নীতীশকে টেক্কা দিতে নতুন দল গড়ে ফেললেন প্রশান্ত কিশোর! কী লক্ষ্য জন সুরজ পার্টির?
Prashant Kishor Jan Suraj Party: প্রশান্ত কিশোর জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৫ সালেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে জন সুরজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
গান্ধির জন্মদিনে দেশে জন্ম নিল নয়া রাজনৈতিক দল। প্রাক্তন রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর বুধবার পটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের রাজনৈতিক দল, জন সুরজ চালু করেছেন। ভোটের অঙ্কে তিনি যে প্রায় আর্যভট্ট তা প্রমাণ করেই দিয়েছিলেন বেশ কিছু নির্বাচনে নির্দিষ্ট দলের হয়ে কৌশল ঠিক করে। যদিও, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর অঙ্ক মেলেনি একেবারেই। তবে নির্বাচনের বহু আগে থেকেই বিহারের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় নেমেছিলেন তিনি। নতুন দল তৈরির প্রয়াস শুরু করেছিলেন। অবশেষে করেও ফেললেন। নতুন এই দলের নীতি কী? সদ্যোজাত দলকে নিয়ে কী পরিকল্পনা পিকের?
বিহারের জাতীয়তাবাদকে সামনে রাখছেন প্রশান্ত। দলের সূচনালগ্নেই প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, "আপনাদের সবাইকে 'জয় বিহার' বলতে হবে আর এত জোরে বলতে হবে যে কেউ আপনাকে এবং আপনার সন্তানদের 'বিহারী' বলে ডাকে না এবং সেটা গালাগালির মতো না শোনায়। পটনায় একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রশান্ত বলেছিলেন, “আপনাদের গলার আওয়াজ দিল্লিতে পৌঁছতে হবে, বাংলায় পৌঁছতে হবে, যেখানে বিহারের ছাত্রদের মারধর করা হয়েছিল। তামিলনাড়ু, দিল্লি এবং বোম্বেতে পৌঁছতে হবে যেখানে বিহারি শিশুদের নির্যাতন ও মারধর করা হয়েছে।"
আরও পড়ুন- মুখোশের আড়ালে প্রশান্ত কিশোরের আসল মুখ, উন্মোচন করলেন করণ থাপার
প্রশান্ত কিশোর আসলে একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করছিলেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িতে পড়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল বিহারের দুই চাকরিপ্রার্থীকে শিলিগুড়িতে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল যাতে দেখা যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের, বিশেষ করে যারা বিহারের, তাঁদের তামিলনাড়ুতে আক্রমণ করা হয়েছে, এমনকী হত্যাও করা হয়েছে। যদিও পরে জানা যায়, ভিডিওগুলি বিভ্রান্তিমূলক।
প্রশান্ত কিশোর বলছেন, জন সুরজের লক্ষ্য বিহারের নাগরিকদের জন্য এক ঐক্যবদ্ধ বিকল্প দল তৈরি করে বিহারেরর রাজনৈতিক অসহায়তার অবসান ঘটানো। মহাত্মা গান্ধির জন্মজয়ন্তীতে দলের সূচনা করে তিনি বলেছেন, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবকে সমর্থন করার জন্য কংগ্রেসের যে পরিণতি হয়েছিল, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে সমর্থন করার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টিরও সেই একই পরিণতি হবে। প্রশান্তের আরও দাবি, নীতীশ কুমার রাজ্য পরিচালনার জন্য মানসিক বা শারীরিকভাবে উপযুক্তই নন।
এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে, জানুয়ারিতে, নীতীশ কুমার বিরোধী দল ইন্ডিয়া জোট থেকে সরে আসেন এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে শামিল হন। এবারের নির্বাচনে বিজেপির জয় আশানুরূপ হয়নি মোটেও তবে নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর সাহায্যে তারা ক্ষমতায় এসেছে। বিজেপির সমর্থনেই নবমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার।
গত জুলাই মাসেই প্রশান্ত কিশোর জানান, ২ অক্টোবর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধির জন্মবার্ষিকীতে নিজের রাজনৈতিক দল শুরু করবেন তিনি। ২০২৪ এর শেষদিকে এসে এই নয়া রাজনৈতিক দলটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কারণ আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। আর প্রশান্ত কিশোর জানিয়ে দিয়েছেন জন সুরজ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। একদা তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন নীতীশ কুমার। সেই নীতীশের বিরুদ্ধেই এবার সরাসরি সংসদীয় রাজনীতির বিরোধিতায় নেমেছেন প্রশান্ত।
আরও পড়ুন- ২০১৪: মোদিকে যেভাবে মসনদে বসিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর
২০২২ সালের ২ অক্টোবর থেকেই জন সুরজ গড়ার ল প্রচারাভিযান শুরু হয়েছিল। বিহার জুড়ে পদযাত্রা করেছিলেন প্রশান্ত। এই পদযাত্রায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বেকারত্ব, বিহারের নাগরিকদের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়ে জনতার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন প্রশান্ত কিশোর।
মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালে লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে প্রশান্ত কিশোরের গভীর ভূমিকা ছিল। তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা, ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি, বা সংক্ষেপে I-PAC ২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জনতা দলকে (ইউনাইটেড) জেতায়। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া ঝড়ের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক জয়ের পিছনেও প্রশান্তেরই ভূমিকা ছিল। ২০২০ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় দিল্লিতে আম আদমি পার্টি এবং ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজগমের জয়ও নিশ্চিত করেন প্রশান্ত। ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ওয়াইএসআর কংগ্রেসের হয়েও প্রচার সফল করেন পিকে। এবার তিনি নিজেই ময়দানে। এবার নিজের দলের রণনীতি তৈরির পালা। নীতীশের পাল্টিবাজি রাজনীতির বাইরে গিয়ে, জন সুরজ কি বিহারের জনতার উন্নয়নের জন্য আদৌ কিছু করে উঠতে পারবে? ২০২৫ এ মিলতে পারে সম্ভাব্য উত্তর।