হিন্দু মানেই বিজেপি নয়, অযোধ্যা শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায় রাহুল
Rahul Gandhi's Lok Sabha Speech: সোমবার অধিবেশন শুরু হতেই একের পর এক বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গেল রাহুলকে। কার্যত তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে নাকানিচোবানি খেতে দেখা গেল একাধিক তাবড় বিজেপি নেতাকে।
দশ বছর পর ফের ভরে উঠেছে লোকসভার বিরোধী দলনেতার চেয়ার। লোকসভা ভোটে দু'টি আসন থেকে জিতে এবার সংসদে বিরোধী দলনেতার চেয়ারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। আগাগোড়াই রাহুল এবং জোট ইন্ডিয়া বলে আসছে, মোদি বিরোধিতাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। লোকসভার প্রথম অধিবেশনে গোড়া থেকেই সেই ভূমিকায় দেখা গেল রাহুলকে। মোদির শপথগ্রহণের দিনেই তাঁকে উদ্দেশ্য করে সংবিধান প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেস নেতাদের। সোমবার অধিবেশন শুরু হতেই একের পর এক বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গেল রাহুলকে। কার্যত তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে নাকানিচোবানি খেতে দেখা গেল খোদ মোদি তো বটেই, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং-সহ একাধিক তাবড় বিজেপি নেতাকে। গতবার লোকসভায় বিরাট সংখ্যক বিরোধী সাংসদকে বহিষ্কার করে কার্যত নজির গড়ে ফেলেছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এদিন তাঁকেও তাঁর দায়িত্ব মনে করাতে ভুললেন না রাহুল। রাহুলের এদিনের ভাষণ গোটাটাই তুলে দেওয়া হল ইনস্ক্রিপ্টে।
রাহুল: মাননীয় অধ্যক্ষ, ধন্যবাদ। জয় সংবিধান। সংবিধানকে রক্ষা করেছি। দেশে সবাই মিলে সংবিধানকে রক্ষা করেছেন। ভাল লাগছে যে বিজেপির লোকজন প্রতি দু’মিনিট অন্তর 'সংবিধান' 'সংবিধান' বলছেন।
রাহুল: স্পিকার স্যার, গত ১০ বছর ধরে লাগাতার সংবিধান, ভারতের আদর্শ এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ যাঁরা বিজেপির বিরোধিতা করেছেন, সংবিধানের উপর আক্রমণের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের উপর ধারাবাহিক ভাবে আঘাত নেমে এসেছে। ব্যক্তিগত ভাবেও আমাদের অনেকের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। আমাদের অনেক নেতারা এখনও জেলে রয়েছেন। একজন সবে মুক্তি পেয়েছেন, অন্য জন এখনও জেলে। শুধুমাত্র বিরোধীরাই নন, যে বা যাঁরা ক্ষমতা বা সম্পদের কেন্দ্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন, দরিদ্র, দলিত, সংখ্যালঘু, জনজাতি মানুষের উপর আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছেন, হিংসাত্মক উপায়ে তাঁদের দমন করা হয়েছে। জেলে ভরা হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও আক্রমণের শিকার হয়েছি।
আরও পড়ুন: ‘হিন্দুই নন!’ লোকসভায় সরাসরি আক্রমণ রাহুলের, উত্তর দিতে কালঘাম ছুটল টিম মোদির
রাহুল: সরকারের নির্দেশে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। ২০টির বেশি মামলা, দু’বছরের কারাবাসের নির্দেশ, বাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়, তাতে যদিও সমস্যা নেই। প্রতিদিন, ২৪ ঘণ্টা লাগাতার সংবাদমাধ্যমে আমাকে গালি দেওয়া হয়, আক্রমণ করা হয়। আর সবচেয়ে আনন্দদায়ক, সুন্দর বিষয় হল, ৫৫ ঘণ্টা ধরে ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদ। আমি সত্যিই উপভোগ করেছি। কারণ জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পর ইডি-র আধিকারিক অফ ক্যামেরা আমাকে বলেন, ‘রাহুলজি ৫৫ ঘণ্টা বসে রয়েছেন এখানে। আপনি পাথরের মতো অনড় কেন?’ এই ধরনের আক্রমণ হলে আশ্রয় খোঁজেন মানুষ, আত্মরক্ষার উপায় খোঁজেন। তাই আজ আমি বক্তৃতা শুরু করব বিজেপি এবং RSS-এর বন্ধুদের এই বলে যে, কোন আদর্শে ভর করে গোটা বিরোধী শিবির ভারত নামক ধারণাটিকে রক্ষা করল? এই আদর্শ কোথা থেকে এল, কীভাবে সেই আদর্শ আমাদের নির্ভয়ে আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগাল, জানাব।
রাহুল: বক্তৃতা শুরু করব একটি ছবি দেখিয়ে... (ভগবান শিবের ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রাহুল। সরকারের তরফে জোর আপত্তি। স্পিকার ওম বিড়লা জানান, কোনও প্ল্যাকার্ড, কোনও প্রতীক দেখানো যাবে না সংসদে।) লোকসভায় ভগবান শিবের ছবি দেখানো কি বারণ? সরাসরি জানান। অন্য ছবি দেখানো যেতে পারে, কিন্তু ভগবান শিবের ছবি দেখানো যাবে না, এমন কোনও নিয়ম আছে? আমি বলছি, এঁর থেকে সাহস পেয়েছি, অথচ ছবি দেখাতে দিচ্ছেন না। আমার কাছে আরও ছবি রয়েছে। সেগুলোও দেখাতে চাইছিলাম। স্পিকার স্যর, এই ছবি ভারতের মনে রয়েছে। গোটা দেশ এই ছবি চেনে এবং বোঝে। কেন এই ছবি আনলাম? কারণ এই ছবিতে কিছু আদর্শ রয়েছে, যাকে রক্ষা করে চলি আমরা বিরোধীরা। প্রথম আদর্শ হল, ভয়ের মোকাবিলা করা। কোনও কিছুতে ভীত না হওয়া। সেই আদর্শই প্রতিফলিত হচ্ছে এই ছবিতে, যা আমাকে দেখাতে দেওয়া হচ্ছে না। ভগবান শিবের গলায় সাপ জড়ানো আছে, অর্থাৎ কিছুতেই ভীত না হওয়া। ভগবান শিবের গলা থেকে এক ইঞ্চি দূরে মৃত্যু। এই আদর্শ নিয়েই আমরা বিরোধীরা লড়াই করেছি। প্রতিরোধের এই আদর্শ নিয়েই... (তা-ও তো বিরোধী হয়ে রয়েছেন বলে কটাক্ষ সরকারের তরফ থেকে) জানি আমরা এখনও বিরোধী, কিন্তু বিরোধী হতে পেরে খুশি আমি, গর্বিতও। কারণ আমাদের কাছে ক্ষমতার বাইরেও অনেক কিছু আছে। আপনারা ক্ষমতা ছাড়া কিছু বোঝেন না, তাই ক্ষমতায় থাকতে চান। আমাদের কাছে আছে সত্য। ভগবান শিবও সত্যের প্রতীক। তিনিও সত্যের পথে অবিচল ছিলেন। আমরাও তাই বলছি।
রাহুল: আরও একটি আদর্শের কথা বলা যাক, ভগবান শিবের বাম কাঁধের পিছনে ত্রিশূল রয়েছে। বুঝতে হবে, ত্রিশূল অস্ত্র কেন কাঁধের পিছনে। ত্রিশূলটি হিংসার প্রতীক নয়, অহিংসার প্রতীক। তাই এমন জায়গায় ত্রিশূলটি রয়েছে, চাইলেই ডানহাত দিয়ে সেটিকে ছোঁয়া যাবে না। ত্রিশূলটি হিংসার প্রতীক হলে ডানহাতে ধরা থাকত। আমরা যখন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম, সত্যকে রক্ষা করার লড়াই করছিলাম, আমরা হিংসার আশ্রয় নিইনি। আর তৃতীয় আদর্শ হল, সত্য, সাহস এবং অহিংসার। এই আদর্শের প্রতীককে আপনারা (বিজেপি) ঘৃণা করেন বটে, কিন্তু সেই আদর্শ হল অভয়মুদ্রা, কংগ্রেসের প্রতীকচিহ্ন। রাজনাথ সিংহ খুব অবাক হয়েছেন বোঝা যাচ্ছে। অভয়মুদ্রা সত্যের মুখোমুখি হওয়ার প্রতীক অভয়মুদ্রা, নির্ভীকতার প্রতীক অভয়মুদ্রা এবং অহিংসার প্রতীক অভয়মুদ্রা, যা মহাত্মা গাঁধীও বলতেন। অভয়মুদ্রা শুধু কোনও এক ব্যক্তিকে সত্যের পথে চালিত হতে, নির্ভীক হতে বা অহিংস হতে বলে না, বাকিদেরও সেই পথে চারিত হতে অনুপ্রেরণা জোগানোর বার্তা দেয়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও এই অভয়মুদ্রাই ব্যবহৃত হয়। মহাত্মা গাঁধী এই আদর্শকে তুলে ধরেন।
রাহুল: প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সরাসরি কথা হয়, পরমাত্মা সরাসরি মোদিজির আত্মার সঙ্গে কথা বলেন। আমরা সবাই বায়োলজিক্যাল, আমরা জন্মেছি, মৃত্যুও হবে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ননবায়োলজিক্যাল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গাঁধী মারা গিয়েছেন। একটি ছবিই নাকি তাঁকে বাঁচিয়ে রয়েছে! কতটা অজ্ঞতা রয়েছে, বুঝতে পারছেন যে বলা হচ্ছে, গাঁধী মারা গিয়েছেন। একটি ছবিই তাঁকে বাঁচিয়ে তুলেছে। গাঁধীজি কিন্তু বেঁচে রয়েছেন।
রাহুল: আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, শুধুমাত্র একটি ধর্মই সাহসিকতার কথা বলে না। প্রত্যেক ধর্মই সাহসিকতার কথা বলে। (আর এখটি ছবি তুলে ধরতে স্পিকারের সঙ্গে তর্ক।) কংগ্রেস ভগবান শিবের ছবি দেখানোয় এঁদের রাগ হচ্ছে। ইসলামেও বলা আছে, কোরানে লেখা রয়েছে, ভয় পেও না। যখন প্রার্থনা করে, দুই হাতে অভয়মুদ্রাই ফুটে উঠে। এবার গুরুনানকের দিকে যাই। যে ধর্মকে আপনারা প্রতিদিন আক্রমণ করেন, সেই গুরুনানকের ছবিতেও অভয়মুদ্রা দেখতে পাবেন। ভয় পাবেন না, ভয় দেখাবেন না, এই বার্তাই দিয়েছিলেন। পঞ্জাব থেকে গুরুনানকজি মক্কা, তাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কাও গিয়েছিলেন। শুধু অহিংসা, সত্যের কথা বলেছিলেন। কাউকে কখনও ভয় দেখাননি। যীশু খ্রিস্টের ছবি দেখুন, তাতেও অভয়মুদ্রা দেখতে পাবেন। এক গালে থাপ্পড় পড়লে, অন্য গাল বাড়িয়ে দিতে বলেছিলেন। গৌতম বুদ্ধও নির্ভীকতা, সত্যের কথা বলেন। মহাবীরও সেই একই কথা বলেন।
রাহুল: ভারতের ইতিহাসে তিনটি মূল আদর্শ রয়েছে। মোদিজি একদিন ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ভারতে কখনও কারও উপর আক্রমণ করেনি। এর কারণ আছে। কারণ এই দেশ অহিংসার দেশ, এই দেশে ভয়ের আবহ নেই। আমাদের সব মহাপুরুষ অহিংসা, নির্ভীকতার কথা বলে গিয়েছেন। ভগবান শিব অহিংসার কথা বলে গিয়েছেন, সাহসিকতার কথা বলে গিয়েছেন, ত্রিশূল মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন। আর যাঁরা নিজেদের হিন্দু বলেন, তাঁরা ২৪ ঘণ্টা শুধু হিংসা, ঘৃণা, অসত্য বলে। আপনারা হিন্দুই নন। হিন্দু ধর্মে সাফ বলা আছে, সত্যের পাশে থাকতে, সত্য থেকে পিছু না হটার কথা লেখা রয়েছে, অহিংসা আমাদের প্রতীক (হাত তুলে অভয়মুদ্রা দেখালেন, সরকারের তরফে চেঁচামেচি)... এই জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করছেন কারণ বুকে তির বিঁধেছে।
(রাহুলের মন্তব্যের বিরোধিতায় উঠে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘অত্যন্তু গুরুতর বিষয়। গোটা হিন্দু সমাজকে হিংস্র বলা গুরুতর বিষয়।’)
রাহুল: না, না, না, বিজেপিকে বলেছি, আপনাকে বলেছি। নরেন্দ্র মোদি গোটা হিন্দু সমাজ নন, বিজেপি গোটা হিন্দু সমাজ নয়, RSS গোটা হিন্দু সমাজ নয়। সব কিছু বিজেপির নয়। এদিকের সকলেই হিন্দু। (সরকারের তরফে বিরোধিতা... রাহুল স্পিকারের থেকে পিছন ঘুরে রয়েছেন, হিন্দুদের আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ। অমিত শাহও উঠে দাঁড়ান।)
রাহুল: হিন্দুধর্মের মহাপুরুষদের কথা না হয় রইল, ভগবান শিবের কতাই ধরা যাক, ছবি দেখলেই বোঝা যায় হিন্দু কখনও ভয়, হিংসা, ঘৃণা ছড়াতে পারে না। কিন্তু বিজেপি ২৪ ঘণ্টা ঘৃণা আর হিংসার উপরই ভর করে রয়েছে। কোথায় কোথায় ভীতি সঞ্চার করেনি এরা! অযোধ্যা থেকে শুরু করি। অযোধ্যা আপনাদের বার্তা পাঠিয়েছে। অযোধ্যায় ভগবান রাম।
(অমিত শাহ: লোকসভার নিয়ম কি কারও কারও উপর খাটে না? বিজেপিকে হিংসাত্মক বলা, নিয়ম না জানলে টিউশন যান। লোকসভা নিয়ম অনুযায়ী চলুক। স্পিকারে সঙ্গে বিরোধীদের তর্ক। মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রাহুল এবং বিরোধীদের।)
রাহুল: আমার একটা প্রশ্ন আছে স্যর, এই মাইকের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? স্যার যখন তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
(স্পিকার ওম বিড়লা: সংসদের বাইরেও এই অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগ তুলতে পারেন না। বিরোধী দলনেতা আপনি। আপনি লোকসভার প্রক্রিয়া, নিয়মনীতি পালন করুন। কথা বলার সময় কোনও ধর্মের উপর এমন কিছু না বলুন, যাতে গোটা দেশে অন্য বার্তা যায়।)
রাহুল: আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি কথা বলার সময় সত্যিই মাইক বন্ধ হয়ে যায়। আপনিও দেখেছেন, অযোধ্যা শব্দটি উচ্চারণ করা মাত্রই মাইক বন্ধ হয়ে গেল। আমি যা বলছিলাম, ভগবান রামের জন্মভূমি অযোধ্যা বিজেপিকে বার্তা দিয়েছেন, সেই বার্তা আপনাদের সামনে বসে (ফৈজাবাদে জয়ী সমাজবাদী পার্টির অওধেশ প্রসাদকে দেখিয়ে)। কাল কফিতে চুমুক দিতে দিতে ওঁর কাছে জানতে চাইলাম যে কী করে হল? বিজেপি রামমন্দিরের উদ্বোধন করল… হলটা কী? উনি জানালেন, অযোধ্যায় বিমানবন্দর তৈরি হল। মানুষের থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হয়। আজও তার ক্ষতিপূরণ মেলেনি। অযোধ্যায় যে ছোট দোকানদাররা ছিলেন, ছোট নির্মাণ ছিল, সব ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় এনে ফেলা হয়েছে সকলকে। মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে কষ্ট পেয়েছেন অযোধ্যার মানুষ কারণ উদ্বোধনে আদানি, আম্বানিরা ছিলেন, কিন্তু অযোধ্যার কেউ ছিলেন না। এটাও কারণ ছিল। অযোধ্যার মানুষের মনে নরেন্দ্র মোদি ভীতি সঞ্চার করেছিলেন। জমি কেড়ে নেওয়া হয়, ঘর ভেঙে দেওয়া হয়, দরিদ্র মানুষকে উদ্বোধনে অংশ নেওয়া তো দূর, তার ধারেকাছেও ঘোঁষতেও দেওয়া হয়নি। আরও একটা কথা জানালেন উনি, তিনবার নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যা থেকে লড়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু সমীক্ষক ওঁকে বারণ করেন। অযোধ্যায় লড়লে মানুষ হারিয়ে দেবেন বলে সতর্ক করা হয়। তাই বারাণসী থেকে কোনও রকমে বেঁচে ফিরলেন। অযোধ্যার মানুষকে ভয় দেখিয়েছেন, গোটা দেশকে ভয় দেখিয়েছেন। আজ সকালে যখন এলাম, রাজনাথ সিংহ হেসে নমস্কার করলেন। মোদিজি বসে রয়েছেন, কোনও হাসি নেই মুখে। গম্ভীর। বাকিরাও করেন না, পাছে মোদিজি দেখে ফেলেন! গডকড়ীজিরও একই অবস্থা। অযোধ্যার মানুষ তো বটেই, বিজেপির লোকজনকেও এঁরা ভয় দেখান।
(স্পিকার: রাষ্ট্রপতির অভিবাদন নিয়ে কথা হচ্ছে। সেই নিয়ে কথা বলুন। এগুলো কি উচিত? নরেন্দ্র মোদি: গণতন্ত্র এবং সংবিধান শিখিয়েছে বিরোধী নেতাকে গম্ভীর ভাবেই গ্রহণ করতে।)
রাহুল: স্পিকার স্যার, আপনি রাষ্ট্রপতির অভিবাদন নিয়ে কথা বলতে বলছেন। এর আগে অনুরাগ ঠাকুর অযোধ্যা নিয়ে কথা বলেন, সনাতন ধর্মের উপর আক্রমণের কথা বলেন। তাই আজ এই কথা বলতে হল আমাকে। ওঁরা ভীতি সঞ্চার করেছিলেন। একজোট হয়ে আমরা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ বের করি। সেখানেও আপনাদের ভয় দেখানোর নমুনা চোখে পড়ল। একদিন এক মহিলা জানালেন, তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। কে মারছে জিজ্ঞেস করলাম, উনি জানালেন, স্বামী মারধর করছেন। কারণ জানতে চাইলে জানান, খেতে দিতে পারিনি। জিনিস কিনতে পারিনি। আমি ওঁকে সাহায্য করতে চাইলে জানান, মূল্যবৃদ্ধির জেরে ভারতের বহু মহিলাকে মার খেতে হয়। গ্যাস সিলিন্ডার, মূল্যবৃদ্ধি, আপনারা মহিলাদের মনে ভয় সঞ্চার করেছেন। কিছুদিন আগে, পঞ্জাবে ‘অগ্নিবীরে’র পরিবারের সঙ্গে দেখা করি। ছোট্ট বাড়ি। ছেলে শহিদ হয়েছেন মাইন বিস্ফোরণে। আমি ওকে শহিদ বলছি, দেশের সরকার তাকে শহিদের স্বীকৃতি দেয়নি। ওই পরিবার পেনশন পাবে না, ক্ষতিপূরণ পাবে না, শহিদের স্বীকৃতিও জুটবে না। বাড়ির মেয়েরা বসে কাঁদছিলেন। সেনার বাকি জওয়ানরা সব সুবিধা পাবেন, কিন্তু অগ্নিবীরদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে। ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চিনের জওয়ানরা পাঁচ বছর ধরে প্রশিক্ষণ নেন। তাঁদের সামনে আমাদের অগ্নিবীরদের রাইফেল হাতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীতেও বৈষম্য করা হচ্ছে, যে একজন পেনশন পাবে, অন্য জন পাবে না। এর পরও নিজেদের দেশভক্ত বলবেন?
(রাজনাথ সিংহ: মিথ্যে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়।)
রাহুল: কোনও মিথ্যে দাবি নয়। রাজনাথ সিংহের এক দাবি, আমার এক দাবি, আসল সত্য কী, তা অগ্নিবীররা জানেন। শহিদের স্বীকৃতি পান কি না, ক্ষতিপূরণ পান কি না, সব ওঁরা জানেন।
(অমিত শাহ: রাজনাথ সিংহ ১ কোটি টাকা দেওয়া হয় বলছেন। সত্য কথা বলুন। মিথ্যে বললে ক্ষমা চাওয়া উচিত ওঁর)
রাহুল: আমি অগ্নিবীর প্রকল্পের কথা আমি সংসদে তুলে ধরলাম। রাজনাথ সিংহও নিজের কথা বলেছেন। বাস্তব পরিস্থিতি কী, তা সেনা, অগ্নিবীর জানেন। আমি কী বললাম, সরকার কী বলল, কারও কিছু যায় আসে না। সত্যটা সকলেই জানেন।
(কিরেণ রিজিজু: প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যা বলেছেন, বিরোধী দলনেতা যা বলছেন, এত হালকা মন্তব্য কী করে করতে পারেন?)
রাহুল: স্পিকার স্যার, দেশের সেনা জানে অগ্নিবীর প্রকল্প সেনার প্রকল্প নয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রকল্প। সেনা জানে, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প এটা। সেনার নয়। নোটবন্দি যেভাবে করা হয়েছিল, একই ভাবে...
(রাজনাথ সিংহ: বিরোধী দলনেতার কাছে অনুরোধ, দেশকে বিভ্রান্ত করবেন না। সকলের মতামত, পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প শুরু হয়। আমেরিকা, ব্রিটেনেও এমন প্রকল্প রয়েছে। সেখানে কারও আপত্তি নেই। বিশদ না জেনে সংসদকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। লোকসভার রেকর্ড থেকে এই মন্তব্য বাদ দেওয়া হোক।)
রাহুল: আপনাদের অগ্নিবীর বিকল্প ভাল লাগতেই পারে। রাখুন আপনারা। আমরা পাল্টে দেব, সরিয়ে দেব। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্প সরিয়ে দেওয়া হবে। কারণ আমরা মনে করি, এই প্রকল্প সেনার স্বার্থ বিরোধী, জওয়ানদের স্বার্থ বিরোধী, দেশপ্রেমীদের স্বার্থ বিরোধী প্রকল্প। আণরা এই প্রকল্প চাই না। প্রথমবার দেশের ইতিহাসে মানুষের থেকে রাজ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রথম বার জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের থেকে রাজ্য কেড়ে নিয়েছেন আপনারা। মণিপুরকে গৃহযুদ্ধে ডুবিয়ে দিয়েছেন আপনারা। আপনারা, আপনাদের প্রকল্প, আপনাদের রাজনীতি মণিপুরকে পুড়িয়ে দিয়েছে। আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাননি। মনে হয়, মণিপুর যেন ভারতের অন্তর্ভুক্তই নন। প্রধামন্ত্রীর কাছে মণিপুর রাজ্যই নয়, সেখানে যেন গৃহযুদ্ধ হচ্ছেই না! আমরা গিয়েছি, আমরা বলেছিলাম একবার যান, একবার অন্তত বার্তা দিন, কিন্তু না। আমি গিয়েছিলাম, কুকি এবং মেইতেই, দুই পক্ষের সঙ্গেই দেখা করি। আপনাদের সঙ্গে দেখা করবে না। কারণ আপনাদের জন্য মণিপুরের কোনও অস্তিত্বই নেই। যেন কিছুই ঘটেনি। আমি ত্রাণ শিবিরে গিয়েছিলাম। এক মহিলা কাঁপতে কাঁপতে বলেন... (সরকারের তরফে কটাক্ষ) হ্যাঁ, আমি মহিলাদের কথা বলব। আপনারা সংগঠনে মহিলাদের জায়গা দেন না। কিন্তু আমি মহিলাদের কথা বলতে পারি। আমাকে ওই মহিলা জানালেন, চোখের সামনে ছেলেকে গুলি করে মারা হয়। আমি বেঁচে থাকতে চাইনি। টেনে হিঁচড়ে আমাকে সরানো হয়। এই হল আপনাদের রাজনীতির ফল। একদিন প্রধানমন্ত্রী ৮টার সময় বললেন, জানি না ভগবানের সঙ্গে হয়ত ফাইন টিউনিং হয়ে গিয়েছিল!
(সরকারের তরফে আপত্তি। স্পিকার ওম বিড়লা: লোকসভার নেতা প্রধানমন্ত্রী। ওঁকে সম্মান জানানো উচিত।)
রাহুল: আমি তো সম্মান করছি। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন যে উনি বায়োলজিক্যাল নন, সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আমি বলিনি। ভগবানের কাছ থেকেই হয়তো মেসেজ এসেছিল, তাই নোটবন্দি করে দিলেন। এমন বহু নির্দেশ আসে। যেমন আদানিজিকে বম্বে বিমানবন্দর দিয়ে দেওয়ার নির্দেশও হয় তো উপর থেকেই এসেছিল। নোটবন্দির ফলে ছোট ব্যবসাগুলি মার খেয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। আজ ওঁরা যা ইচ্ছে করছেন, কিন্তু ভারতের যুবসমাজের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কর্মসংস্থানের মেরুদণ্ডই ভেঙে গিয়েছে। নোটবন্দির পর ভুল জিএসটি নীতি, সব শেষ। এসব আদানি-আম্বানিদের জন্য করা হয়। আয়কর দফতর, জিএসটি, নোটবন্দি নগদের জোগান বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে, যাতে ছোট ব্যবসায়ীরা সরে যেতে বাধ্য হন এবং আদানি-আম্বানি সেই জায়গা দখল করুন। জিজ্ঞেস করে দেখুন, ছোট ব্যবসায়ীরা সব এক কথা বলবেন। গুজরাতে টেক্সটাইল মালিকদের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরাও মানলেন কোটিপতিদের সুবিধে করে দিতেই নোটবন্দি, জিএসটি চালু করা হয়। মোদি কোটিপতিদের জন্য কাজ করেন। আমি গুজরাতে যাতায়াত করি। আপনাদের গুজরাতেও হারাব। লিখে নিন, বিরোধীরা আপনাদের গুজরাতে হারাতে চলেছে। কৃষকদের ভয় দেখাতে জমি অধিগ্রহণ বিল শেষ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের জমির রক্ষা করতে, সঠিক ক্ষতিপূরণ দিতে ওই বিল এনেছিলাম আমরা। প্রত্যেক রাজ্যে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
রাহুল: কৃষকদের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ বিল আনা হয়েছিল, তা শেষ করে দিয়েছেন আপনারা। কৃষকদের ভয় দেখাতে আপনারা তিনটি নয়া আইন চালু করলেন। প্রধানমন্ত্রী বোঝালেন, তাতে নাকি কৃষকদের ভাল হবে! আসলে ওই আইন আদানি-আম্বানির ফায়দা করাতে ওই আইন আনা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ, যে রাস্তা ধরে এসেছিলেন কৃষকরা। হরিয়ানায় কৃষকরা বিরোধিতা করেন, আপনারা কথা বলেন না। আপনারা ওঁদের সন্ত্রাসবাদী বলেন।
(অমিত শাহ: আমি বুঝতে পারছি বিরোধী দলনেতা প্রথম বার কথা বলছেন। কিন্তু উনি নিয়মের বাইরে যেতে পারেন না।)
রাহুল: ৭০০ কৃষক শহিদ হয়েছেন। আমরা সংসদে শোকপালনের কথা বলেছিলাম, আপনারা হতে দেননি। আপনারা বলেছিলেন, ওঁরা কৃষক নন। অর্থাৎ আপনাদের মতে ওঁরা সন্ত্রাসবাদী ছিলেন। দেখুন আপনাদের শরিকরাও সম্মতি জানাচ্ছেন। আমাদের কিছু বলা প্রয়োজনই নেই।
(স্পিকার ওম বিড়লা: আমার অনুরোধ, আপনার দলের কাছে সময় নেই।)
রাহুল: কৃষকরা কী চেয়েছিলেন? ওঁরা শুধু বলেছিলেন, যদি ধনকুবেরদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মাফ হয়, তাহলে আমাদের ঋণও একটু মাফ করে দিন। প্রত্যেক পণ্যের সঠিক মূল্য চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনারা ঋণ মাফ করেননি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও দেননি।
(শিবরাজ সিংহ চৌহান: সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিচ্ছে। উনি মিথ্যে বলছেন। ওঁদের সরকারের সময় সহায়ক মূল্য কত ছিল?)
রাহুল: স্পিকার স্যার, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি প্রতিশ্রুতির কথা বলা হচ্ছে, যাতে রাজি নয় সরকার। কৃষকদের আপনারা ভয় দেখাচ্ছেন, মহিলাদের ভয় দেখালেন, অগ্নিবীরদেরও ভয় দেখিয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিকের জন্যই আপনাদের কাছে ভীতি সঞ্চারকারী উপহার রয়েছে। এবার পড়ুয়াদের কথাও বলা যাক। আপনারা ২ হাজার বছর আগের কথা বলেন, ভবিষ্যতের কথাও একটু হয়ে যাক! কর্মসংস্থান আপনারা শেষ করে দিয়েছেন, ছোট ব্যবসাকে শেষ করে দিয়েছেন, সেনায় চাকরির সুযোগও শেষ, বেসরকারিকরণও চলছে। আর এখন নতুন ফ্যাশন বেরিয়েছে, NEET. চাকরির পরীক্ষারও বাণিজ্যিকরণ ঘটিয়েছেন আপনারা। NEET আর প্রফেশনাল পরীক্ষা নেই, কমার্শিয়াল পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। NEET-এ একজন পড়ুয়া শীর্ষ স্থান অধিকার করতে পারেন, কিন্তু টাকা না থাকলে মেডিক্যাল কলেজে যেতে পারবেন না। NEET-এর পাশ মার্ক ২০-২২ শতাংশ, গোটা পরীক্ষা ধনীসন্তানদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ফায়দা তোলা হচ্ছে। সাত বছরে ৭০ বার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অভিভাষণে NEET, অগ্নিবীর নিয়ে কথা হবে না! আমরা একদিন NEET নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নিয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার জানাল, কোনও আলোচনা করবে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবেই না। সংখ্যালঘুদের ভয় দেখায়, কংগ্রেস আপনাদের ভয় পায় না। আপনারা কংগ্রেসকে ভয় পান। সংখ্যালঘু মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হিংসা, ঘৃণাই আপনাদের হাতিয়ার। অথচ এই সংখ্যালঘুরাও সবক্ষেত্রে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেন, দেশপ্রেমের প্রমাণ দেন। আর আপনারা তাঁদের আক্রমণ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, হিংসা ছড়ান। দেখুন আবার আমাকে ক্যামেরা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল! দেখুন স্যার, আমাকে দেখানো হচ্ছে না!
(স্পিকার ওম বিড়লা: বার বার ভগবান শিবের ছবি দেখানো ঠিক নয়। সংসদের মর্যাদা রক্ষা করুন। সরকারের তরফে রাহুলকে থামানোর আবেদন। পাল্টা প্রতিবাদ বিরোধীদের। রাহুলের ভাষণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ।)
আরও পড়ুন:মোদির সঙ্গে মাথা নত করে করমর্দন! ওম বিড়লাকে কর্তব্য মনে করালেন রাহুল গান্ধি
রাহুল: সত্যকে আটকাতে পারবেন না। NEET-এর জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নেন পড়ুয়ারা। পরিবারের তরফে মানসিক ভাবে, অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা হয়। কিন্তু বর্তমানে NEET-এর উপর আস্থা নেই পড়ুয়াদের। ধনী সন্তানদের জন্যই এই পরীক্ষা, মেধার কোনও মূল্য নেই বলে মত তাঁদের। একাধিক পড়ুয়াদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁদের মতে, NEET এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ধনীসন্তানদের সুযোগ করে দেওয়া যায়। দরিদ্ররা পৌঁছতেই না পারেন। প্রশ্নফাঁস, টাকাপয়সার কথা না ভেবেই প্রস্তুতি নেন পড়ুয়ারা। সেখানেও ভয় ঢুকে গিয়েছে মনে। এঁরা সুযোগ পেলই ভয় দেখায়, সেনা, কৃষক, মহিলা, শ্রমিক-মজুর এমনকি প্রতিবন্ধীদেরও। শুধু দেশেই নয় নিজেদের দলেও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। এটাই সত্য। দেখুন এখন কিন্তু চিৎকার করছেন না! কারণ সত্যের মুখোমুখি হয়ে চিৎকার করতে পারছেন না। গণতন্ত্রে আমাদের যে কোনও দলের, যে কেউ, যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু আপনাদের দলে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। স্যর, আমি যখন বিরোধী দলনেতা হলাম, একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, যা আগে কখনও চোখে পড়েনি। আমি বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন, আকাঙ্খা, সব সরিয়ে রেখেছি। আমি সাংবিধানিক পদে রয়েছি, বিরোধীদের সকলের কথা সমান ভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব আমার। হেমন্ত সোরেন, কেজরিওয়াল জেলে থাকলে, আমার চিন্তিত হওয়ার কারণ হয়েছে। আপনারা যখন বিরোধীদের উপর এজেন্সি ছেড়ে দেন, আমাদের কাজই হল তাঁদের রক্ষা করা। সাংবিধানিক দায়িত্বে এলে ব্যক্তিগত জায়গা থাকে না। মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়। আদর্শ জনপ্রতিনিধি তিনি, যাঁর ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্খা কিছু নেই। আমি বিরোধী দলনেতা। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। কেন এই কথা বলছি? আমি দুঃখিত যে এই কথা বলতে হচ্ছে আমাকে। আপনি যখন স্পিকার নির্বাচিত হলেন, আমি আপনার কাছে এগিয়ে গেলাম আসন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। আপনি লোকসভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। আপনি বলতে দেবেন, না দেবেন না, তার উপর গণতন্ত্র নির্ভর করে। স্পিকারের আসনে এখন দুই ব্যক্তি রয়েছেন, একজন স্পিকার, অন্য জন ওম বিড়লা। যখন মোদিজি এবং আমি আপনার সঙ্গে করমর্দন করতে গেলাম, একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। আমার সঙ্গে করমর্দনের সময় আপনি মাথা উঁচু করে, সোজা দাঁড়িয়ে হাত মেলালেন। যখন মোদিজির সঙ্গে হাত মেলালেন, মাথা নত করে ঝুঁকলেন।
(সরকারের তরফে বিক্ষোভ। আসনের অপমান বলে মন্তব্য অমিত শাহের।)
(স্পিকার ওম বিড়লা: প্রধানমন্ত্রী লোকসভার নেতা। আমার সংস্কৃতি শিখিয়েছে, বড়দের সামনে মাথা নত করে নমস্কার করতে। সমবয়সিদের সামনে সোজা থাকাই রীতি। আসনে বসেই বলছি, বড়দের সামনে মাথা নত করে, প্রয়োজনে পা ছুঁয়ে নমস্কার করা আমার সংস্কৃতি।)
রাহুল: স্পিকার স্যার, আপনার কথা মানছি। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলতে চাই, লোকসভায় স্পিকারের চেয়ে বড় কেউ নন। স্পিকার সবচেয়ে বড়। আমাদের উচিত আপনাদের সামনে মাথা নত করা। সব বিরোধীরাও মাথা নোয়াবেন। আপনি লোকসভার নেতা, কারও সামনে মাথা নত করা উচিত নয় আপনার। স্পিকারের কথাই শেষ কথা। লোকসভায় স্পিকারের অধীনেই আমরা সকলে। কেউ কেউ তা না মনে করলেও, আমরা বিরোধীরা এটাই মনে করি। এই লোকসভায় নিরপেক্ষতা থাকা দরকার, আমার ভাষণ চলাকালীন আগাগোড়া বাধা দেওয়া হয়েছে, যা অন্যায়। সত্য, সাহস এবং অহিংসার কথা বলা রয়েছে সব ধর্মে। আপনারা অসত্য, ভীরুতা এবং হিংসার আশ্রয় নিয়েছেন। আমারা চাই বা না চাই, মানুষ আপনাদের সরকারকে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে বলব, দেশে ভয় ছড়াবেন না, ঘৃণা ছড়াবেন না। কৃষকদের কথা, পড়ুয়াদের কথা শুনুন, বিরোধীরা আলোচনা চাইলে অনুমতি দিন, কারও ক্ষতি হবে না। কেউ ভয় পাবেন না। সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, নির্ভীক হোন। আমরা বিরোধীরা আপনাদের শত্রু নন। আপনারা নীতি মেনে চললে, আমরা আপনাদের কাজ সহজতর করে তোলার জন্যই রয়েছি আমরা। যে কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য তৈরি আমরা। দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদেরও কাজ করতে দিন। আপানারাই সরকারে, আমরা অভিনন্দনও জানিয়েছি। আমরা দুই পক্ষই দেশের জন্য কাজ করতে চাই। ঘৃণা, হিংসা ছাড়াই সেই কাজ হোক।