীর জন্য ফের কোনও ধামাকা নিয়ে আসতে চলেছেন না তো মোদি! যেমনটা এসেছিল ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাতে। তেমনই কোনও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের প্রাকমুহূর্ত নয় তো! এই বিশ...

দেশের আগাপাশতলা বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। স্ট্যাচু অব ইউনিটি থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম হোক বা নয়া সংসদভবন, সর্বোত্র দাগ রেখে যেতে বদ্ধপরিকর মোদি। সংসদভবন তৈরি, এবার থেকে সেই নয়া সংসদভবন সেন্ট্রাল ভিস্তাতেই বসবে পরবর্তী সব অধিবেশন। তবে তার আগে ইতিহাসবিজরিত সংসদভবনে বসল বিশেষ অধিবেশন, সম্ভবত শেষ অধিবেশন। কেন হঠাৎ করে অসময়ে পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকলেন নরেন্দ্র মোদি? কোন কোন বিষয় উঠে আসবে সেই অধিবেশনে? কোনও বিশেষ সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়েই কি এই বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।

গণেশ চতুর্থী শুভদিন। আর সেই দিনটাকেই সংসদভবনে পা দেওয়ার দিন হিসেবে ভেবে রেখেছে মোদি সরকার। বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনেই সে কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন মোদি। এ দিন অধিবেশনের গোড়া থেকেই লোকসভার বাইরে দাঁড়িয়ে মিনিট পাঁচেকের ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি জানান, আয়তনে ছোট হলেও এই বিশেষ অধিবেশনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহাসিক কোনও সিদ্ধান্তেরও সাক্ষী হতে পারে এই অধিবেশন। চলতি অধিবেশনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে কথাবার্তা বলা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নয়া সংসদ ভবনে নরেন্দ্র মোদির ‘অভিষেক’! কোথা থেকে এল এই রাজদণ্ড?

এদিনের অধিবেশন শুরুই করেছেন প্রধানমন্ত্রী সাফল্যনামা দিয়ে। জি-২০ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে নিজের শক্তি তুলে ধরতে পেরেছে ভারত। গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে ভারত। তার পাশাপাশি চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যকেও অধিবেশনে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বেশিরভাগ অধিবেশনেই বিরোধীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভেই নষ্ট হয় অনেকটা করে সময়। এই ছোট অধিবেশনে বিরোধীরা যেন 'কান্নাকাটি' করে সময় নষ্ট না করেন, এই মর্মে বিরোধীদের খোঁচা দিতেও ছাড়েননি মোদি। অধিবেশনের প্রাথমিক পর্যায়ে সংসদ ভবনের ইতিহাস নিয়ে বারবার উঠে এসেছে নানা ধরনের কথাবার্তা। ইতিহাসচারণে মেতেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির অন্যান্য সাংসদেরাও। উঠে এসেছে নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ। সেসব নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়েছে ভাষণ ঠেকেছে দীর্ঘভাষণে। ডিঙিয়ে যায় সময়সীমা।

PM Modi Cabinet Meet Underway Amid Special Session Of Parliament

কিন্তু সবই তো হল। তবে পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশনে দেশবাসীর জন্য ফের কোনও ধামাকা নিয়ে আসতে চলেছেন না তো মোদি! যেমনটা এসেছিল ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাতে। কিংবা যেভাবে হুট করে ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল লকডাউনের। কিংবা হঠাৎ করে বাতিল হয়ে গিয়েছিল জম্ম-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা। তেমনই কোনও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের প্রাকমুহূর্ত নয় তো! সাধারণ মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার সিঁদুরে মেঘ। কী কী বিষয় উঠে আসতে পারে এই অধিবেশনে?

ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ সম্ভাব্য একটি তালিকা প্রকাশও করা হয়েছে সরকারের তরফে। সেখান থেকে মোটামুটি একটা আন্দাজ মিলেছে কী কী থাকতে চলেছে বিশেষ অধিবেশনের অ্যাজেন্ডায়?

সেই তালিকার প্রথমেই রয়েছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্যানেল গঠন সংক্রান্ত বিল। মনে করা হচ্ছে সেই বিলে নির্বাচন কমিশনার বেছে নেওয়ার প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও অধিবেশনের তালিকায় রয়েছে আরও সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিল। তেমনটাই জানান কেন্দ্র সরকারের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। হাতে রয়েছে অ্যাডভোকেট (সংসোধনী) বিল, দ্য প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিয়়িকাল বিল, পোস্ট অফিস বিলের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল। তবে কোনটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সে বিষয়টি খোলসা করে জানানো হয়নি। এদিকে, লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব নিয়ে বিল পেশ করতেই হবে বলে নাছোড় বিরোধীরা। সেই মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কি আদৌ আলোচনা হবে এই অধিবেশনে, সেটাও একটা প্রশ্ন।

আরও পড়ুন:নতুন সংসদ ভবন জুড়ে পদ্মফুল আর ময়ূর! চোখ ধাঁধানো বিলাসের বহরে অবাক দেশ

এরমধ্যে আবার নিজেদের ৯ দফা দাবি সংসদের অধিবেশনে পেশ করে বসে রয়েছে কংগ্রেস। সেখানে রয়েছে মণিপুর ইস্যু, কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ, মুদ্রাস্ফিতি, বেকারত্ব থেকে শুরু করে চিনের বিতর্কিত ম্যাপ ও সীমানা লঙ্ঘন সংক্রান্ত ইস্যু, আদানি দুর্নীতি, সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষা, জাতিগত জনগণনার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব জ্বলন্ত ইস্যু। তবে আদৌ কংগ্রেসের সেই সব ইস্যু নিয়ে কি কথা বলবে এই বিশেষ অধিবেশন? নাকি সেসব ছাপিয়ে ফের কোনও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংসদের ৭৫ বছরের উদযাপনেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর নামকে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে দেবেন কেন্দ্র সরকার, সেটাই দেখার... আর সেই দাগ রেখে যাওয়ার ইতিহাসে আরও মোটা অক্ষরে জ্বলজ্বল করবে সেন্ট্রাল ভিস্তার নামও, অবশ্যই মোদির কীর্তি হিসেবে।

More Articles