লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ রাহুলের বক্তব্য! বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন তুলে স্পিকারকে চিঠি বিরোধী দলনেতার

Rahul Gandhi: রাহুল এদিন তাঁর চিঠিতে রীতিমতো তারিখ ও সময় উল্লেখ করে জানিয়েছেন, যে যুক্তিতে তাঁর মন্তব্যকে সরানো হয়েছে, তা কোনও ভাবেই ধারা ৩৮০-র মধ্যে পড়ে না।

প্রায় এক দশক পরে বিরোধী দলনেতা পেয়েছে লোকসভা। সেই লোকসভার প্রথম অধিবেশনে বিরোধী দলনেতা হিসেবে কার্যত একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন রাহুল গান্ধি। নরেন্দ্র মোদি-সহ গোটা বিজেপি দলই ছিল সেদিন রাহুলের নিশানায়। এমনকী বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন রাহুল। সে ব্য়াপারটি নিয়ে শুধু বিজেপি নেতাদেরই নয়, বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয় লোকসভার বিজেপি প্রস্তাবিত স্পিকার ওম বিড়লাকে। মঙ্গলবার দেখা গেল, সোমবার রাহুলের দেওয়া ভাষণ থেকে বেশ কিছু অংশ মুছে ফেলা হয়েছে স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে। রাহুলের সেই সব বক্তব্যকে 'বিতর্কিত' বলে দেগেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। আর এবার সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই স্পিকার ওম বিড়লাকে লম্বা-চওড়া চিঠি লিখলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি।

চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, রেকর্ডিং থেকে বাদ দেওয়া তাঁর বক্তৃতার অংশটি কোনও মতেই লোকসভার ৩৮০ ধারার মধ্যে পড়ে না। যে ধারা আদতে সাংসদদের বলা কথা বা ভাষণ সরিয়ে দেওয়া বা মুছে ফেলার অনুমতি দেয়। রাহুল জানিয়েছেন, তিনি যা বলেছেন সোমবার সাংসদে, তা বাস্তব ছবিমাত্র এবং তা চরম সত্যি। এর পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় সংবিধানের ১০৫(১) অনুচ্ছেদের কথা, যেখানে বাকস্বাধীনতার কথা বলা হয়। তিনি জানান, সংসদের মধ্যে বক্তব্য উত্থাপন করা প্রতিটি সদস্যের অধিকার। এর পরেই সংসদের রেকর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া তাঁর মন্তব্য পুনরুদ্ধারের আর্জিও জানিয়েছেন রাহুল।

আরও পড়ুন: হিন্দু মানেই বিজেপি নয়, অযোধ্যা শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায়  রাহুল

রাহুল এদিন তাঁর চিঠিতে রীতিমতো তারিখ ও সময় উল্লেখ করে জানিয়েছেন, যে যুক্তিতে তাঁর মন্তব্যকে সরানো হয়েছে, তা কোনও ভাবেই ধারা ৩৮০-র মধ্যে পড়ে না। কারণ কোনও রকম কুমন্তব্য বা অপশব্দ তিনি ব্যবহার করেননি। রাহুলের বক্তব্য, “আমার ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যেভাবে বহিষ্কারের আড়ালে কার্যধারা থেকে সরানো হয়েছে তা দেখে আমি হতবাক। আমি সংসদের অধিবেশে যা বলেছি তা নিখাদ সত্যি। সংসদের প্রতিনিধিরা জনগণের সম্মিলিতি কণ্ঠস্বরকে ব্যক্ত করেন। এটাই ভারতীয় সংবিধানের ১০৫ (১) ধারার বাকস্বাধীনতা। সাধারণ মানুষের কথা বলা সংসদের প্রত্যেক সদস্যের অন্যতম অধিকার।” রাহুল আরও বলেন, “আমার মন্তব্য রেকর্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের নীতির পরিপন্থী।”

 

সোমবার সংসদের প্রথম অধিবেশন একাধিক বিষয় নিয়ে বিজেপিকে তোপ দাগেন রাহুল। উঠে আসে নিট-দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে কেন্দ্র যেভাবে বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করে, সেই প্রসঙ্গও। ধর্মকে ব্যবহার করে বিজেপি যেভাবে রাজনীতিক ফয়দা তোলার চেষ্টা করে, যেভাবে হিংসা বা ঘৃণা ছড়ায়, তার কড়া নিন্দাও করেন তিনি। সেই ভাষণের রেকর্ড থেকেই মঙ্গলবার একাধিক মন্তব্য সরিয়ে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তাঁর সেই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করেন বিরোধীরা।

আরও পড়ুন:‘হিন্দুই নন!’ লোকসভায় সরাসরি আক্রমণ রাহুলের, উত্তর দিতে কালঘাম ছুটল টিম মোদির

ওম বিড়লার কাছে অবশ্য এমন সিদ্ধান্ত খুব অপ্রত্যাশিত নয়। এর আগে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিরোধী সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। সেই ধারা অব্যহত রেখেই ২০২৪ লোকসভার অধিবেশন থেকে বাদ গেল বিরোধী দলনেতার বক্তৃতার অংশ। যার কড়া নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। তাঁর কথায়, “সত্যি শুধু সত্যিই। মোদির দুনিয়ায় সব সময়ে সত্যিকে মুছে ফেলা হয়।”

More Articles