মুখোশের আড়ালে প্রশান্ত কিশোরের আসল মুখ, উন্মোচন করলেন করণ থাপার

Prashant Kishore Exposed: ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকসভা ভোটের ফলাফল সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি কীভাবে প্রতি আক্রমণে নামছেন।

তিনি রাজনৈতিক কৌশলী। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে ভোট কীভাবে 'করাতে' হয় তা তিনি নিজে হাতে করে দেখিয়েছেন। গত কয়েক বছরে রাজনীতির চর্চায় তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী তাই গুরুত্ব পায়। পশ্চিবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় ডুবন্ত তরী তিনি নিরাপদে পার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোটের অঙ্কে তিনিই খোদ আর্যভট্ট। সেই নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য প্রায় ৩০০ আসনের ভবিষ্যদ্বাণী করে বেশ কিছুকাল ধরেই শিরোনামে রয়েছেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে প্রশান্ত কিশোর কেমন, ক্রমাগত তাও যেন নিজেই প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। সাংবাদিক করণ থাপারের সঙ্গে পিকের সাক্ষাত্কারের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকসভা ভোটের ফলাফল সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি কীভাবে প্রতি আক্রমণে নামছেন।

নিজের এক্স-হ্যান্ডেলে প্রশান্ত কিশোর লিখেছেন, “জল খাওয়া ভালো কারণ তা মন এবং শরীর দুই-ই হাইড্রেটেড রাখে। যারা এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন নিয়ে বিচলিত তাদের অবশ্যই ৪ জুন প্রচুর জল হাতে রাখতে হবে। পুনশ্চ: মনে রাখবেন, ২০২১ সালের ২ মে এবং পশ্চিমবঙ্গ!”

 

আরও পড়ুন-মোদির হাতেই ভারতের রাশ নাকি ক্ষমতায় এবার অন্য কেউ! কী বলছে প্রশান্ত কিশোরের অঙ্কের খাতা?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে পিকের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর, একাংশের মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। ২০২২ সালের মে মাসের একটি পুরানো টুইট নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের নির্বাচনী ভবিষ্যদ্বাণীর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। একাংশের মানুষ বলেছেন, পিকে ২০২২ সালে বলছিলেন, কংগ্রেস গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশে হেরে যাবে কিন্তু সেই বছর বিধানসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশে জয়লাভ করেছিল কংগ্রেস এবং গুজরাতে হারের সম্মুখীন হয়েছিল।

সাংবাদিক করণ থাপার এই সাক্ষাত্কারে হিমাচলের নির্বাচন সম্পর্কে পিকের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। প্রশান্ত কিশোর এই প্রশ্নে মেজাজ হারান। বারেবারে তিনি বলেন, এমন কথা তিনি বলেননি যে কংগ্রেসের ক্ষতি হবে। এই বক্তব্যের সাপেক্ষে ভিডিও প্রমাণ চেয়েছেন পিকে। করণ থাপার এবং প্রশান্ত কিশোরের মধ্যে এই তর্ক বিবাদের পর্যায়ে যায়। সেই সাক্ষাৎকারের ক্লিপ এখন ভাইরাল।

সাক্ষাত্কারে, যখন করণ থাপার পিকের এই ২০২২ সালের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বিবিধ অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত নানা সংবাদের উল্লেখ করেন, তখন প্রশান্ত কিশোর সেগুলিকে খারিজ করে দেন। তিনি বর্ষীয়ান সাংবাদিক করণ থাপারকে এই মন্তব্যের ভিডিও ফুটেজ দিতে বলেন। এবং জানান, করণ যদি এই ভিডিও জোগাড় করতে পারেন তাহলে পিকে তাঁর কাজ ছেড়ে দেবেন। এই ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করে অনেকেই পিকের ২০২২ সালের মে মাসের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টটি তুলে এনেছেন। পাশাপাশি এই পোস্টটি ব্যবহার করা বিশিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলির নিউজ বুলেটিনগুলির ভিডিওগুলিও শেয়ার হচ্ছে চারিদিকে৷

 

কিন্তু প্রশান্ত কিশোর এখন তাঁর ২০২২ সালের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ হিসাবে এই সব সংবাদগুলি অস্বীকার করছেন। পিকে বলছেন, সংবাদপত্র যা খুশি প্রকাশ করতে পারে। “আমি এই ধরনের শব্দ কোথায় বলেছি তা দেখানোর জন্য আমি যে কাউকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে প্রকৃত বিবৃতি দেখান,” চিৎকার করে বলছেন প্রশান্ত কিশোর।

বিজেপির টানা তৃতীয়বারের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করার পরে প্রশান্ত কিশোরকে বহু সমালোচনা শুনতে হয়েছে। পিকে বলছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি "একই বা সামান্য বেশি সংখ্যা" নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে। এনডিটিভি এবং ইন্ডিয়া টুডে-র সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে তিনি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর সম্ভাবনা নিয়ে ব্যঙ্গও করেছেন। বলেছেন, বিরোধীদের কাছে এটি তৃতীয় হারের সুযোগ।

প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণা করতে ইন্ডিয়া জোটের ব্যর্থতা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি বারবার বিরোধী জোটকে এই প্রসঙ্গেই আক্রমণ করেছে, বলেছে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে তারা পাঁচ বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে।

আরও পড়ুন- ২০১৪: মোদিকে যেভাবে মসনদে বসিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর

একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বিশিষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইয়ান ব্রেমারও এনডিটিভিকে বলেছেন, ২৯৫ থেকে ৩১৫ টি আসনে জিততে পারে বিজেপি। ২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২ টি আসন জিতে ক্ষমতায় এসেছিল, এনডিএ মোট ৩৩৬টি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালে বিজেপির আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৩, এনডিএ সব মিলিয়ে পায় ৩৫৩। এবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র নির্বাচনী স্লোগান ‘আব কি বার, ৪০০ পার’। বিশ্লেষকরা বলছেন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে।

কিন্তু প্রশান্ত কিশোর তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে প্রশ্ন করা হলেই এমন চিৎকার জুড়ছেন কেন? বিজেপিকে তিনি খোলামেলা ভাবেই তো সাহায্য করেছিলেন ২০২৪ সালে। হ্যাঁ, তাঁর বহু ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তো তা রীতিমতো উদাহরণে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের বেশ কিছু আগে প্রশান্ত কিশোর নিজে কংগ্রেসের সঙ্গে জুড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বিষয়ে কংগ্রেস কোনও সাড়া দেয়নি। তারপর থেকেই নির্বাচনী ভবিষ্যদ্ববাণীতে তিনি বিজেপির কেতন উড়িয়েছেন। তাঁর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেই নিজের আসল রূপ প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে কেন তবে?

More Articles