ভোটের দিনেই রাজস্থানে ৫০ হাজার বিয়েবাড়ি! ভোটবাক্সে পড়বে সেই ছাপ?
Assembly Election, Rajasthan: রাজস্থানে ভোটের তারিখ পড়েছে আগামী ২৩ নভেম্বর। সেই দিনই অন্তত ৫০ হাজার বিয়ে বাড়ি রয়েছে রাজস্থান জুড়ে।
গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব ভোট। আবার বিয়েবাড়ি ব্যাপারটাও সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জরুরি। রাজস্থানে এই দুই উৎসবের মধ্যেই লেগে গিয়েছে কার্যত লড়াই। আগামী মাসেই পাঁচ রাজ্যে ভোট। যার মধ্যে রয়েছে রাজস্থানও। ইতিমধ্যে ঘোষণা হয়ে গিয়েছে দিনক্ষণ। বিধানসভা ভোট বলে কথা। ফলে তুঙ্গে প্রস্তুতি। রাজস্থানে ভোটের তারিখ পড়েছে আগামী ২৩ নভেম্বর। রাজস্থানে এক দফাতেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিধানসভা ভোট। এমনিতে ভোটের জন্য নভেম্বর বেশ ভালো সময়। আবহাওয়াও অপেক্ষাকৃত মনোরম থাকে। তাছাড়া দীপাবলীর মতো বড় পার্বণও ততদিনে মিটে গিয়েছে।
তবে গোল বেঁধেছে অন্য জায়গায়। সকলেই কমবেশি জানেন, অক্টোবর মল মাসে। ফলে ওই সময়ে বিবাহ বা অন্নপ্রাসনের মতো শুভ অনুষ্ঠান হয় না সাধারণ ভাবে। ফলে অগ্রহায়ন পেরোতে না পেরোতেই পাঁজি জুড়ে চকচক করে ওঠে একের পর এক বিয়ের দিন। আর অনুষ্ঠান বা পার্বণের সঙ্গে না মিললেও ভোটের দিন অর্থাৎ ২৩ তারিখ না বিয়ের বিরাট যোগ। আর ওই দিনই নাকি রাজস্থান জুড়ে রয়েছে অন্তত ৫০ হাজার বিবাহের সূচি।
আসলে ওই দিনটি নাকি রাজস্থানের বাসিন্দাদের কাছে বেশ শুভ। দেব উথানি একাদশী নামে পরিচিত এই দিনটি। আর ওই দিনটাই নাকি বেছে বেছে বিয়ে করার ধূম লেগেছে রাজস্থানে। তবে এই বিয়ের ধূম নাকি পণ্ড করতে পারে ভোটের বাজারকে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই যোগ নাকি ভোটারের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ভোট ‘চোখের ধুলো’, মহিলা প্রার্থীর নেপথ্যে পঞ্চায়েতে রাজ সেই পুরুষদেরই
রাজস্থানে বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ২০০। ওই দু'শোটি আসনের জন্যই ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা আগামী ২৩ নভেম্বর। জানা গিয়েছে, ওই একাদশী তিথির যোগ শুরু হচ্ছে ২২ তারিখ দুপুর একটা থেকে। যা শেষ হতে হতে ২৩ নভেম্বর সকাল ১১.৩১ পর্যন্ত। স্থানীয় বিশ্বাস, এই দেব উঠানি একাদশী নাকি বিয়ের জন্য আদর্শ সময়। আর বিয়ের দিনও শুরু হয় এই তারিখটি থেকে।
হিন্দু ধর্মে নাকি এই দিনটিকে সার্বিক ভাবেই শুভ বলে ধরা হয়। তাই শুধু রাজস্থান বলে নয়, বহু জায়গাতেই এই দিনে বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। জানা গিয়েছে, শুধু রাজস্থানেই ওই দিন ৫০ হাজার বিয়েবাড়ি রয়েছে। বিয়ে মানে তো শুধুমাত্র পাত্র-পাত্রী বা পরিবারের অনুষ্ঠান নয়। বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে সমাজের বহু মানুষের যোগদান থাকে। নানা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন মানুষ, যা তাঁদের রুজির জায়গাও বটে। ফলে ওই দিন তাঁরা সেই সব কাজ ছেড়ে আদৌ ভোট দিতে আসবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সারা ভারত টেন্ট ডেকরেটর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রবি জিন্দলও।
এদিকে, রাজস্থানের প্রতিটি বুথে ৭৫ শতাংশ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মোট ৫১,৭৫৬টি নির্বাচন কেন্দ্র রয়েছে রাজস্থানে। তবে ব্যবসায়ী সমিতিগুলির দাবি, একই দিনে বিয়ে ও ভোট পড়ায় ভোটদাতার সংখ্যায় এর প্রভাব ভালো রকমই পড়বে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জড়িত কর্মী, ব্যবসায়ীরা তো বটেই, পরিবারের সদস্যদের ভোটদানের সম্ভাবনা কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রিপোর্ট বলছে, অন্তত চার লক্ষ ব্যাবসায়ী এই বিয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন টেন্ট ডিলার, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলি। আর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এই বিয়ের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। যার মধ্যে রয়েছে ক্যাটারিং, ফুলওয়ালা, ব্যান্ড পার্টি এবং কোরিওগ্রাফারের মতো একাধিক পেশার মানুষ।
ইদানীং তো আবার ডেস্টিনিশেন ওয়েডিংয়ের চল। যার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গা হচ্ছে রাজস্থান। তারকা থেকে শুরু করে নেতামন্ত্রী, বিভিন্ন হাইপ্রোফাইল বিয়ের অনুষ্ঠানই হয়ে থাকে রাজস্থানের বিভিন্ন দুর্গ এবং হোটেলে। আর সেই সব কাজের জন্য বহু কর্মীই অন্যান্য জায়গায় যেতে বাধ্য হন। ফলে নিজের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের এলাকায় থাকতে পারবেন না অনেকেই। ফলে সেই প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সেও।
যদিও রাজস্থানের প্রাক্তন বিজেপি প্রধান সতীশ পুনিয়ার মতে অবশ্য বিয়ের তারিখ পড়ার খুব একটা প্রভাব পড়ছে না ভোটবাক্সে। বরং ঠিক সমস্ত বাধাবিপত্তি সরিয়ে ভোটকেন্দ্রে যথাসময়ে পৌঁছবেন ভোটাররা। দলের কর্মীরা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলেই বিশ্বাস তাঁর। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, রাজস্থানের বাইরে কাজ করতে যান বহু পরিযায়ী শ্রমিক। ভোটের জন্য তাঁরা অনেকেই ফিরবেন নিজের শহরে। ফলে যে অংশের ভোট বিয়েশাদির কারণে কাটবে, সেই শতাংশ ভোট ব্যালেন্স করে দেবেন ওই সব পরিযায়ী শ্রমিকরাই। তেমনটাই আশা পুনিয়ার।
আরও পড়ুন: স্রেফ ‘জয়েন্ট’-এর জন্যই সবাই উড়ে আসবে এখানে! কেন এই দেশে ভোটের বড় ইস্যু গাঁজা?
রাজস্থান জুড়ে মোট ভোটার সংখ্যা ৫.২৭ কোটি। যার মধ্যে ২.৭৫ কোটি ভোটার পুরুষ এবং ২.৫১ কোটি ভোটার মহিলা। তার মধ্যে ২২ লক্ষ ভোটারের বয়স ১৮-১৯-র মধ্যে। যারা এ বছর প্রথম বার ভোট দিতে চলেছেন। রাজস্থান ছাড়াও নভেম্বরে ভোট রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা ও মিজোরামে। ভোটের ফলাফল আগামী ৩ ডিসেম্বর। এবার এই বিয়ের তারিখের সঙ্গে ভোটের দিনের ধাক্কাধাক্কি কতটা প্রভাব ফেলে ভোটবাক্সে, সেটাই আপাতত দেখার। প্রসঙ্গত, এখন রাজস্থানে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস সরকার। তবে ভোট নিয়ে বিজেপি গোড়া থেকে যে আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে চলেছে, তাতে এই ভোটের পরে গদি উল্টেপাল্টে যাবে কিনা, সমস্ত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নজর থাকবে সেদিকেও।