প্রতারক পল্টুরামের বিহারে আজ রাহুল, খেলা হবে?
Bharat Jodo Nyay Yatra: এই পালাবদলের বিহারে ঢুকেছে রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। ২০২০ বিধানসভা ভোটের পরে এই প্রথম বিহারে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি।
বাংলা ঘুরে বিহারে পা রেখে ফেলেছে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। সেই বিহার, যেখানে একদিন আগেই ঘটে গিয়েছে বিরাট বড় রাজনৈতিক পালাবদল। ফের দল পাল্টেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। দিন কয়েক আগেই এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছিল জেডিইউ। তার পরে ফের পাল্টি খেলেন নীতীশ। দু'দিন আগেই ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি। যার ফলে বিহারের রাজনৈতিক আবহ অনেকটাই বদলে গিয়েছে রাতারাতি। তার মধ্যেই বিহারে ঢুকে পড়ল কংগ্রেসের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'।
শিয়রে লোকসভা ভোট। তার আগে সব দলই নিজের মতো করে প্রচার ও জনসংযোগে ব্যস্ত। ভারত জোড়ো যাত্রা এই নিয়ে দু'বছরে পড়ল। গত ১৪ জানুয়ারি মণিপুর দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল কংগ্রেস। সেখান থেকে কনভয় পৌঁছেছিল অসমে। অসম থেকে গত ২৫ তারিখই বাংলায় এসেছিল যাত্রা। তবে ওইদিন জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় দিল্লি উড়ে যেতে হয়েছিল রাহুলকে। তবে গত ২৮ তারিখ তথা রবিবার ফের বাংলায় ফেরে যাত্রা। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে ম্যাজিকের পর সোমবারই কিসানগঞ্জ দিয়ে বিহারে ঢুকে পড়ে রাহুলের যাত্রা।
আরও পড়ুন: মমতা নেই, নীতীশ নেই! বিজেপির বিরোধিতা করতে ইন্ডিয়া জোটে রইল কারা?
বৃহস্পতিবার যখন দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন রাহুল, তখনও কি তিনি জানতেন, বিহারে এত বড় একটা চমক অপেক্ষা করছে তার জন্য। নীতীশ অবশ্য বরাবরই এমন করে পক্ষ বদল করেছেন। কখনও তিনি এ ডালে, তো কখনও ও-ডালে। এই তিনি বিজেপিতে আছেন, পরের মুহূর্তেই তিনি মহাগাঁটবন্ধনে কংগ্রেসের শরিক। বিজেপি বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটেও তার অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে হঠাৎ করে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সব কিছুই কেমন ঘেঁটে গিয়েছে। যদিও বিহারে মুখ্যমন্ত্রী পদেই থেকে গিয়েছেন নীতীশ। রবিবারই পদত্যাগ করে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। কিন্তু বিহারে জেডিইউ সরকারের এখন নতুন শরিক বিজেপি ও জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা। এই পালাবদলের বিহারে ঢুকেছে রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। ২০২৪ সালে যার স্লোগানই হল 'নফরত কি বাজার মে মহব্বত কি দুকান'।
সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলার সোনাপুর থেকে সকাল এগারোটা নাগাদ বিহারের কিসানগঞ্জ পৌঁছন রাহুল। মূলত সংখ্যালঘু ভোটই বেশি এই অলাকায়। ২০০৯ সাল থেকেই কিসানগঞ্জ কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে। কিসানগঞ্জ থেকে মঙ্গলবার পূর্ণিয়া যাওয়ার কথা রাহুলের, সেখান থেকে কাটিহারে যাবে কংগ্রেসের যাত্রা। এই দুটি জেলাতেই কিন্তু জেডিইউ-র যথেষ্ট প্রতাপ। স্বাভাবিক ভাবেই যাত্রা শুরুর আগে কংগ্রেসের কাছে এই দুটি এলাকাই ছিল হোমল্যান্ড। তবে রাতারাতি বদলে গিয়েছে সেই সমীকরণ।
২০২০ বিধানসভা ভোটের পরে এই প্রথম বিহারে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। ২০২০ সালে এনডিএ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে সেই জোট ছেড়ে বেড়িয়ে আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলান নীতীশ। তবে কোনও কিছুই যেন বেশিদিন সয় না তাঁর। অগত্যা পুনরায় দলবদল। পুনরায় হাত মেলানো বিজেপির সঙ্গে। এই পালাবদল কংগ্রেসের পক্ষে তো বটেই, 'ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষেও বেশ অস্বস্তিকর। যদিও কংগ্রেস নেতারা বিশেষ আমল দিচ্ছেন না নীতীশের এই পাল্টি খাওয়ার ব্যাপারটি। জয়রাম রমেশের মতো বহু প্রবীণ নেতাই জানিয়েছেন, এমনটাই করে থাকেন নীতীশ। দেশের রাজনৈতিক মহল তেমনটাই দেখে অভ্যস্ত। এর কোনও প্রভাব ইন্ডিয়া জোটের উপর পড়বে না বলেই জানিয়েছেন তারা।
রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বিহারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আরজেডি ও সিপিআই(এমএল)-এল-কেও। পূর্ণিয়ার জনসভায় আসার কথা রয়েছে ওই দু'টি দলের প্রতিনিধি দলের। সেই জনসভায় যা যা বলবেন বলে ভেবে এসেছিলেন রাহুল, নীতীশের ভোলবদলের পর স্বাভাবিক ভাবেই তা বদলে গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তাঁর বক্তৃতায় নীতীশের এই পাল্টিবাজির কথা বারবার করে আসতে চলেছে। ইন্ডিয়া জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রীর মুখ ও কংগ্কেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে নীতীশ কুমারকে 'আয়া রাম গ্যায় রাম' বলে তোপ দেগেছেন। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার ব়্যালিতে সেই সমস্ত বিষয়ই আসতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিজেপির সঙ্গে কতদিন থাকবেন নীতীশ? ভবিষ্যদ্বাণী প্রশান্ত কিশোরের…
জেডিইউ অর্থাৎ নীতীশের দল অবশ্য কংগ্রেসকে বেশ কিছুদিন ধরেই কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদের ইন্ডিয়া জোটের একতাকে বহুদিন ধরেই নষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে কংগ্রেস। এদিকে, ইন্ডিয়া জোট তৈরির নেপথ্যে কিন্তু অন্যতম মুখ ছিলেন নীতীশ নিজেই। অথচ সেই নীতীশই আজ দল বদলে বিজেপিতে। আপাতত জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্য কংগ্রেসকেই দুষেছে বিহারের জেডিঅই। প্রবীণ জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগীর মতে, জোট শেষ হচ্ছে কংগ্রেসের অহংকারেই। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বৈরথের জেরে ইন্ডিয়া জোটে ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তার উপর বিহারে নীতীশের পালাবদল। পঞ্জাব, হরিয়ানাতেও একা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ। সব মিলিয়ে ভোটের ঠিক আগে আগে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। এবার ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্য়ত নিয়ে এইসব সওয়ালের প্রভাব রাহুলের 'ভারত জোড়ো যাত্রা'-য় কতটা পড়বে, সেটাই দেখায়। নীতীশের পালাবদলের প্রভাব কি দেখতে পাবে বিহারে রাহুলের 'যাত্রা', সেটাও দেখার।