নারীসুরক্ষার দাবিতে রাত দখল অভিযানে গোটা বাংলা! দেখে নিন কোথায় কোথায় রাতমিছিল?
R G Kar Hospital Incident Protest: আন্দোলনের প্রাথমিক আহ্বানে ওই জমায়েতের স্থান হিসেবে তিনটি জায়গার কথা বলা হয়েছিল— কলেজ স্ট্রিট, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ড।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে এক ট্রেনি চিকিৎসককে নির্মম ভাবে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশ জুড়ে। বুধবার গোটা রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা আট ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ভারত ছাপিয়ে দিল্লি, মুম্বই, কর্ণাটকের মতো অন্যান্য রাজ্যেও। এরই মধ্যে কলকাতা শহরের বুকে একাধিক জায়গায় রাত দখলের ডাক দিলেন মেয়েরা।
প্রাথমিক ভাবে যা ছিল প্রতীকী আন্দোলন, তা বারুদের মতো ছড়িয়ে পড়েছে কার্যত পশ্চিমবঙ্গের গোটা মানচিত্র জুড়ে। দলহীন, পতাকাহীন সেই আন্দোলনে ছড়িয়ে গিয়েছে হাতে হাতে। গত শুক্রবার আরজি করের ওই চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল আরজি করের জরুরি বিভাগ বিল্ডিংয়ের চার তলার সেমিনার রুম থেকে। সে সময় কলেজের অধ্যক্ষ নিজের বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, অত রাতে সেমিনার রুমে কী করছিলেন ওই চিকিৎসক। যেখানে বৃহস্পতিবার রাতে নাইট ডিউটিতে বহাল ছিলেন ওই চিকিৎসক। এর পরেই রাতদখলের দাবিতে সরব হন মেয়েরা। রাতের শহরে নিজেদের নিরাপত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আন্দোলনের চেহারা নেয় সেই ডাক। দলহীন, পতাকাহীন সেই আন্দোলনে আমন্ত্রিত সকলে। সমস্ত দলমত নির্বিশেষে সাড়া দিয়েছেন সেই বিশেষ প্রতিবাদে।
১৪ অগস্ট রাত সাড়ে এগারোটার পর কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল করবেন মেয়েরা। শঙ্খধ্বনিতে হবে প্রতিবাদ। প্রাথমিক ভাবে ভাবনা ছিল তেমনটাই। শহরের দু'তিনটি জায়গার কথাই ভাবা হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা শহর এমনকী জেলাতেও।
আরও পড়ুন: রাত দখলের পর নিরাপদে ঘরে ফিরবেন তো মেয়েরা? থাকছে ওলা, উবের
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরাট আকার নিয়েছিল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। তার পরে এত বছর পর তেমনই ভয়াবহ ঝড় উঠেছে আরজি করের এই চিকিৎসক খুনকে ঘরে। এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে। যে আন্দোলনের প্রতীকী নাম ছিল ‘রিক্লেম দ্য নাইট’। বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’। এক মাইক্রো বায়োলজিস্ট খুনের ঘটনায় পথে নেমেছিল শহর। তার অনুপ্রেরণায় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় এ ধরনের আন্দোলন হয়েছে। ২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরেও এমন আন্দোলন হয়েছিল বেশ কয়েকটি জায়গায়।
আরজি কর কাণ্ডের পর প্রথম যে পোস্টারটি ছড়িয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেখানে স্বাধীনতা দিবসের আগে, অর্থাৎ ১৪ অগস্ট (বুধবার) রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে মেয়েদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়। সোমবার রাত থেকেই তা অন্য মাত্রা পেতে শুরু করে। কার্যত গোটা রাজ্যের মানচিত্র জুড়েই ছড়িয়ে যায় সেই ঢেউ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা শহর এবং মফস্সল সাড়া দিয়েছে সেই আন্দোলনে। বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মতো করে মহিলারা ওই আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছেন। জমায়েত করতে উদ্যোগী হচ্ছেন।
আন্দোলনের প্রাথমিক আহ্বানে ওই জমায়েতের স্থান হিসেবে তিনটি জায়গার কথা বলা হয়েছিল— কলেজ স্ট্রিট, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ড। পরে তা বিরাট আকার ধারণ করতে করতে ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরময়। এখনও পর্যন্ত যেখানে যেখানে এই রাত দখল মিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে, তার মধ্যে ওই তিনটি জায়গা তো রয়েইছে। তার সঙ্গে রয়েছে নিম্নে উল্লিখিত জায়গাগুলিও। দেখে নিন সেই তালিকা।
- অশোকনগর চৌরঙ্গী মোড়
- আরামবাগ, হুগলি
- আসানসোল, ভগৎ সিং মূর্তির পাদদেশ
- আড়িয়াদহ, অনাথ ভান্ডার হাসপাতাল মোড়
- আন্দুল বাস স্ট্যান্ড, হাওড়া
- ইছাপুর - স্টোর বাজার
- ইছাপুর আনন্দময়ী আশ্রম
- ইংলিশ বাজার, মালদহ
- এক নম্বর এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড
- অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস
- এডকোনগর স্পোর্টিং ক্লাব, আদিসপ্তগ্রাম, হুগলি (রাত ১১ টা থেকে)
- এস. এম. নগর।
- উত্তরপাড়া কলেজ মোড়
- উত্তরপাড়া সখের বাজার
- উষুমপুর বটতলা ত্রিকোণ পার্কের সামনে
- কলেজ স্ট্রিট
- কোর্ট মোড়, শিলিগুড়ি
- ক্যানিং
- কার্জন গেট, বর্ধমান
- কোচবিহার, সাগরদীঘি ডিসট্রিক্ট লাইব্রেরির সামনে
- কোচবিহার দাস ব্রাদার্স মোড়
- কেষ্টপুর বাসস্টপ
- কাঁচরাপাড়া
- কলেজ হল্ট, আলিপুরদুয়ার
- কোন্নগর চচ্চিত্রমের কাছে
- কোন্নগর নবগ্রাম
- কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়
- গ্রিনফিল্ড সিটি, মেইন গেট
- গোলাপবাগ মোড়, বর্ধমান
- গড়িয়া মোড়
- চৌরঙ্গী মোড়, অশোকনগর
- চন্দননগর, নৃত্য গোপাল স্মৃতি মন্দির
- চন্দননগর স্ট্যান্ড
- চুঁচুড়া, পিপুলপাতি মোড়
- চাকদহ থানার মোড়
- জলপাইগুড়ি , সদর হাসপাতাল
- ঝাড়গ্রাম পাঁচমাথার মোড়
- ডানলপ মোড়
- ডানলপ খালসা মডেল স্কুল
- দমদম ক্যান্টনমেন্ট, গোরা বাজার, যশোদা মোড়
- দুর্গাপুর চতুরঙ্গ মাঠ
- নাগেরবাজার বাসস্ট্যান্ড
- নাগেরবাজার মোড়
- নুঙ্গি মোড়, বাটামোড়
- নবদ্বীপ
- নীলদর্পণ, বনগাঁ
- পঞ্চুর চক, মেদিনীপুর
- পুরুলিয়া , চকবাজার
- পর্ণশ্রী পোস্টঅফিস
- ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল গেট
- পাওয়ার হাউস মোড়, হাওড়া
- বারাসাত স্টেশন, ১ নম্বর প্লাটফর্ম
- বারাসাত, বিশাল মেগা মার্টের সামনে
- বারাসাত ডাকবাংলো মোড়
- বহরমপুর
- ব্যারাকপুর স্টেশন চত্বর
- বারুইপুর, পদ্মপুকুর।
- বাঁকুড়া কৃষক বাজার
- বি.ই কলেজ
- বাগুইহাটি, কলকাতা
- বিশ্ব বাংলা গেট, নিউটাউন, রাত ১১টা
- বালি খাল
- বাঁশবেড়িয়া পৌরসভা
- বজবজ প্যায়েস্টার মোড়
- বৈদ্যবাটি ১১ নম্বর রেল গেট
- ব্যাঙ্গালোর, সিল্ক বোর্ড জংশন
- বি টি রোড, রথতলা
- বেলেঘাটা সি আই টি মোড়
- মন্দিরতলা
- মধ্যমগ্রাম চৌমাথা মোড়
- মধ্যমগ্রাম চৌমাথা মন্দিরতলা
- মেছেদা, পূর্ব মেদিনীপুর
- রবীন্দ্রভবন সম্মুখে, পায়রাডাঙা
- রামপুরহাট পাঁচমাথার মোড়
- রায়গঞ্জ, ঘড়িমোড়
- রতনপল্লী, বোলপুর
- রামরাজতলা পুরনো বাসস্ট্যান্ড
- রাসবিহারী মোড়
- রিষড়া চারবাতি মোড়
- লেকটাউন ও যশোর রোড সংযোগস্থলে
- শ্যামনগর চৌরঙ্গী মোড়
- শিবপুর চ্যাটারজী হাট বাসস্ট্যান্ড
- শ্রীরামপুর পশ্চিম
- শিলিগুড়ি, বাংলা পার্ক
- শিলিগুড়ি, বাঘা যতীন পার্ক
- শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়
- সোদপুর, বি টি রোড ক্রসিং
- সল্টলেক ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক
- সিঁথির মোড়
- হাবড়া, এক নম্বর রেল গেট
- হাওড়া ডোমজুর, অন্নপূর্ণা মিষ্টির দোকানের বিপরীতে প্রতিবাদ সভা রাত ৯টা থেকে
- হরিদেবপুর
- হালিশহর, চৌমাথা বাজার মোড়
- হলদিবাড়ি ট্রাফিক মোড়
- হাওড়া পাওয়ার হাউস মোড়
- হাওড়া জগাছা
- হাওড়া জগাছা থানা
- রুবি হাসপাতালে র উল্টো দিকে ভিভান্তা হোটেলের সামনে
- পূর্বালোক
- অম্বুজা ও ক্যালকাটা গ্রীণ আবাসন, সন্তোষপুর
- বারুইপুর পদ্মপুকুর ও হরিণাভি মোড়
এই রাত দখল আন্দোলনের অভিমুখ বা দিশা নিয়ে বিভিন্ন মতও রয়েছে। যাদবপুরের জমায়েতের ক্ষেত্রে যেমন রাজনৈতিক সংগঠনের পতাকা ‘নিষিদ্ধ’। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে ‘রাজনৈতিক স্লোগান’ দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র আরজি কর-কাণ্ডে নিহত চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি এবং মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতেই স্লোগান সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কোথাও আবার মহিলারা চান, শুধু মহিলারাই জমায়েতে আসুন। পুরুষদের আসার প্রয়োজন নেই। আবার অন্য অংশ বলছে, যে পুরুষ এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে চান, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া মানে আন্দোলনের পরিসরকে সঙ্কুচিত করে দেওয়া। এমনকী বিদ্বজন, তারকাদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়া নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু তারকাকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:সঙ্কট চরমে! চিকিৎসক সংগঠনের ডাকে এবার বন্ধ রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের আউটডোরও
এদিকে বামেদের পক্ষ থেকে মধ্যরাতে মেয়েদের রাস্তা দখলের এই আন্দোলনকে সরাসরি ‘রাজনৈতিক’ কর্মসূচি করার দাবি তোলা হয়েছে। যে কারণে সিপিএমের একটি অংশ সমাজমাধ্যমে লেখা শুরু করেছে, ‘আরজি কর-কাণ্ড যত তৃণমূলের মাথার দিকে ইঙ্গিত করছে, তত আন্দোলনকে অরাজনৈতিক করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’ সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন এসএফআই এবং ডিওয়াইএইআই বুধবার মধ্যরাতে জমায়েতের ডাক দিয়েছে আরজি কর হাসপাতালের সামনেই। সিপিএমের অন্য অংশ আবার চাইছে, জেলায় জেলায় ‘ঝান্ডাহীন’ হয়ে নাগরিক আন্দোলনে দলের কর্মী-সমর্থকেরা যাতে শামিল হন। সিপিএমের কেউ কেউ আবার বাংলাদেশের পড়ুয়া আন্দোলনের স্লোগানকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘হাতিয়ার’ করতে চাইছে। বাংলাদেশের আন্দোলন করে তোলার চেষ্টাও চলছে বহু ক্ষেত্রে এই আন্দোলনকে। এই রাত দখলের আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সীমিত না থেকে ছড়িয়ে গিয়েছে দিল্লি, ব্যাঙ্গালোরের মতো অন্যান্য শহরেও।