‘হিন্দুই নন!’ লোকসভায় সরাসরি আক্রমণ রাহুলের, উত্তর দিতে কালঘাম ছুটল টিম মোদির
Rahul Gandhi Vs Narendra Modi: সপ্তাহের শুরুর দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সংসদে পেয়ে ঝড় তুললেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। বিজেপি এবং মোদির হিন্দুত্ব নিয়েই এদিন প্রশ্ন তুলে দেন রাহুল।
প্রায় এক দশক পরে বিরোধী দলনেতা পেয়েছে লোকসভা। আর সেই বিরোধী দলনেতার প্রতাপ লোকসভার প্রথম অধিবেশনেই ভালো মতো টের পাচ্ছে গেরুয়া শিবির। সপ্তাহের শুরুর দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সংসদে পেয়ে ঝড় তুললেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে রাহুলের দাবি, ভারতের ধারণা থেকে সংবিধান, সমস্ত কিছুকেই আক্রমণ করছে বিজেপি। এখানেই না থেমে বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এদিন রাহুল। তাঁর সাফ দাবি, হিন্দু মহাপুরুষরা অহিংসার পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। অথচ হিন্দুত্বের ধ্বনি তোলা বিজেপি শুধুই হিংসা ছড়ায়। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সুযোগ পেলেই হিংসার কথা বলেন।
রাহুল গান্ধি বনাম নরেন্দ্র মোদি। আজ থেকে নয়, সুযোগ পেলেই একে অপরের দিকে বিরোধিতার সুরকে চড়া করেছেন এই দুই রাজনীতিক। কখনও রাহুলকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা জড়ভরত বলে আক্রমণ করেছেন মোদি। রাহুলও মোদি বিরোধিতার সুর চড়িয়েছেন সুযোগ পেলেই। এদিন লোকসভায় রাহুল গান্ধির বক্তব্যের পরই উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর বিরোধিতা করেন মোদি। তবে তার পরোয়া না করেই রাহুলের মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী সবসময়ই গুরুগম্ভীর থাকেন। জবাবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'সংবিধান আমাকে বিরোধীদলীয় নেতাকে গুরুত্ব সহকারে নিতেই শিখিয়েছে।'
আরও পড়ুন: মোদির সঙ্গে মাথা নত করে করমর্দন! ওম বিড়লাকে কর্তব্য মনে করালেন রাহুল গান্ধি
এদিন লোকসভায় রাষ্ট্রপতিভাষণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই রাহুল বলেন, 'ভারতের ধারণা, সংবিধান এবং বিজেপির প্রস্তাবিত ধারণার বিরোধী লক্ষ লক্ষ লোকের উপর নিয়ম মাফিক আক্রমণ করা হচ্ছিল। আমার ওপরেও আক্রমণ শানানো হয়েছে। আমাদের বিরোধীদের অনেকের ওপরই ব্যক্তিগতভাবে হামলা হয়েছে। যারা যারা ক্ষমতা, সম্পদের কেন্দ্রীভূত করার বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো হয়েছে। এবং যারা দরিদ্র, দলিত, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদেরও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। লোকজনকে জেলে ঢোকানো হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে।' তাঁর কথায়, 'আমাদের সমস্ত মহাপুরুষরা অহিংসার কথা বলেছেন... কিন্তু, যারা নিজেদেরকে হিন্দু বলে দাবি করে, তারা শুধু হিংসা, ঘৃণা, অসত্যের কথা বলে... আপনারা হিন্দুই না।'
রাহুলের সেই কথার জোরালো বিরোধিতা করা হয় বিজেপি শিবিরের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খোদ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, 'গোটা হিন্দু সমাজকে এভাবে হিংসত্মক বলে দাবি করা হচ্ছে। এটা খুবই গুরুতর বিষয়।' এরপর রাহুল পালটা জবাবে বলেন, 'নরেন্দ্র মোদী সমগ্র হিন্দু সমাজ নন। বিজেপি পুরো হিন্দু সমাজ নয়। আরএসএস সমগ্র হিন্দু সমাজ নয়। এটা বিজেপির কোনও চুক্তি নয়।'
এদিকে এদিন ভাষণ দেওয়ার সময় লোকসভার ভিতরেই রাহুল গান্ধি শিবঠাকুরের একটি ছবি তুলে ধরেন। আর তাতেই বাধা দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তাঁর সাফ বক্তব্য, 'সংসদে কোনও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের নিয়ম নেই।' তার পরেও অবশ্য শিবঠাকুরের প্রসঙ্গ তুলে রাহুল বলেন, 'যদি শিবঠাকুরের ছবি দেখেন, তাহলে দেখবেন, হিন্দুদের মনে কোনও ভয় নেই, হিংসা নেই, ঘৃণা নেই। তবে এই বিজেপি ভয় ছড়িয়ে দেয়। ২৪ ঘণ্টা ঘৃণা ছড়াতে থাকে।'
রাহুলের ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই গেরুয়া শিবিরের সাংসদেরা 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান তুলেছিলেন। তার জবাবে রাহুলের কাছ থেকে ধেয়ে আসে 'জয় সংবিধান' স্লোগান। লোকসভায় নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণের সময়েই কংগ্রেস সাংসদেরা সকলে একসঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে সংবিধান দেখিয়েছিলেন। দেশের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিতে কংগ্রেসের এই স্ট্র্যাটেজি ভালোই কাজে আসছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। এবার 'জয় শ্রী রাম'-র অ্যান্টিডোট হিসেবে যেভাবে 'জয় সংবিধান' স্লোগান দিলেন রাহুল, তা বেশ চর্চায়। রাহুল অবশ্য এদিন সংসদে বিরোধীদের কটাক্ষ করে করেন. 'এখন বিজেপি সাংসদরা আমাকে অনুসরণ করে 'জয় সংবিধান' স্লোগান দিচ্ছে। দেখে ভালো লাগছে।' এরপরই সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শুরু করেন রাহুল গান্ধি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রে ‘রাজদণ্ড’ কেন? সংসদ থেকে সরানো হবে মোদির প্রিয় সেঙ্গোল?
বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি পুরোপুরি হিন্দু নয়। রাহুলের এই উবাচ ঘিরে এদিন বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বিরোধী দলনেতার বাদানুবাদের মধ্যেই আসরে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর মতে, রাহুলকে এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি হিংসাকে কোনও ধর্মের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন শাহ। সব মিলিয়ে এ দিন কংগ্রেস-বিজেপি তুমুল বাদানুবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। পাশাপাশি রাহুল গান্ধি যে বিরোধী দলনেতা হিসেবে বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলবেন না গোটা অধিবেশন জুড়েই, তা-ও কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা।