আকাশে ৪৮ কেজি নুন ছড়িয়ে বৃষ্টি ঘটায় 'মেঘধরা' দল! অসম্ভবকে বাস্তব করেছে এই দেশ

Rain Making With Salt: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,০০০ ফুট উপরে, বিমানটি আকাশে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সাদা মেঘের মধ্যে নুন ছড়িয়ে দেয়।

খটখটে শুকনো দেশ। রোদের কড়া তাপে দেহ পুড়ে যায়। সারা দেহ ঢাকা রাখতে হয় পোশাকে। তাই দেশে রয়েছে মেঘধরা দল! আকাশে একফালি মেঘ দেখলেই মেঘধরা দলের সবাই মিলে হামলে পড়েন সেই মেঘকে ধরে বেঁধে বৃষ্টি ঘটাতে। কিন্তু ওই তো সামান্য কিশোরী মেঘ, তাতে দেশ ভেজানোর বৃষ্টি সম্ভব কীভাবে? এক অভাবনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃষ্টি তৈরি করে এই দেশ। আকাশে টুইন-টার্বোপ্রপ বিমান ওড়ানো হয়। জ্বলন্ত মরুভূমির উপর দিয়ে উড়তে থাকা এই বিমান আকাশে কিলো কিলো নুন ছড়ায়! আর তাতেই নামে বৃষ্টি! কীভাবে সম্ভব এমন?

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ এবং শুষ্কতম অঞ্চল। বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হয় এখানে। তাই মেঘের বীজ বপন করে বৃষ্টিপাত বাড়ানোর চেষ্টায় বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পর্যটন বৃদ্ধির কারণে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে জলের চাহিদা বাড়িয়েছে। সামুদ্রিক জলকে পরিশ্রুত করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যয়বহুল ডিস্যালিনেশন প্লান্টের ওপর নির্ভরশীল এই দেশ।

আরও পড়ুন- শুকোচ্ছে ফুসফুস, আয়ু কমছে কলকাতার! অতিবৃষ্টিতে জল জমা নিয়ে ভয়াবহ তথ্য

এই অবস্থায় বৃষ্টির জল পেতে হলে দরকার বৃষ্টি, কিন্তু মেঘ কই? আকাশে ঝটখটে রোদ। যে খণ্ড মেঘ দেখা দেয় তা বৃষ্টি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত নয়। তাই আরব দেশে মেঘের বীজ বপন করা হয়! হ্যাঁ, প্রযুক্তির ভাষায় একে বলে ক্লাউড সিডিং। ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য বৃষ্টি ঘটাতে পারে এমন মেঘের প্রয়োজন। এটাই আরবের সবচেয়ে বড় সমস্যা কারণ মেঘই নেই। তাই দুর্দান্ত এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। আকাশে বিমানের মাধ্যমে নুন ছড়ানো হয়। বিমানের ডানার সঙ্গে যুক্ত থাকে কয়েক ডজন নুনের ক্যানিস্টার। বিমান আকাশে ওড়া মাত্রই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর আবহাওয়াবিদ আবদুল্লাহ আল হাম্মাদি মেঘ গঠনের জন্য কম্পিউটারের পর্দায় আবহাওয়ার মানচিত্র স্ক্যানিং শুরু করেন।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,০০০ ফুট উপরে, বিমানটি আকাশে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সাদা মেঘের মধ্যে নুন ছড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা মেঘের ঘনীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য মেঘের মধ্যে সল্ট ন্যানো পার্টিকেল ছড়িয়ে দেন। নুন জলকে আকর্ষণ করে। এই হাইগ্রোস্কোপিক বা জল-আকর্ষণকারী প্রক্রিয়ায় নুন মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কারণ তা বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ার মতো যথেষ্ট বড় ফোঁটা তৈরি করে। বৃষ্টির মেঘের তলদেশ প্রাকৃতিকভাবে নেগেটিভ চার্জযুক্ত জলে পূর্ণ। পজিটিভ চার্জযুক্ত কণার স্রোতের সঙ্গে যদি মেঘের ধাক্কা লাগে তাহলে জলের ফোঁটাগুলি একত্রিত হবে। এই সংঘাত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘটলে বর্ষণযোগ্য বৃষ্টি তৈরি হতে পারে। ক্লাউড সিডিং প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের হার বাড়ায়। ডিস্যালিনেশন প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক কম খরচে ক্লাউড সিডিং অপারেশন করা যায়।

আরও পড়ুন- লাল রঙের বৃষ্টি ঘিরে আজও রহস্য, কুড়ি বছর আগে কী ঘটেছিল কেরলে?

ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব হাইল্যান্ডস অ্যান্ড আইল্যান্ডসের আবহাওয়াবিদ এডওয়ার্ড গ্রাহাম জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ক্লাউড সিডিংয়ে যে লবণ ব্যবহার করা হয় তা পরিবেশের কোনও ক্ষতি করে না। আর বিমান চালনায় কার্বনের ব্যবহারের প্রেক্ষিতে বলা যায়, মেঘের মধ্যে উড়ে যাওয়া প্লেনগুলি ছোট প্লেন। এই গ্রহের কোটি কোটি গাড়ি এবং প্রতিদিন উড়ান দেওয়া আন্তর্জাতিক বিমানগুলির তুলনায় এটি কিছুই নয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে বৃষ্টিপাত বাড়ানোর জন্য ক্লাউড সিডিং বিজ্ঞানীরা দেড় মিলিয়ন ডলারের অনুদানও পেয়েছেন। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ২০০ টিরও বেশি ক্লাউড সিডিং অপারেশন তত্ত্বাবধান করেছে আরব যা দেশে সফলভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতও ঘটিয়েছে।

More Articles