প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি! ইন্দিরা, সনিয়ার পর পারবেন রায়বরেলি ধরে রাখতে?
Priyanka Gandhi Raebareli Seat: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এই রায়বরেলি আসনেই তিনবার জিতেছিলেন৷ সনিয়া জিতেছেন চারবার, এবার মেয়ের পালা?
ভোটের প্রচারে তিনি থেকেছেন হামেশাই। শক্ত হাতে ধরেছেন ভাইয়ের হাত। শক্তভাবে মনোবল সামলেছেন দলের কর্মী সমর্থকদের। এবার সারাদেশেই মোদি বিরোধী ঝড় তোলার চেষ্টায় কংগ্রেস মরিয়া। দলের এই মরিয়া লড়াইয়ে আর নেপথ্যে থেকে নয়, সরাসরি মাঠে নামতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা! সম্ভবত উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি রায়বেরেলি থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে আত্মপ্রকাশ করবেন প্রিয়াঙ্কা। উল্লেখ্য, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এই রায়বরেলি আসনেই তিনবার জিতেছিলেন৷ মহিলা ভোট টানতে আর যুবপ্রতিনিধিকে সামনে আনতেই কংগ্রেসের এই বড় কৌশল। বিজেপিতে মহিলা নেতৃত্বের অভাব রয়েছে যথেষ্ট। অন্যদিকে ইন্দিরা, সনিয়ার উত্তরাধিকার রয়েছে প্রিয়াঙ্কার মধ্যেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে বরাবরই এগিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে, সেই রাজ্যে কংগ্রেসের অন্য শক্ত ঘাঁটি, আমেথিতে ফের ভোটে দাঁড়াতে পারেন রাহুল গান্ধি। ২০১৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন রাহুল। তবে রাহুল কেরলে তাঁর বর্তমান ওয়ানাড় আসন থেকেও লড়বেন।
প্রতি নির্বাচনেই ভাবা হয়, এবার বুঝি প্রিয়াঙ্কা গান্ধি দলের হাল ধরতে মাঠে নামলেন। কোনওবারই সরাসরি ভোটে লড়েননি তিনি। এবার, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বড় আসন থেকে লড়তে চলেছেন সম্ভবত তিনি। প্রিয়াঙ্কার মা, প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান সনিয়া গান্ধি বলেছিলেন, ২০১৯ সহ অতীতে পাঁচবার এই আসনে জিতেছেন তিনি। ফের রায়বরেলি থেকে নির্বাচনে লড়বেন না তিনি। গত নির্বাচনে তিনিই ছিলেন একমাত্র কংগ্রেস নেত্রী যিনি উত্তরপ্রদেশের লোকসভা আসনে জয়ী হন। এবারের লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন স্থানেই মহিলা ভোটকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আর কংগ্রেস রায়বরেলিতে প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করার মাধ্যমে আসলে সারা দেশের মহিলা ভোটকেই কংগ্রেসমুখী করতে চাইছে।
আরও পড়ুন- রাহুল অতীত? এবার দেশে কংগ্রেসের মুখ কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধিই?
২০০৪ সাল থেকে রায়বরেলি আসনে জিতে এসেছেন সনিয়া গান্ধি। ২০০৪ সালে সমাজবাদী পার্টির অশোক কুমার সিংকে হারিয়ে জেতেন সনিয়া। ২০০৬ সালের উপনির্বাচনেও জেতেন সনিয়া। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টির আর এস খুশওয়াহাকে হারিয়ে জেতেন সনিয়া। আর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে বিজেপির অজয় আগরওয়াল আর দীনেশ প্রতাপ সিংকে হারিয়েও জেতেন সনিয়া।
তার বহু আগে, ১৯৫২ সালের প্রথম নির্বাচনে এই আসনে জিতেছিলেন ফিরোজ গান্ধি। ১৯৬৭, ১৯৭১ আর ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে জেতেন ইন্দিরা গান্ধি। রায়বরেলি লোকসভা আসনের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি বিধান্সভা কেন্দ্র। বাচরাওয়ান, হরচাঁদপুর, রায়বরেলি, সরেনি আর উনচাহার। এর মধ্যে একটি বিধানসভাও কংগ্রেসের দখলে নেই। তিনটি সমাজবাদী পার্টির আর দু'টি বিজেপির।
সনিয়া গান্ধি লোকসভা থেকে রাজ্যসভায় চলে যাওয়ার পরে সাধারণ নির্বাচনের আগে দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল আগেই৷ ঠাকুমা, মায়ের পর এবার মেয়ে। নিঃসন্দেহে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের তরফে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এটি। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে প্রতিনিয়তই ঠাকুমা ইন্দিরার তুলনা করা হয়। প্রিয়াঙ্কার চেহারা, মেজাজ, প্রকাশে ইন্দিরাকে আজও খুঁজে পান অনেকেই।
আরও পড়ুন- রাহুল আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সম্পর্ক আসলে কেমন? যা প্রমাণে মরিয়া বিজেপি…
রাহুল বনাম স্মৃতি ইরানির লড়াই আবার হতে চলেছে আমেথি থেকে। ২০১৯ সালে, স্মৃতি ইরানি রাহুলকে ৫৫,০০০ ভোটে হারিয়েছিলেন। স্মৃতি এখনই আশাবাদী যে আমেথিতে রাহুলের আর ঠাঁই হবে না। “২০১৯ সালে তিনি আমেথি ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমেথি তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। যদি তিনি আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে, ওয়ানাড়ে না গিয়ে আমেথি থেকে লড়ুন,” চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন স্মৃতি। রাহুল সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারবেন কিনা তা জানা এখন সময়ের অপেক্ষা।
বিজেপি এখনও রায়বরেলিতে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিজেপি দীনেশ প্রতাপ সিংকে প্রার্থী করেছিল। তিনি ১.৮ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন সনিয়ার কাছে। স্মৃতি ইরানি যে আমেথি আসনেই লড়বেন তা নিশ্চিত। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে চরম গুরুত্বপূর্ণ উত্তর প্রদেশের রায়বরেলিতে কে দাঁড়াবে বিজেপির হয়ে এই সিদ্ধান্তের উপর বিজেপির উত্তরপ্রদেশে ভোট ধরে রাখার বড় অঙ্ক নির্ভর করছে।