তদন্ত নিয়ে আন্তরিক নয় মমতার সরকার! আরজি কর নিয়ে যা বললেন রাজনাথ সিং

Rajnath Singh on RG Kar Rape: প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জোর দিয়ে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের আটকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে।

আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ২০ দিন পরে এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এবার আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত ও বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। উল্লেখ্য, আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। যদিও এই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তথা কেন্দ্রের শাসক বিজেপির শীর্ষস্তরের বহু নেতাই একেবারে মৌন। গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এই ঘটনার প্রতিবাদে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। তারপর বনধ ডাকে বিজেপি। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বিজেপির শীর্ষ নেতারা কথা বলতে শুরু করেছেন আরজি কর প্রসঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, অনেক রাজ্যই মহিলাদের বিরুদ্ধে ক্রমশ বাড়তে থাকা অপরাধ মোকাবিলায় আন্তরিক প্রচেষ্টা করছে না।

আরজি কর মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণকে 'অসম্মানজনক' বলে মন্তব্য করে রাজনাথ বলছেন, এই ক্ষেত্রে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিরুবনন্তপুরমে এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, "এত পরিবর্তন সত্ত্বেও দেশে নারীর প্রতি নৃশংসতা এবং অপরাধ বিবেচনা করে মনে হচ্ছে এখনও অনেক কিছুই করা বাকি আছে। আমাদের সরকার নারীদের সঙ্গে ঘটা অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে কিন্তু অনেক রাজ্যই এই নিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা করছে না।"

আরও পড়ুন- “আপনার মেয়েকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি”, ধর্ষিতার বাবা-মাকে ৩ বার ফোনে কী কী বলা হয়?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জোর দিয়ে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের আটকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। আরজি করের ঘটনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলছেন, "কলকাতার সাম্প্রতিক হৃদয় বিদারক ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক এবং কলঙ্কজনক। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখতে আমরা আইন সংশোধন করেছি। এই আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত।" এই বছরের শুরুতেই দেশের ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু করা হয়। এই বিধি অনুযায়ী, ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷

আরও পড়ুন- প্রতি ৩ জনে ১ জন ডাক্তারই অনিরাপদ! হাসপাতালের ভয়াবহ পরিস্থিতি ফাঁস সমীক্ষায়

৩১ বছর বয়সি ওই তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে, মহিলাদের জন্য নিরাপদ কাজের পরিবেশের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষুব্ধ মানুষ পথে নেমেছে। সাম্প্রতিককালে, নাগরিকদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত পথে নামা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক ঘটনা। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে প্রাথমিক অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করে। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের এই সরকারি হাসপাতালের অবাধ যাতায়াত ও প্রবেশাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালের অন্দরে কেন চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গাটুকুও নেই? এই ঘটনায় ১৪ দিন ধরে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। অথচ তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সংশয় কাটছে না। উল্টে প্রতিনিয়ত তথ্য প্রমাণ লোপাটের ভয়াবহ অভিযোগ উঠছে।

এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আরজি কর এক বিশাল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। বিরোধী বিজেপি এবং বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেসের সমালোচনার মুখেও পড়েছে তৃণমূল। লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধি বলেছেন, "নির্যাতিতাকে ন্যায়বিচার দেওয়ার পরিবর্তে অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করার বিষয়টি হাসপাতাল এবং স্থানীয় প্রশাসনের দিকেই গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।" এই অবস্থায় নবান্ন অভিযান ও বনধের ডাক ছিল বিজেপির প্রথম সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নেমে করা প্রতিবাদ। মামলার তদন্তের ভার আছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইয়ের হাতেই। ফলে সমস্ত বিরোধীদের চাপ তো বটেই, সাধারণ মানুষের ক্ষোভের চাপের মুখে রয়েছে তৃণমূল সরকার।

More Articles