মহিলাদের বছরে ১ লাখের প্রতিশ্রুতি রাহুলের! নগদ ছাড়া কি ভারতের ভোটব্যবস্থা অচল?

Rahul Gandhi: রাহুল গান্ধি বলছেন, মোদি সরকার দেশে ২২ জন বিলিয়নিয়ার তৈরি করেছে। কিন্তু কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে, তবে লক্ষাধিক মানুষ 'লাখপতি' হতে পারবেন।

ভোট পেতে হলে প্রতিশ্রুতি দিতেই হবে। তবে গত এক দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতির ধরন তুমুল বদলে গেছে। একটা সময় অবধি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলিই পূরণের বা সেই মৌলিক চাহিদার অধিকার নিশ্চিত করার কথাই বলতেন নেতারা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা, পানীয় জল, আবাস ছিল ভোটে মানুষের মন জেতার কৌশল। এখন নগদ টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে দেওয়া প্রতিশ্রুতিই রয়েছে নির্বাচনী রাজনীতির কেন্দ্রে। ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা, ১ লক্ষ টাকা যে যেমন পারে নগদ টাকা দরিদ্রের হাতে (থুড়ি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে) তুলে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কংগ্রেস ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রায় শেষ পর্বে এসে এমনই এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মহিলা ভোট টানতে। রাহুল গান্ধি বলছেন, ইন্ডিয়া জোট লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হলে দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের অ্যাকাউন্টে বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।

রায়বরেলিতে লড়ছেন রাহুল গান্ধি। উত্তরপ্রদেশের এই আসনের পাশাপাশি কেরলের ওয়ানাড থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাহুল। রায়বরেলিতে একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে রাহুল গান্ধি বলেন, "১ জুলাই, যখন দরিদ্র মহিলারা তাদের অ্যাকাউন্ট চেক করবেন, তখন তারা দেখতে পাবেন যে ৮,৫০০ টাকা ম্যাজিকের মতো জমা হয়েছে এবং এটি প্রতি মাসের প্রথম তারিখে ঘটবে৷"

আরও পড়ুন- ১৮০-র বেশি আসন পেরোতে পারবে না বিজেপি! কেন এমন বলছেন রাহুল গান্ধি?

কংগ্রেসের ইস্তেহার অনুযায়ী, দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের 'মহালক্ষ্মী প্রকল্পের' অধীনে প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। মহিলাদের আর পিছু ছাড়ে না লক্ষ্মী! কোথাও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো কোথাও মহালক্ষ্মী প্রকল্প। মোদ্দা কথা মহিলাদের ভোট টানতে কোথাও মাসিক ৫০০ টাকা, যা বাড়িয়ে ১০০০ করার প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যেই দিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার, কোথাও আবার মহালক্ষ্মী প্রকল্প, যার বলেই ২০২৪ সালের লোকসভা তরণী পার হতে চাইছে কংগ্রেস।

এর আগে, রাহুল গান্ধি দলীয় ইস্তেহারে উল্লিখিত দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রতিশ্রুতিও মনে করিয়ে দিয়েছেন। রাহুল স্পষ্ট বলছেন, "আপনি যদি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকেন, তাহলে প্রতি বছর ১ লাখ টাকা নিয়মিত অ্যাকাউন্টে আসতেই থাকবে আর এক ঝটকায় দেশ থেকে দারিদ্র দূর করে দেব আমরা।" তবে বিষয়টা যে এত সহজ নয় তা পরে উল্লেখ করে রাহুল এও বলেছেন যে, তিনি একবারে রাতারাতি দারিদ্র্য দূর করার প্রস্তাব দিচ্ছেন না বরং সেই লক্ষ্যের দিকে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।

রাহুল গান্ধি বলছেন, মোদি সরকার দেশে ২২ জন বিলিয়নিয়ার তৈরি করেছে। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে যদি তাঁর দল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, তবে লক্ষাধিক মানুষ 'লাখপতি' হতে পারবেন। রায়বরেলির ভোট নিশ্চিত করতে সেখানে জনসভায় রাহুল বলছেন, ৪ জুন ভারতের সমস্ত দরিদ্রদের একটি তালিকা করা হবে। প্রতিটি পরিবার থেকে একজন মহিলার নাম নির্বাচন করা হবে এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ জমা করা হবে। এভাবেই মোদির ২২ জন কোটিপতির জবাবে লক্ষ লক্ষ 'লাখপতি' তৈরি করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রাহুল।

আরও পড়ুন- মোদির ‘বিকশিত ভারতে’র দাবি আদৌ সত্য? আসলে যেখানে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনীতি

শিক্ষিত বেকার, যারা ডিপ্লোমা করেছেন বা স্নাতক, তাঁদের এক বছরের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন রাহুল। তাদেরকেও প্রতি মাসে ৮,০০০ টাকা দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। রাহুলের হিসেবে, কংগ্রেসকে ১টা ভোট মানে তরুণদের জন্য প্রতি বছর ১ লাখ টাকার প্রথম চাকরির নিশ্চয়তা। ১ টা ভোট মানে ১ লাখ টাকা প্রতি বছর দরিদ্র মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

মানুষের জন্য কাজ করা শেষমেশ ভাতা আর পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতেই যে এসে ঠেকেছে তা প্রমাণ করে দিচ্ছে নাকি কংগ্রেসও। মোদির বিরোধিতা করতে গিয়ে নগদ টাকার জনগণের হাতে দেওয়ার খেলায় ভোটবাক্স ভরে কি? ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাহুল আমেঠির সাংসদ ছিলেন। এবার কংগ্রেস রাহুল গান্ধিকে রায়বেরেলি থেকে এবং কেএল শর্মাকে আমেঠি থেকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। চাকরি-শিক্ষা-স্বাস্থ্যর কথা কংগ্রেস বলছে ঠিকই, তবে নগদ টাকা না দিলে যে ভোট হাতে রাখা যায় না, তা কি কোথাও মেনে নিচ্ছে কংগ্রেস? গণতন্ত্রের কবরে শেষ পেরেক নয় তো বিরোধীদের এই প্রতিশ্রুতি?

More Articles