‘‘INDIA জোট ক্ষমতায় এলেই... ’’ যে যে প্রতিশ্রুতি দিলেন রাহুল
Lok Sabha Election 2024: ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে দেশে ইন্ডিয়া জোটের তরফে একগুচ্ছ বদল আনার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। রাঁচির শহীদ ময়দানে সমাবেশে এসে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে ঘোষণা করে দিলেন রাহুল।
শিয়রে লোকসভা ভোট। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার পেশ করে ফেলেছে অন্তর্বর্তী বাজেট। তবে ভোটের আগে তাতে বিশেষ আশার আলো দেখতে পায়নি জনগণ। তবে সেই পথে হাঁটছে না বিজেপিবিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'। সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৪ ভোটে এতটাই আত্মবিশ্বাসী, যে ভোটারদের টানতে প্রতিশ্রুতির মালা তেমন করে আর গাঁথছে না বিজেপি সরকার। আর সেখানে উল্টোটাই করছে 'ইন্ডিয়া' জোট। ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে দেশে ইন্ডিয়া জোটের তরফে একগুচ্ছ বদল আনার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি।
ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে ঝাড়খণ্ডে রাহুল গান্ধি। দু'দিন আগেই সেখানে আস্থাভোটে জিতে ফের সরকার গড়তে সক্ষম হয়েছে জেএমএম-আরজেডি-কংগ্রেস জোট। জেএমএমের প্রবীণ নেতা চম্পাই সোরেনের হাতেই থাকছে মুখ্যমন্ত্রীত্ব। লোকসভা ভোটের আগে সে রাজ্যে বিজেপিবিরোধী জোটের হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি ছিল প্রবল, যেমনটা দিন কয়েক আগেই ঘটেছে বিহারে। পাল্টি খেয়ে সোজা এনডিএ জোটের হাত ধরেছেন নীতীশ কুমার। যার প্রভাব সামান্য হলেও পড়েছে ইন্ডিয়া জোটে। তার উপর তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন নিজের রাজ্যে একা লড়ার কথা। সেই পথেই হাঁটতে চেয়েছে আম আদমি পার্টি পঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও। এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোটের ভিটেমাটি আলগা হতে দেখা যাচ্ছে ক্রমশ। যদিও কংগ্রেসের তরফে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে, জোটের ঐক্যমত বজায় রাখার। অন্তত তার ফুটিফাটা অবস্থাটা যাতে মানুষের সামনে না আসে, তা লুকিয়ে রাখতে কোনও কসুর বাকি রাখছেন না কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা। জয়রাম রমেশের মতো প্রবীণ নেতারা বারংবার দেখানোর চেষ্টা করেছেন, নীতীশের পাল্টির কোনও প্রভাব পড়ছে না জোট ইন্ডিয়া-তে।
আরও পড়ুন: মালদহে জয় ‘মহব্বতে’রই , ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাংলাকে ডাক রাহুলের
কিছুদিন আগেই বাংলা সফর শেষ করেছে রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। প্রথম পর্বে অসম হয়ে বাংলায় ঢুকলেও দিল্লি উড়ে যেতে হয়েছিল রাহুলকে। দু'দিনের বিরতি নিয়ে ফের জলপাইগুড়িতে শুরু হয় যাত্রা। সেখান থেকে বিহার হয়ে রাহুলরা ফের ফেরেন বাংলায়। মালদা এবং মুর্শিদাবাদ হয়ে সেখান থেকে বীরভূমে গিয়েছিলেন রাহুলরা। বাংলায় যাত্রার সময়েও বারবার জাতিশুমারির কথা উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেতা। জাতিশুমারির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও ভাষণ দেন তিনি। এবার ঝাড়খণ্ডের মাটি থেকেও একই কথা শোনা গেল রাহুল গান্ধির মুখে। তবে এবার আর শুধু আলোচনা নয়। সোজাসাপ্টা প্রতিশ্রুতিই দিয়ে বসলেন রাহুল ইন্ডিয়া জোটের হয়ে। জানিয়ে দিলেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলেও জাতিশুমারি বা জাতগণনা হবে। এবং সেই প্রক্রিয়ার পরে জাতিভিত্তিক সংরক্ষণের হার ৫০ শতাংশের আওতা থেকে সরিয়ে আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি।
গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছেন রাহুল গান্ধী। এবার তার সঙ্গে জুড়েছে 'ন্যায়' শব্দটি। 'নফরৎ কি বাজার মে মহব্বত কি দুকান' স্লোগান নিয়ে হিংসাদীর্ণ মণিপুর থেকেই ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছিলেন রাহুলরা। সেখান থেকে অসম হয়ে বাংলায় ঢোকে যাত্রা। সেখান থেকে বিহার হয়ে ফের বাংলায় ফেরেন রাহুলরা। সেখানে সফর শেষে যাত্রা পৌঁছয় ঝাড়খণ্ডে। এবার রাঁচির শহীদ ময়দানে সমাবেশে এসে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে নতুন এই ঘোষণা করে দিলেন রাহুল।
দীর্ঘদিন ধরেই জাতিশুমারির দাবি জানিয়ে এসেছে কংগ্রেস। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময় ওবিসি, দলিত কিংবা উপজাতি তাস খেললেও জাতিশুমারির ব্যপারে নিমরাজি কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেসের দাবি, জাতিশুমারির দাবি তোলা হলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তিনি জাতিভেদে বিশ্বাস করেন না, তাঁর কোনও জাতি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। এদিকে, ভোটের আগে নিজেকে ওবিসি বলে দাবি করার সময় দু'বার ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী। একদিন আগেই আস্থাভোট দিতে বিধানসভায় এসেছিলেন ইডি-র হাতে গ্রেফতার প্রধানমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তাঁর এই গ্রেফতারির নেপথ্যে রাজভবনের হাত আছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও সোমবার ৪৭জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে শেষপর্যন্ত আস্থাভোটে জিতে যান জেএমএম নেতা চম্পাই সোরেন। এরপরই মঙ্গলবার রাঁচির জনসভায় রাহুলের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি জেএমএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোট ভাঙার চেষ্টা করেছিল, আর তার মুখ্য কারণই হল সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী। তবে বিজেপির সেই প্রচেষ্টাকে নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে মহাগাঁটবন্ধন। এর জন্য সমস্ত জোট-বিধায়ককে অভিনন্দনও জানান রাহুল। পাশাপাশি বিজেপি-আরএসএস ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে ঝাড়খণ্ডের গদি জিতে নেওয়ার জন্য চম্পাই সোরেনকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি।
এতদিন ধরে দলিত, আদিবাসী, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (OBC)-দের 'বন্ডেড লেবার' করে রাখারও অভিযোগ এনেছেন রাহুল। তাঁর দাবি, এ যাবৎ বড় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও কর্মসংস্থানগুলিতে কাজের সুযোগ ও অংশগ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল তারা। ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে তাই তাদের প্রথম কাজ হল, জাতিশুমারি করা। ভারতে সংখ্যালঘু আসলে কারা, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি কংগ্রেস। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ৫০ শতাংশের বেশি জাতি সংরক্ষণ করা যায় না। আর সেই আইনেই বদল আনতে চান রাহুলরা। তার জন্য দলিত বা আদিবাসীদের সংরক্ষণে হাত পড়বে না বলেও আশা দিয়েছেন রাহুল। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষেরাও যাতে এগিয়ে আসার সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ হবে ইন্ডিয়া জোটের, তেমনটাই জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল।
আরও পড়ুন:রাহুল গান্ধির সঙ্গে দু’ দশ মিনিট
একদিকে বিজেপি ও আরএসএসের দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর ডাক, ঝাঁ চকচকে রামমন্দির কিংবা পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রের মধ্যে আনার প্রয়াস, অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের জাতিশুমারি বা পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। এখন দেখার কোনদিকে বেশি আকৃষ্ট হন দেশবাসী, কোন দিক বেছে নিতে চান আম জনতা? তার উত্তর অবশ্য মিলবে ভোটবাক্সেই।