অভিজ্ঞতাই পুঁজি! ভারতের সব জেলায় একরাত থেকেছেন, দাবি নরেন্দ্র মোদির
PM Modi and RSS : ২০১৬ সালের পাওয়া শেষ হিসেব বলছে দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের শাখা রয়েছে ৫৬৮৫৯টি।
১৯৭১ সালে সংসার ছেড়েছিলেন মোদি। সংসার ছেড়ে সন্ন্যাস নেন অনেকে, মোদি হয়েছিলেন সেবক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সেবক। সংঘের প্রচারক, সেবক হয়ে কাজ করতে গিয়ে নাকি দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ঘুরে দেখেছেন নরেন্দ্র মোদি। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, এই ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলাতে রাত কাটিয়েছেন তিনি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অনেকেই তাঁর জীবন সম্পর্কে নানা তথ্যতালাশ করেছেন। কিন্তু মোদিকে বুঝতে গেলে আসলে যেতে হবে সেই সত্তরের দশকের দিনগুলিতে। বহু দশক ধরে অরাজনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেছিলেন মোদি।
আরএসএসের সংগঠন গড়তে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ঘুরে দেখার ও সেখানে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, দাবি মোদির। এই সময়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, মানুষ, অনন্য সংস্কৃতি, ভাষা, খাবার এবং অন্যান্য দিকগুলিকে বুঝতে শেখেন তিনি। মোদি বলছেন, এই জেলা জেলায় ঘুরে সংগঠন মজবুত করার কাজ তাঁর কাছে এক দুর্দান্ত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। বিশাল এই দেশের বৈচিত্র্য দেখে নাকি বিস্মিত হয়ে যান তিনি। তবে এই বিবিধের মাঝে একটি সাধারণ বিষয় খুঁজে পান। প্রতিটি অঞ্চল এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে 'পারব' মনোভাবটি নাকি ছিলই। এই মানুষরা দুর্দান্ত দক্ষতায় জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের ছিল অগাধ আত্মবিশ্বাস। কেবল এই মানুষদের দরকার ছিল একটি মঞ্চের, একটি এমন মঞ্চের যা তাদের ক্ষমতায়ন ঘটাবে।
আরও পড়ুন- “তুমি আমার সঙ্গে গিয়ে করবে টা কী,” কেন যশোদাবেনকে বিয়ের কথা স্বীকার করতে চাননি মোদি?
এই মঞ্চই দিতে চেয়েছিল আরএসএস। বহুযুগ ধরে তৃণমূল স্তরে কাজ করে চলেছে সংঘ পরিবার। RSS-এর বেশিরভাগ সাংগঠনিক কাজ হয় বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে জেলায় জেলায়। এই শাখার সংখ্যা ১৯৭৫ সালে ছিল ৮৫০০। ১৯৭৭ সালে তা বেড়ে হয় ১১,০০০! ১৯৮২ সালের মধ্যে লাফিয়ে তা হয়ে যায় ২০,০০০। ২০০৪ সালে ভারত জুড়ে ৫১,০০০-এরও বেশি শাখা কাজ করছিল আরএসএসের। ২০০৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের পড়ে যায়। এক ধাক্কায় শাখার সংখ্যা ১০,০০০-এরও বেশি কমে গিয়েছিল৷ ২০১৪ সালে, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর সংখ্যাটি আবার প্রায় ৪০,০০০ ছোঁয়। ২০১৬ সালের পাওয়া শেষ হিসেব বলছে দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের শাখা রয়েছে ৫৬৮৫৯টি। বলা বাহুল্য এই মুহূর্তে সংখ্যা আরও ঢের বেশি।
অধিকাংশ শাখাই হিন্দিভাষী অঞ্চলে অবস্থিত। ২০১৬ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে শাখা ছিল ১,৮৯৮ টি। উত্তরপ্রদেশে ৮,০০০-এরও বেশি শাখা, কেরলের মতো জায়গায় আরএসএসের ৬,৮৪৫টি শাখা ছিল, মহারাষ্ট্রে ৪,০০০, এবং গুজরাতে প্রায় ১,০০০। উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে অসমে ৯০৩টি, মণিপুরে ১০৭টি, অরুণাচলে ৩৬টি এবং নাগাল্যান্ডে ৪টি, ত্রিপুরায় ১৩০টি এবং মেঘালয়ে ৪৬টি সহ ১,০০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। ২০১৬ সালের হিসেবেই পঞ্জাবে ৯০০ টিরও বেশি শাখা রয়েছে। বিহারে ১,৪২১টি, রাজস্থানে ৪,৮৭০টি, উত্তরাখণ্ডে ১,২৫২টি, তামিলনাড়ুতে ২,০৬০টি এবং আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ১,৪৯২টি। জম্মু ও কাশ্মীরেও প্রায় ৫০০টি শাখা রয়েছে সংঘের। ২০১৯ সালের আরএসএসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ৮৪,৮৭৭টি শাখার মধ্যে ৫৯,২৬৬টি দৈনিক। ১৭,২৯৯টি সাপ্তাহিক শাখা।
আরও পড়ুন- ১৯৭১-এ সংসার ছেড়েছিলেন মোদি! প্রধানমন্ত্রীর বাকি পরিবারের কথা কেন জানেই না দেশ
এবার আসা যাক মোদির এই জেলাভ্রমণ পর্বে। নরেন্দ্র মোদি পরিবার থেকে দূরে থাকতে শুরু করেন সেই ১৯৭১ সাল থেকে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মতাদর্শ অনুযায়ী একজন 'প্রচারক'কে পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই হয়। সবার আগে কাজ! গার্হস্থ্য এবং পারিবারিক ঝুট ঝামেলা, মায়া থেকে মুক্ত হয়ে তবেই সবটুকু দেওয়া যাবে সংঘের মত প্রচারের জন্য। আরএসএসের বিশ্বস্ত নরেন্দ্র মোদি ১৯৭১ সাল থেকেই তাই সংসারের বাঁধন ছিন্ন করতে শুরু করেন এবং সংঘের কাজের আরও বেশি মনোযোগ দেন। তখন থেকেই নরেন্দ্র মোদি 'ব্রহ্মচারী' জীবনযাপন শুরু করেন। তাঁর রাজনৈতিক সিঁড়িভাঙা যত বেড়েছে ততই ক্ষীণ হয়েছে পারিবারিক যোগাযোগ। আর সময়কাল লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, এই পর্বে হু হু করে দেশে বেড়েছে আরএসএসের শাখা।
মোদির দাবি, সময় এবং অভিজ্ঞতাই তাঁর সবচেয়ে বড় শিক্ষক। অর্ধ শতাব্দীরও বেশিকাল আগে কর্মজীবন শুরু তাঁর। ১৯৭২ সালে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক বা পূর্ণ-সময়ের কর্মী হয়েছিলেন। দেশের সমস্ত জেলা ঘুরে যে কাজটি সত্তরের দশকে করতে শুরু করেছিলেন মোদি, ২০২০ সালের পর থেকে, বা আরও কিঞ্চিৎ আগে থেকেই ফল পেতে শুরুও করেছেন। যখন প্রশ্ন ওঠে বাংলায় কীভাবে বিজেপির দাপট বাড়ল, প্রশ্ন ওঠে উত্তরপূর্বের মতো স্থানে কীভাবে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি, সেই সব সমীকরণের আগে বসে থাকেন একদা আরএসএসের প্রচারক মোদি, দেশের সব রাজ্যে যিনি নাকি...।