ফোর্ড কোম্পানি এখন তাঁর দখলে, যেভাবে অপমানের যোগ্য জবাব দিলেন রতন টাটা

Ratan Tata : টাটা মোটরস বনাম ফোর্ড লড়াইয়ে জয় হয় রতনজীরই

একবার জার্মানির এক রেস্তোঁরায় খেতে গিয়েছিলেন রতন টাটা। সেখানেই ঘটে গেল অদ্ভুত এক ঘটনা। অর্ডার দেওয়ার সময় রতন টাটা বুঝতে পারেননি ঠিক কতটা খেতে পারবেন। ফলে যা হওয়ার তাই হল। অর্থাৎ খাবার অপচয়। কিন্তু এ তো ভারতবর্ষ নয়, জার্মানরা এ বিষয়ে খুব কড়া। এর দায়ে রতন টাটাকে জরিমানা দিতে হল কড়কড়ে ৫০ ইউরো। ঘটনা যদি কেবল এটুকুই হতো তবে তো ফুরিয়ে যেত! কিন্তু এই মানুষটি এমনই এক ব্যক্তিত্ব যিনি জীবনের প্রতিটা পরতে পরতে শিখেছেন। বয়ে বেড়িয়েছেন সবটুকু রসদকে। অতীতকে স্বীকার করতে না পারলে সাধারণ একটা ঘর থেকে আজকের এই সফরটা এতো সহজ হতো না।

রতন টাটা। এ নাম ঘিরে রয়েছে পরিশ্রম আর স্বপ্নপূরণের গল্প। ১৮৬৮ সালে যাত্রা শুরু টাটা গ্রুপের। আর রতন টাটা সেই গ্রুপের চেয়ারম্যান হন ১৯৯১ সালে। তারপর থেকে ম্যাজিকের মতো ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। মোটরগাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে স্টিল, বেভারেজ, সফটওয়্যার সহ প্রথম সারির বহু ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকেন টাটাজি। ফলও মেলে চমৎকার। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে ভারতের বুকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে টাটা গ্রুপই।

কিন্তু এই এতো সাফল্যের পিছনে সব কিছুই কি খুব সহজ ছিল? নিশ্চয় নয়। ওই যে আগেই বলা হল তিনি অতীতকে অস্বীকার করেছেন বলেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা এতো অন্যরকম হয়েছে। আর এ প্রসঙ্গেই উঠে আসে টাটা বনাম ফোর্ড বিতর্ক-এর কথা।

আরও পড়ুন : আকাশপথে ‘বিপ্লব’? ভারতকে যে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রতন টাটা

সেসময়ে নামজাদা কোম্পানি ফোর্ড। গর্বে দম্ভে সে তখন আকাশচুম্বী। শোনা যায়, একবার রতন টাটাকে সাংঘাতিক অপমান করেছিল ফোর্ড কোম্পানি। তার জেরও চলেছে বহুদিন। টাটা মোটরস বনাম ফোর্ড লড়াই নিয়ে অনেক আলোচনা, পর্যালোচনাও রয়েছে। কিন্তু কথায় বলে না, “অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে!” এও হচ্ছে সেই দশা। সব অপমান জমা ছিল যত্ন করে, সময় মতো ফিরিয়ে দিলেন তিনি।

২০০৮ সাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অপমান ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সে বছর ফোর্ডের কাছ থেকে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনে নিল রতন টাটার কোম্পানি টাটা মোটরস। কিন্তু এতেই হিসেব মেটেনি। অপমানের ঘা শুকাতে আরও অনেকটা পথ চলতেই হতো। অবশেষে গোটা ফোর্ড কোম্পানিটিই কিনে নেন রতন টাটা। এবং ফোর্ড কোম্পানির ভারতীয় বিভাগের পুরো ব্যবসার ভারই কাঁধে তুলে নেয় টাটা মোটরস।

বিগত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের মাটিতে ব্যবসা করেছে মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড। কিন্তু আমেরিকার এই কোম্পানিকে এদেশ কোনওদিনই বিশেষ জাঁকিয়ে বসতে দেয়নি। তার ওপর রতন টাটার প্রতিশোধ স্পৃহা তাতে ঘৃতাহুতি দেয়। না এ প্রতিশোধে কোনও মারামারি, রক্তারক্তি নেই। তবে সুস্থ ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়েই সেদিনের অপমানের যোগ্য জবাব ফিরিয়ে দিতে পেরেছে টাটা মোটরস-এর কর্ণধার। দীর্ঘ আলোচনার পর যৌথ সিদ্ধান্তে আসে ফোর্ড এবং টাটা মোটরস। পুরোপুরি হস্তান্তরিত হয় ব্যবসা। অবশেষে ২০২১ সালে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফোর্ড কোম্পানি। কিন্তু এ কি কেবলই একটা চিরকেলে দ্বন্দ্বের জয়? এককথায় ইতি টানা মুশকিল। এ যে রতন টাটার নতুন স্বপ্ন পূরণের সফরে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নয়, তা মোটেই বলা চলে না। 

More Articles