আরজি কর কাণ্ডে বিচারের দাবি, দেবীপক্ষেও প্রতিবাদের যে ঢেউ উঠল মহানগরে

RG Kar Protest: শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই দেবীপক্ষের সূচনাকালে আর জি কর মেডিক্যালের নিহত চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে সরব হন।

দেবীপক্ষের সূচনার রাতে ফের মহানগর পথে নেমেছিল আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে। সেই দ্রোহের উৎসবে সামিল হয়ে রাজপথের দখল নেয় নাগরিক সমাজ। প্রায় ৬০টির বেশি সংগঠনের ডাকে পিতৃপক্ষের শেষ দিনে আরজি করের চিকিৎসক খুনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন মানুষ। দাবি ওঠে বিচারের।

মঙ্গলবার জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরর্স-সহ ৬০ টির বেশি সংগঠনের ডাকে কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্রসদন পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তার মহামিছিল করা হয়েছিল। ডাক্তারদের দাবি, আরজি কর কাণ্ডে জড়িত সকল অপরাধীদের বিচার চাই- শাস্তি, প্রমাণ লোপাটে যুক্ত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, নারী নিরাপত্তা, নারী স্বাধীনতা, নারীর সমান অধিকার, 'থ্রেট কালচার' ও দমনপীড়ণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ এবং হাসপাতালগুলিতে বেনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া সিন্ডিকেট রাজের অবসানের দাবিতেই এদিনের মিছিলের আয়োজন করা হয়। নজিরবিহীনভাবে এই অরাজনৈতিক মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা ৷

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কল্লোল মজুমদার-সহ একাধিক বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন দলীয় রংকে সরিয়ে রেখে ৷ এমনকি এই মিছিলে মাঝপথে যোগ দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও ৷ অন্যদিকে, আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও মিছিলে অংশ নেন ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পতাকা ছেড়ে মিছিলের শেষের দিকেই হাঁটলেন ৷ তবে, মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে দাবি এবং স্লোগান উঠেছে, তাতে গলা মেলালেন তাঁরা ৷

আরও পড়ুন: পুজোর মুখে ফের কর্মবিরতি! এবার কোন ১০ দফা দাবি নিয়ে এলেন জুনিয়র ডাক্তাররা?

গত ১৪ অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচীর সময় আরজি কর কলেজে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। দেবীপক্ষের আগের রাতেও ফের তেমনই ঘটনা ঘটল কলকাতায়। এবার কাঠগড়ায় খোদ তৃণমূল কাউন্সিলর। মঙ্গলবার শহর জুড়ে বিরাট মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত সে মিছিল তো হয়েছেই, পাশাপাশি আরও একাধিক জায়গায় রাত পর্যন্ত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এমনই একটি কর্মসূচি হয়েছিল টালিগঞ্জের করুণাময়ীতে। নাগরিক সমাজের সেই মিছিলেই হামলা করা হয়েছে বলে দাবি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর (১১৫ নম্বর ওয়ার্ড) রত্না শূরের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিবাদীরা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, করুণাময়ী বাজারের ভিতরে অন্তত ১০০ জনের জমায়েত ছিল রাতে। তারাই বেরিয়ে এসে হামলা করে। ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত না হলে এত রাতে বহু সংখ্যক লোকের জমায়েত কোনও জায়গায় হতে পারে না। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, কাউন্সিলরের কথা মতোই তারা জমায়েত করে পরিকল্পনামাফিক এই হামলা করেছে। মিছিলে থাকা মহিলা, শিশুদেরও মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি অনেকের ফোন ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি। এই ঘটনার কিছু ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়েছে। যদিও তার সত্য়তা যাচাই করা যায়নি। শুধু কলকাতাই নয়, কোচবিহার, নৈহাটির মতো বহু জায়গাতেই আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

ডাক্তারদের মিছিলের পাশাপাশি মঙ্গলবার পথে নেমেছিল মেয়েদের রাত দখলের ডাক দেওয়া মহিলা সংগঠন। এর পাশাপাশি যৌন কর্মী, রূপান্তরকামী, বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের সমর্থকরাও এদিনের মিছিলে পা মেলান। ডাক্তারদের পাশাপাশি একাধিক নাগরিক সমাজের তরফেও এদিন মিছিলের আয়োজন করা হয়। কলকাতার প্রতিবাদের সুর ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হুগলি জেলার চন্দননগরের বাগবাজার মোড়ে একটি নাগরিক সংগঠনের ডাকে এক ঘণ্টা অবস্থান বিক্ষোভ হয়। আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় চন্দননগরে গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে প্রদীপ ভাসিয়ে নির্যাতিতার আত্মার শান্তিকামনা করার ডাক দিয়েছে একটি সংগঠন। এদিকে, বুধবার ভোর ৫টায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে বৈদ্যবাটির নাগরিক সংগঠন। শ্রীরামপুরে বুধবার ‘ভোর দখল’-এর ডাক দিয়েছেন নাগরিকেরা।

একই দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয় হরিনাভি মোড়ে। সমাবেশে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে নিহত চিকিৎসকের প্রতীকি ছবি আঁকেন সনাতন দিন্দা। যত দিন না সুবিচার ও মিলছে তত দিন লড়াই জারি রাখার শপথ নেওয়া হয় সমাবেশে। দোষীদের শাস্তি ও সরকারি ক্ষেত্রে থ্রেট কালচার বন্ধের দাবিতে এদিন শিয়ালদা থেকে শ্যামবাজর পর্যন্ত মিছিল করে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও। মিছিলে অংশ নেন কামদুনির প্রতিবাদী মুখ টুম্পা কয়াল। ঢাকের আওয়াজে, গান, স্লোগান, পথনাটিকার মাধ্যমে শহরের নানান প্রান্তে রাত দখল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। বহু জায়গায় প্রতিবাদে অংশ নেন তারকরাও। যাদবপুর এইট বি, গড়িয়াহাট, রুবি মোড়, কলেজ স্কোয়ার, সিঁথি, নাগেরবাজার, এয়াপোর্ট ১ নম্বর গেট, হাডকো মোড় এই সমস্ত জায়গায় মহালয়ার আগের রাতে চলে প্রতিবাদ। প্রতিবাদের ছবি দেখা যায় জেলাতেও। বারাসাত, বনগাঁ, দুর্গাপুর, মহালয়ের দিনও মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ফের রাজপথ দখল। চিকিৎসক থেকে শিল্পী-মহাসমাবেশে পা মেলালেন প্রবীণরাও। দেবীপক্ষের সূচনাকালে রাত দখলেরও ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকের আওয়াজ, গান, স্লোগান, পথনাটিকার মাধ্যমে শহরের নানান প্রান্তে রাত দখল ও প্রতিবাদ সভা চলল প্রায় ভোররাত পর্যন্ত। স্লোগান উঠল, 'তিলোত্তমা যেদিন বিচার পাবে, সেদিন উৎসব হবে।'

শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই দেবীপক্ষের সূচনাকালে আর জি কর মেডিক্যালের নিহত চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে সরব হন। মিছিলে হাঁটেন অনেক বয়স্ক চিকিৎসকও। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের চিকিৎসক ও সদস্য তমোনাশ চৌধুরী বলেন, 'পুজোর কদিন শ্যামবাজার এবং সোদপুর অবস্থান ধর্না মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসবেন চিকিৎসকরা'। এই মিছিলে সংগঠনের ব্যানার থাকলেও ছিল না কোনও রাজনৈতিক পতাকা। তবে এদিনের মিছিলে যোগ দেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। বিচারের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক রং ভুলে জাতীয় পতাকার পাশেই এক হয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাঁদের। রবীন্দ্র সদনের মুক্ত মঞ্চে হাজির ছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বেহালায় অভয়ালয়া। রাস্তার ধারে মানববন্ধন প্রতিবাদীদের। সবার হাতে উড়ল জাতীয় পতাকা। পুজোয় আছি, উৎসবে নেই, একসুরে গর্জে উঠলেন প্রতিবাদীরা। পথে পথে বাজল শাঁখ। স্লোগানে স্লোগানে চলল পথে পথে প্রতিবাদ। মহিলারা এসেছিলেন সাদা-শাড়ি লাল পাড় পরে। পোশাকের রঙমিলান্তি যেন বুঝিয়ে দিল, সবাই এক পথে আছেন, একসঙ্গে আছেন। স্লোগান উঠল, 'উৎসব কবে হবে? আমার দুর্গা বিচার পেলে'। কেবল বেহালা নয়, শহরের একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করেছিল বিভিন্ন সংস্থা। তবে কোনও সংস্থারই কোনও রাজনৈতিক রং ছিল না। সাধারণ মানুষেরাই সম্মিলিত হয়ে নেমেছিলেন পথে। প্রতিবাদ দেখা গেল গড়িয়াতেও।


মহালয়ার দিনেও ডাক্তারদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করার কথা রয়েছে তাঁদের। ধর্মতলায় একটি সভা করার কথা রয়েছে। ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতো জানিয়েছে, ২ অক্টোবর মিছিল করা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থির রয়েছে। পুজোর মাঝেও যে প্রতিবাদ, আন্দোলন ও ন্যায় বিচারের দাবি উঠবে, তা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা ৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও মানুষ একই দাবিতে রাস্তায় আছেন। ন্যায় বিচার পেতের রাস্তাকেই মানুষ বেছে নিয়েছেন। বিকল্প উপায় নেই। যতক্ষণ না সঠিক এবং ন্যায়বিচার পাওয়া যাচ্ছে সাধারণ মানুষ ছাড়বে না ধারাবাহিকভাবে বিচারের দাবি উঠবে। যারা উৎসব এবং ন্যায় বিচারের দাবিকে গুলিয়ে দিতে চাইছে তারাও জেনে রাখুন এভাবে ন্যায় বিচারের আন্দোলনকে দমানো যাবে না।"

সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক তথা আইএসএফ চেয়ারম্যান বলেন, "ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সমস্ত ধর্মের বর্ণের মানুষ আজকের মিছিলে পা মিলিয়েছেন। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ আরজিকরের বোনের বিচার চাইছেন। আদ্যপান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও আমিও সেই মিছিলে পা মিলিয়েছি। কারণ, আমাদের ও নাগরিক সমাজের একই দাবি - ন্যায়বিচার। তা না-পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, "রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে দুর্নীতি এবং থ্রেট কালচার চলছে, তা এই আন্দোলনের কারণেই প্রকাশ্যে এসেছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির কারণেই আরজি করের বোনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে, তাঁর ন্যায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত চলবেই।"

ইতিমধ্যেই ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলন জোরদার করার ডাক দিয়েছেন তাঁরা। পুজোর সময় আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা। এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত জানাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্ট’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আংশিক ভাবে কাজে ফিরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ১০ দিন কাজ করার পর ফের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণা। সরকার পক্ষের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন তাঁরা। দাবি পূরণে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে পূর্ণ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চ।

এদিকে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ চেয়ে গোটা শহর যখন রাস্তায়, তখন পিতৃপক্ষের শেষ দিনেই শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ে গিয়ে উৎসবের সূচনা করে দিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও মাতৃপক্ষ পড়েনি বলে মণ্ডপ বা প্রতিমা উদ্বোধন করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই মঞ্চ থেকেই রাজ্যের দুটি নতুন দমকল কেন্দ্র এবং পঞ্চাশটি ফায়ার ব্রিগেডের বাইক উদ্বোধন করেন মমতা। সকলকে যার যার মতো উৎসবের সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরেন সেই মঞ্চ থেকেই। যদিও আরজি করের ঘটনা নিয়ে সেই মঞ্চ থেকে তেমন কিছু বলতে শোনা গেল না মুখ্যমন্ত্রীকে।

আরও পড়ুন:ওঁর দু’চোখ জোড়া স্বপ্ন রক্ত হয়ে ঝরতে দেখেছি: আরজি কর কাণ্ডে মৃতার মা-বাবা

তবে মুখ্যমন্ত্রী না বললেও শহর তো বটেই, এমনকী জেলার বহু পুজো উদ্যোক্তারাই পুজোর আবহে ধরে রেখেছেন প্রতিবাদের সুর। আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে, দেবী পক্ষের সূচনায় অশোকনগরে মেয়েদের ডাকে তিলোত্তমা মৃত্যুর বিচার চেয়ে মহালয়া পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। অশোকনগর চৌরঙ্গী মোড় থেকে এই প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয় শেষ হয় কল্যাণগড় বাজারে এসে। মিছিলে কারওর হাতে ছিল কাশ, কেউ বাজান শঙ্খ,আবার কারোর হাতে ছিল শাপলা ফুল। মিছিলের একেবারে শুরুতে ছিল ঢাকির দল। অভয়ার বিচার চেয়ে কালো শাড়ি পরে কালো বেলুন হাতে ৫৪ টি প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে মহালয়ার সকালে পথে নামল শশধর গাঙ্গুলী রোড সর্ব্বোজনীন দুর্গাপূজা কমিটি। মহিলারা কালো শাড়ি পরে, মাথায় উই ওয়ান্ট জাস্টিস লেখা কালো ফেট্টি বেঁধে ৫৪ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ৫৪টি কালো বেলুন হাতে নিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানান। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহালয়ার ভোর থেকে অভয়ালয়া কর্মসূচি। অভয়ার স্মরণে জ্বালানো হয় ৫৪ টি প্রদীপ। মহালয়ার দিন থেকে জেলা পুরুলিয়াতে শুরু হলো অভিনব প্রতিবাদ। পূজোর পাঁচ দিনই চলবে প্রতিবাদ কর্মসূচি। এই পুজোর মন্ডপটিও উৎসর্গ করা হয়েছে অভয়ার নামে। তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে বুধবার মহালয়ার সকালে হাবড়া যশোর রোডে প্রতিবাদ পদযাত্রা করলেন স্থানীয়রা।

এদিকে আরজিকর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এ বছর দুর্গা পুজোয় সরকারের অনুদান প্রত্যাখ্যান করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত দাসপুরের সাগরপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। রাজ্য সরকারের দেওয়া পুজোর জন্য অনুদান ৮৫ হাজার টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। শ্রীভূমি ক্লাবের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি ৪৮-৫০ হাজার ক্লাবকে অনুদান দিয়েছি। এটাকে অনুদান বলি না, বলি উৎসাহ দান। অনেকে বলছেন, ৮৫ হাজার টাকায় কী হবে? তোমাদের কাছে ৮৫ হাজার টাকার দাম নেই, প্রচুর টাকা বাজেট। কিন্তু অনেকেরই কাছেই এর দাম আছে। আবার বিদ্যুতের ৭৫ শতাংশ দাম বাদ দিলে অনেকটাই টাকা কমে যায়।’ যদিও আরজি করের ঘটনার আবহে সেই 'উৎসাহ-দান' ফিরিয়েই নজির গড়েছে ঘাটালের এই পুজো কমিটি।

সব মিলিয়ে দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন থেকেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে শহর থেকে শুরু করে জেলা। সেই আন্দোলনের জের কি চলবে পুজোর মধ্যেও, নাকি থিতিয়ে পড়বে জোয়ার, সেটাই দেখার।

More Articles