সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন! ডাক্তারদের কাজে ফেরা নিয়ে যা জানাল শীর্ষ আদালত

RG Kar Supreme Court Hearing: যেখানে ধর্ষণ ও খুনে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারই গ্রেফতার হয়েছে, সেখানে আবারও নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখা কি সরকারের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলারই নামান্তর নয়?

সিবিআই আরজি কর কাণ্ডের যা রিপোর্ট জমা দিয়েছে তা পড়ে বিচলিত খোদ বিচারপতিরা! মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি আরজি কর কাণ্ডের শুনানির শুরুতেই জানান, সিবিআইয়ের রিপোর্ট বেশ গুরুতর। এদিন হাসপাতালের নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে আদালতে মুখ পুড়েছে রাজ্যের। শুনানির সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ নিয়েও আদালতে ধোপে টেকেনি রাজ্যের আবেদন। লাইভ স্ট্রিমিং বিতর্ক আর পিছু ছাড়ছে না রাজ্যের। আইন অনুযায়ীই সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা হয় যাতে জনসাধারণ জানতে পারেন কী ঘটছে। ১৭ সেপ্টেম্বর আরজি কর কাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি চলছিল আদালতে। অথচ সেই লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধের আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানান যে, লাইভ স্ট্রিমিং হওয়ার ফলে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত মহিলা আইনজীবীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণ এবং অ্যাসিড ছোড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ হোক। যদিও রাজ্যের এমন আর্জি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করতে বলতে আদালত নির্দেশ দিতে পারে না কারণ এটি জনস্বার্থ মামলা। 

ডাক্তাররা প্রথম দিন থেকেই স্লোগান তুলেছিলেন, ‘নো সেফটি, নো ডিউটি'। এই নিরাপত্তা দিতে রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে জানতে চায় আদালত। রাজ্য আদালতে জানায়, রাজ্যের সব হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রাম কক্ষ, সিসিটিভি লাগানো হবে। চিকিৎসকদের ডিউটি রুমে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, আরজি করের মতো বিশাল হাসপাতালে আগে ৩৭টি সিসি ক্যামেরা ছিল। আরও ৪১৫টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য! এত বড় হাসপাতালে এত কম সিসিটিভি শুনে অবাক হয়েছেন বিচারপতিরাও। বারেবারে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি হাসপাতালে বহু কমবয়সি মহিলারা কাজ করতে আসেন। রাজ্য যদি এই মহিলাদের নিরাপত্তায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করে তাহলে কেনই বা নিরাপত্তাহীন বোধ করবেন না মহিলারা? সাতদিনের ট্রেনিং দিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তা সামলানোর মতো কঠিন দায়িত্ব কীভাবে দিতে পারে রাজ্য! প্রশ্ন তুলেছে আদালত। যেখানে ধর্ষণ ও খুনে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারই গ্রেফতার হয়েছে, সেখানে আবারও নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখা কি সরকারের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলারই নামান্তর নয়? সরকারি হাসপাতালে অন্তত পুলিশকর্মী রাখা উচিত বলে মন্তব্য প্রধান বিচারপতির।

গত শুনানি হয়েছিল ৯ সেপ্টেম্বর। ১ সপ্তাহ অতিক্রান্ত। গত শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কাজে এখনও ফেরেননি ডাক্তাররা। তবে এই এক সপ্তাহে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং এদিন আদালতে বলেন, “ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নাম জমা দিতে চাই সিবিআইকে। যাঁদের সেখানে থাকার দরকার ছিল না, তাঁরাও ছিলেন। এখনই এটা প্রকাশ্যে আনতে চাই না।” আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের দিন ওই স্থানে কারা ছিলেন, সেই সব নাম জমা দিতে পারবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট এদিনের শুনানিতে নির্যাতিতার বাবার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, “নির্যাতিতার বাবা যে সব বিষয় তুলেছেন, সিবিআইয়ের সেগুলি দেখা উচিত।” শুনানির শুরুতেই শীর্ষ আদালত এদিন জানিয়ে দেয়, সিবিআই যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। ময়নাতদন্তের চালান দেওয়া হয়েছিল কিনা, ময়নাতদন্তের পদ্ধতি মানা হয়েছে কিনা, তথ্যপ্রমাণ নষ্ট-সহ পুরো বিষয়টি নিয়েই সিবিআই রিপোর্ট দিয়েছে যা পড়ে বিচারপতিরাও বিচলিত হয়ে পড়েছেন।

দেশের শীর্ষ আদালত আবারও কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছে, প্রশ্ন তুলেছে সিসিটিভি ফুটেজের সময়সীমা নিয়ে। কলকাতা পুলিশ ঠিক কতক্ষণের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সিবিআইকে দিয়েছে এই প্রশ্নে দ্বন্দ্বে রাজ্য এবং সিবিআই। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করছেন, সাত-আট ঘণ্টার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। অথচ সিবিআই বলছে, মাত্র ২৭ মিনিটের ফুটেজ দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী ফিরোজ এডুলজিও বলছেন, কলকাতা পুলিশ একটিই মাত্র ক্যামেরার মোট ২৭ মিনিটের ফুটেজ দিয়েছে? প্রশ্ন উঠছে, বাকিটা কোথায়? এডুলজির দাবি, সিসি ক্যামেরার ডিভাইস ব্লক করা হয়ে থাকতে পারে।

More Articles