মোবাইলে জমানো পর্নোগ্রাফি! আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তির পরিচয় কী?

R G kar Rape Case পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি কি অপরাধের কারণ, আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তির পরিচয় ফাঁসে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্মম হত্যাকাণ্ডে ধৃত ব্যক্তির নাম সঞ্জয় রায়। শুক্রবার রাতেই ওই ঘটনার তদন্তের জন্য কলকাতা পুলিশ স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) গঠন করে। এ দিন রাতেই তাকে আটক করা হয়েছিল। তাঁর কথায় অসঙ্গতি ছিল বলেই পুলিশের আরও সন্দেহ হয়। তারপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। লাগাতার জেরার মুখে অপরাধের কথা মেনে নিয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাঁর মধ্যে নাকি বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ দেখা যায়নি। জানা দরকার, এই নিরুত্তাপ ধৃত ব্যক্তির পরিচয় কী?

 

জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী কিছুদিন আগেই ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। অভিযুক্তর মা জানান, শেষ কিছুদিন বাড়িতে আসা যাওয়াও বন্ধ করে দেয় সঞ্জয়। সে নাকি একাধিক বিয়েও করেছিল। প্রতিবেশীরা দাবি করছেন, অভিযুক্ত সঞ্জয় নাকি পৈতৃক ভিটে বিক্রির নামে টাকা আত্মসাত করেছে। প্রতিবেশীদের তাগাদায় তাই বাড়ি আসাও কমে গিয়েছিল তাঁর। অভিযুক্তর মা জানেন, ছেলে কলকাতা পুলিশে চাকরি করে। আবার প্রতিবেশীদের বলেছিল, সে কলকাতা আর্মড পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নে চাকরি করে। প্রতিবেশীদের দাবি পরে তাঁরা জানতে পারে, অভিযুক্ত সঞ্জয় আসলে সিভিক ভলেন্টিয়ার।

 

অন্যদিকে ধৃত ব্যক্তি সঞ্জয়ের মোবাইলে পাওয়া গিয়েছে একধিক পর্নোগ্রাফির ভিডিও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির মানসিক বিকৃতি রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে নিজেই জানায়, রোগীদের ভর্তি, দেখাশোনার কাজ করত আরজি কর হাসপাতালে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জেরায় জানায়, ওই সময় চেস্ট মেডিসিন বিভাগে রোগীদের দেখতে গিয়েছিল সে। সঞ্জয় হাসপাতালে রোগী ভর্তির দালালি করত বলেও অভিযোগ।

 

সঞ্জয় যে বিভাগে যান, চিকিৎসকেরও সে দিন ওই বিভাগেই ডিউটি ছিল। ধৃত ব্যক্তি একাধিক রোগীর নামও বলে। পরে পুলিশ রোগীদের কাছে সঞ্জয়ের কথা জানতে চায়। কিন্তু রোগীরা জানান তাঁরা কেউই তাঁকে চেনেন না।

 

প্রথমে জানা গিয়েছিল, সে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী। পরে সূত্র মারফত জানা যায়, সে হাসপাতালের সরকারি নিরাপত্তারক্ষী নয়। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি সিভিক ভলান্টিয়ার কি না? তাঁর সাথে সিভিক ভলান্টিয়ার সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে কি না? অভিযুক্ত ব্যক্তির পেশাই বা কী? সেই নিয়ে কোনো কিছুই বলেননি কমিশনার। কিন্তু ধৃত ব্যক্তির পেশা না জানানো আসলে অস্বচ্ছতার তৈরি বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে একাংশ মহল মনে করছে, ওই ব্যক্তি হাসপাতালের সিভিক ভলান্টিয়ারই ছিল। তাই মধ্যরাতেও সহজেই হাসপাতালে ঢুকতে এবং বেরোতে পেরেছিল।

 

কেন এখনও পুলিশ অভিযুক্তর পেশা স্পষ্ট জানাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। প্রশ্ন উঠছে, পেশা আড়াল করে কী ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই এই ঘটনায় জল ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথমে বাড়ির লোককে বলা হয় মেয়ে অসুস্থ। পরে জানানো হয় মেয়ে আত্মঘাতী। প্রাথমিক তদন্ত কমিটিতে মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের রেখে মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আরজি কর- এর বাকি ট্রেনি ডাক্তাররা যদি সামনে না আসতেন তাহলে কী আদৌ আসল ঘটনা প্রকাশ পেত? এই ভয়াবহ ঘটনাটি হয়তো ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মতো গুছিয়ে নিতেন। রাজ্যবাসী হয়তো জানতেই পারত না রাজ্যের নামজাদা হাসপাতালে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে।

 

More Articles