এক ইঞ্চি ভুঁড়ি বাড়লেই হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে বহুগুণ! ভয়াবহ তথ্য উঠে এল গবেষণায়
Heart Attack and Belly Fat: নতুন গবেষণা বলছে পেটের মেদ বয়ে আনছে মারাত্মক বিপদ। এমনকি সামান্য ভুঁড়িও নাকি স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
ঠাট্টা করে অনেকের মুখে শুনেছি, বাঙালিদের নজর সবসময় উঁচুর দিকে, মাটিতে তাকানো স্বভাবে নেই। অবশ্য তাকাবেই বা কীভাবে আগেই তো চোখ আটকে যাবে অতিকায় ভুঁড়িতে। তবে পেট জোড়া ভুঁড়ি মাত্রই সে বাঙালি এমনটা ভাবা ভুল। বরং বলা ভালো ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সর্বত্রই নানা ধরনের মানুষ থাকলেও তাঁদের মধ্যে ভুঁড়ির মিল রয়েছে। শুনে হাসি পেলেও নতুন গবেষণা বলছে পেটের মেদ বয়ে আনছে মারাত্মক বিপদ। এমনকী সামান্য ভুঁড়িও নাকি স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সংগঠিত এক গবেষণায় জানা গেছে, পেটের মেদ এক ইঞ্চি বাড়লেও হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা প্রায় ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। প্রায় চার লক্ষেরও বেশি মানুষকে পরীক্ষা করার পর এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন গবেষক দল। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজির এক আলোচনা সভাতে রিপোর্টটি পেশ করা হয়। গবেষকদের মতে, শরীরের ওজন কমানোর তুলনায় বেশি জরুরি পেটের মেদ একেবারে ঝরিয়ে ফেলা। একজন ব্যক্তি ওভারওয়েট কিনা তা তাঁর উচ্চতার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। তাই দেহের ওজন কয়েক কেজি কমানোর বদলে সকলের ভুঁড়ি কমানোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ভারতীয়দের জন্য কতখানি বিপদের?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, একই ওজনের একজন ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ব্যক্তির মধ্যে ভারতে থাকা ব্যক্তির হৃদরোগ এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয় ভারতীয়দের শরীরে ফ্যাট সঞ্চয়ের সম্ভাবনা বেশি। ফলস্বরূপ আমাদের দেশের মানুষদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। পেটের অতিরিক্ত ফ্যাট সঞ্চয়ের কারণে শরীরে ইলসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। অস্থিসন্ধির ব্যথাও বাড়ে এবং ট্রাইগ্লিসারয়েডের উৎপাদন বেড়ে যায় যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একথা আমাদের অনেকের জানা থাকলেও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এর সাপেক্ষে এক বড় ডেটাবেস তৈরি করলেন গবেষণা করে। তাই গবেষকরা বারে বারেই ঝুঁকি কমাতে পেটের মেদ কমানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।
ডায়েট ও শরীরচর্চার ভূমিকা
শুধু বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার নয় ভারতীয়দের মধ্যে উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা রয়েছে যা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট দেহে ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। সম্প্রতি ভারতীয় কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের তরফে জানানো হয়েছে, ৬০-৭৫ শতাংশ কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে ৫০-৬০ শতাংশ দেহশক্তি বাঁচানো সম্ভব হয়। একই সঙ্গে শরীর সুস্থ রাখতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চার প্রয়োজন। তবে যারা ব্যাস্ততার কারণে কাজের দিনগুলিতে শরীরচর্চা করে উঠতে পারেন না তাঁদের উচিৎ কাজের লাগানো। তবে শরীর ও হার্ট সুস্থ রাখা সম্ভব।
যে উপায়ে সহজে পেটের মেদ ঝরানো সম্ভব
১. ঋতুকালীন সবজি গ্রহণ
ঋতুকালীন সবজি শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি ফাইবারে ভরপুর। পালং শাক, বাঁধাকপির মতো সবজিতে ফাইবারের সঙ্গে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে উপস্থিত থাকে যা পেটের মেদ ঝরাতে কার্যকরী। আবার এই ধরনের সবজি দিয়ে স্যালাড বানিয়েও খেতে পারেন। নির্দিষ্ট মরশুমে পাওয়া যায় এমন ফলের রসও খেতে পারেন। তবে বাজারে প্যাকেটে বিক্রি হওয়া ফলের রস না খাওয়াই ভালো কারণ তাতে অতিরিক্ত সুগার থাকে এবং ফাইবার প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে।
২. নির্দিষ্ট ডায়েটের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান
অনেকেই কঠিন ডায়েট মেনে দীর্ঘদিন খাবার খেতে গিয়ে হাপিয়ে ওঠেন। তাই কঠোরভাবে ডায়েট প্ল্যান মেনে চলার থেকে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি বেছে নিন। খেয়াল রাখবেন যথাসম্ভব কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করুন। আর বুদ্ধি করে বাছুন টিফিনের পদগুলি। সকালের জলখাবারে জন্য আয়রন সম্পন্নফল বেছে নিতে পারেন যা শরীরকে শক্তি জোগাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও হারবাল পানীয়গুলিও রাখতে পারেন টিফিনে।
৩. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহলও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তার বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে গবেষণায়। চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের ফলে পেটে মেদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই মদ্যপান ছেড়ে দিলে সহজেই ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন বিশালাকার ভুঁড়িটি। দুহাজার মানুষের মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে মদ্যপান করেন তাঁদের ভুঁড়ি তুলনামূলক কম। বরং যারা একেবারে বেশি পরিমাণে মদ্যপান করেন তাঁদের শরীরে মেদের পরিমাণ অনেক বেশি।
৪. প্রোটিন যুক্ত খাবার খান
মেদ ঝরিয়ে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার দীর্ঘক্ষণ ধরে পেট ভর্তি রাখে এবং দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া প্রোটিন মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলে ফলে পেশির স্বাস্থ্য বজায় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার খান তাঁদের পেটে মেদ জমা হওয়ার পরিমাণ অন্যদের তুলনায় কম। তাই
আজই খাদ্যতালিকায় মাছ , মাংস, দুধ, ডিম, ডালের মতো প্রোটিনে ভরপুর খাবারগুলি খেতে শুরু করুন।
৫. কার্ডিও এক্সসারসাইজ করুন
শরীর সুস্থ রাখতে এবং দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে কার্ডিও এক্সারসাইজ খুবই কার্যকরী। পেটের মেদ ঝরাতে কার্ডিও এক্সারসাইজের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তবে এর সঙ্গে খেয়াল রাখা প্রয়োজন কেমন ধরনের কার্ডিও করছি। অতিরিক্ত ঘাম ঝরাতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে। আবার কতক্ষণ ধরে কতদিন শরীরচর্চা করছি তাও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। মানে একদিনে অতিরিক্ত কার্ডিও করে বাকী দিনগুলি ঘুমিয়ে কাটালেও কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবেন না। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেনোপজ পরবর্তী সময়ে মহিলাদের শারীরিক সুস্থতা এবং দেহের সব অংশ থেকেই ফ্যাট কমাতে প্রত সপ্তাহে ৩০০ মিনিট কার্ডিও করা খুবই জরুরি।