সঙ্কট চরমে! চিকিৎসক সংগঠনের ডাকে এবার বন্ধ রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের আউটডোরও
Doctor Protest: বুধবার আট ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে তারা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি নয় এমন পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে ওই চিকিৎসক সংগঠন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরেই নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের এক ট্রেনি চিকিৎসককে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য, দেশ। শুক্রবারের ওই ঘটনার পর থেকেই কর্মবিরতির ডাক দেন আরজি কর কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। ক্রমে রাজ্যজোড়া বিক্ষোভের চেহারা নেয় পরিস্থিতি। কলকাতার তো বটেই, শনিবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। অধিকাংশ জায়গাতেই খোলা শুধু জরুরি বিভাগ। জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতিতে। কোনও মতে দু-এক জন সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়ে চলছে হাসপাতাল। এই পরিস্থিতিতে বিপাকের মুখে পড়েছেন অসংখ্য রোগী। আউটডোরে দেখাতে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। বহু অসুস্থ মানুষই চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এদিকে, দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রায় সমস্ত হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরই মধ্যে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যের সব হাসপাতালের বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধের ডাক দিল চিকিৎসক সংগঠন। তার মধ্যে যেমন রয়েছে সরকারি, তেমনই রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালও।
আরজি করের মর্মান্তিক ওই ঘটনার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে বিক্ষোভের ঢেউ। দিল্লির এইমস-সহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশেও চিকিৎসকদের একাংশ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। কোথাও কোথাও করা হয়েছে মোমবাতি মিছিলও। ‘বিচার চাই’, পোস্টার হাতে হাসপাতালগুলির চত্বরে বিক্ষোভে শামিল হন চিকিৎসকদের একাংশ। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন কার্যকর করার দাবিও শোনা যাচ্ছে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মুখে। সোমবার থেকে দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কর্নাটক সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। দেশের রাজধানী দিল্লির ১০ টি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মবিরতিতে নেমেছেন। রবিবারই ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল, সোমবার দেশের হাসপাতাগুলিতে একাধিক পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, শুধু ২৪ ঘণ্টা নয়, অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: আগেও আরজি করে চিকিৎসক-মৃত্যু! এর মধ্যেই কেন ভাঙাভাঙি ‘অভিশপ্ত’ সেই জরুরি বিভাগে?
এরই মধ্যে বুধবার রাজ্য জুড়ে বুসব ক’টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ওপিডি পরিষেবা বন্ধের ডাক দিয়েছে রাজ্যের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে জরুরি নয় এমন সব পরিষেবাও বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আরজি করের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় ওই ট্রেনি চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তের পরে জানা যায়, তাঁকে নির্মম ভাবে ধর্ষণ এবং খুন করা যায়। ওই ঘটনায় এক সিভিক পুলিশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সেই ঘটনায় ভিতরের কেউ কার্যত আরও বড় কোনও মাথা জড়িত বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ইস্তফা দিয়েছেন আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও। যদিও সেদিন বিকেলেই তাঁকে অন্যত্র ট্রান্সফার করে স্বাস্থ্যভবন। মঙ্গলবার প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এরই মধ্যে সোমবার থেকে ভাঙাভাঙি শুরু হয় আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের ওই সেমিনার রুম সংলগ্ন একটি অংশে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানে শৌচাগার তৈরি করা হবে। যদিও সোমবারই ওই ঘর ভাঙার কাজ থমকে যায় জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপে। কারণ, আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সোমবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন কমিশনের কয়েক জন প্রতিনিধি। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেওয়াল ভাঙা হচ্ছে দেখে সেই কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। ওই ঘর ভাঙা এবং সংস্কারের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও।
এমন এক সময়ে ঘটনাস্থলের পাশে ভাঙাভাঙিকে কেন্দ্র করে নতুন করে অশান্তি দানা বেঁধেছে। আন্দোলনরত পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের দাবি, প্রমাণ লোপাটের জন্যই এসব করা হচ্ছে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস-এর দাবি, সেই কারণেই বুধবার আট ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে তারা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি নয় এমন পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে ওই চিকিৎসক সংগঠন। ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারও বুধবার ওই আট ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার কথা বলেছে তারা।
আরও পড়ুন:ইস্তফার পরেও কেন অন্যত্র নিয়োগ? আরজি কর কাণ্ডে প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
সংগঠনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “আজ যখন শুনলাম আরজি করের বক্ষরোগ বিভাগে সংস্কারের নামে ভাঙা হচ্ছে, আমরা নিশ্চিত প্রমাণ লোপাটের যে আশঙ্কা করেছিলাম তা দৃঢ় হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা সমস্ত সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ও ব্যক্তিগত চেম্বারে আগামিকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বহির্বিভাগ ও অ-জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি।” সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক পুন্যব্রত গুন জানিয়েছেন, “আজ হাই কোর্টের নির্দেশে সন্দীপ ঘোষকে লম্বা ছুটিতে যেতে হয়েছে। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে যতক্ষণ না অপরাধী ধরা পড়ছেন, ততক্ষণ চাপ তৈরির জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের থাকা দরকার।”
এমনিতেই আরজি কর কাণ্ডের পরে গোটা রাজ্যেই দুর্ভোগে রোগীরা। এবার সেই আঁচ ছড়িয়েছে দেশের আনাচেকানাচেও। এর মধ্যে বুধবার জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরসের ডাকা কর্মবিরতি ও আউটডোর বন্ধ রাখার ডাকে সেই সঙ্কট আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।