দু’দলই বলছে ‘মসনদে আমরাই’! কাকে জেতাবে জনতা?

Lok Sabha Election 2024: ইতিমধ্যেই দু'দলই সেরেছে জোর প্রস্তুতি। সবে কন্যাকুমারী থেকে ধ্যান করে ফিরেছেন মোদি। সোমবারই পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশ। স্বাভাবিক ভাবেই গত কয়েকদিন ঘুম ছিল না দেশের রাজনৈতিক দলগুলির। কাল ভোর হতেই ভোটগণনা শুরু। ইতিমধ্যেই দেশের অধিকাংশ বুথফেরত গণনা বলছে, তৃতীয় বার দেশের মসনদে বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদিই। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেতে চলেছে বিজেপির ঝুলিতেই। যদিও কংগ্রেস বারবার বলছে, এই সব বুথফেরত সমীক্ষায় তারা ভরসা রাখছে না আদৌ। দু'দিন আগেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানিয়েছেন, ২৯২টিরও বেশি আসনে জিততে চলেছে জোট ইন্ডিয়া-ই। কী হতে চলেছে আসলে, তা তো বলবে ৪ তারিখের ফলাফলই।

ইতিমধ্যেই দু'দলই সেরেছে জোর প্রস্তুতি। সবে কন্যাকুমারী থেকে ধ্যান করে ফিরেছেন মোদি। সোমবারই পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা-সহ অনেকেই। লোকসভা ভোটে দলের পারফর্মেন্স থেকে শুরু করে মঙ্গলবার ভোটগণনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় সেই বৈঠকে। এমনিতেই দেশের অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল সামনে আসার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে বিজেপির। যে চারশো পারের দাবি ভোট শুরুর আগে থেকে করে আসছে বিজেপি, তা যে অক্ষরে অক্ষরে মিলবে, তেমন আন্দাজ দিচ্ছে না সমীক্ষা। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে যেতে চলেছে তাঁদের কাছেই, তা নিয়ে দ্বিধাহীন প্রায় সমস্ত এক্সিট পোলই।

আরও পড়ুন: ফলঘোষণার আগে ১৫০ জেলাশাসককে প্রভাবিত করেছেন শাহ! কেন এ কথা বলছেন জয়রাম রমেশ?

এদিন বৈঠকে সাত দফা ভোটের প্রতিটি ধাপের ধরন নিয়ে আলোচনা হয়। ভোট গণনার ক্ষেত্রে সারা দেশে বিজেপির পোলিং এজেন্ট মোতায়েন নিয়েও আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে। জানা গিয়েছে দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সেক্রেটারিরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তবে সরকার গঠনের ব্যাপারে এ দিনের বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই খবর। লোকসভা নির্বাচনের পর্যালোচনার জন্যই বিশেষত আয়োজন করা হয়েছিল এই বৈঠকটিপ। পাশাপাশি ভোটগণনাকেন্দ্রগুলিতে দলীয় কর্মী মোতায়েনের ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়।

 

এদিকে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের ঠিক আগের দিন মোদির সঙ্গে দেখা করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। মধ্যিখানে এনডিএ থেকে বেরিয়ে গেলেও ভোটের আগেই ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান নীতিশ। সরকার গড়তে বিজেপির প্রয়োজন ২৭২ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তা একরকম হেসেখেলেই বিজেপি তুলে আনতে পারবেন বলে মনে করছে এক্সিট পোলের একটি বড় অংশ। এই সময় নীতীশের সঙ্গে মোদির বৈঠক ঠিক কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, সত্যিই বিহারের রাজনীতিতে বড়সড় বদল আনতে চলেছে কি লোকসভা নির্বাচন, উঠেছে প্রশ্ন।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশ বলে কথা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রস্তুতির শেষ নেই দলগুলির। এই ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে দেশের একাধিক অবিজেপি দল। সেই জোট ইন্ডিয়া কি সত্যিই টক্কর দিতে চলেছে বিজেপিকে? সেই প্রশ্ন থাকছেই। শনিবার সপ্তম দফার ভোট মিটতেই রবিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছিল ইন্ডিয়ো জোটের প্রতিনিধিরা। ইন্ডিয়া জোটের পর বিজেপি নেতারাও সোমবার দেখা করলেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। বিজেপির প্রতিনিধিদল সোমবার পৌঁছয় পোল বডি অফিসে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, ইউনিয়ন মিনিস্টার পীযূষ গয়াল, সঞ্জয় ময়ুখ, ওম পট্টনায়েক-সহ অনেকেই গিয়েছিলেন এদিন নির্বাচন কমিশনের অফিসে। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পীযূষ গয়াল, জানান কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোট ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টা করছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতাকে নষ্ট করার। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আক্রমণের নিয়মিত চেষ্টা করে চলেছে কংগ্রেস বলেও অভিযোগ তোলেন নির্বাচন কমিশন।

 

এদিকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে দেশের দেড়শো জন জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলার অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। ভোটের ফলপ্রকাশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানান তিনি। ভোটের ফলপ্রকাশ নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই ইন্ডিয়া জোটেরও। গত ১ জুনই ভোটে দলের পারফর্মেন্স পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করেছে জোট ইন্ডিয়া। বৈঠক বসেছিল জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ও পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি ছাড়া প্রায় সকলেই হাজির ছিলেন বৈঠকে।

আরও পড়ুন: শিবসেনা বনাম শিবসেনা! উদ্ববের দল ভাঙানোর পরে মহারাষ্ট্রে কত আসন পাবে এনডিএ?

ভোটের ফলপ্রকাশের আগে ব্যস্ততার শেষ নেই কংগ্রেসের। ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে ২৪, আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতর। খাটানো হয়েছে একাধিক তাবু। গরম তাড়াতে বিস্তীর্ণ ওই চত্বর বসেছে বিশাল বিশাল সব কুলার। নিজেদের জয় নিয়ে ইতিমধ্যেই আশাবাদী ইন্ডিয়া জোট। সেই নিয়ে বিপক্ষকে চাপে রাখতেই চাইছে ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেস। তবে বিজেপি যে তাতে খুব একটা দুশ্চিন্তায়, তেমনটাও মনে হচ্ছে না। আগামী কাল ভোটগণনার পরেই বৈঠকে বসার কথা রয়েছে জোট ইন্ডিয়ার। গোড়া থেকেই জোটের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে একমত হতে পারেননি মমতা। বারবার দলীয় বৈঠকের আমন্ত্রণও এড়িয়েছেন। তবে আশা করা যাচ্ছে, কালকের বৈঠকেই ঠিক হয়ে যাবে জোট ইন্ডিয়ার পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ও পদক্ষেপ। আদৌ জোটের সঙ্গে থাকবেন মমতা, নাকি একাই চলবেন তাঁর রাজনীতির পথে, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে মঙ্গলেই। 

More Articles