পরিকল্পনা করেই রাত দখলের মধ্যে আরজি করে ব্যাপক ভাঙচুর? নেপথ্যে কারা?
R G Kar Hospital Incident: ঘটনাস্থলের নানা ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারীদের কেউ কেউ হাফপ্যান্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি পরেও চলে এসেছেন।
মধ্যরাতে তখন সারা বাংলা জুড়ে কোটি কোটি মেয়ে পথে নেমেছেন। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে, নিরাপদে বাঁচতে চেয়ে অগুনতি মানুষ জমায়েত করেছেন রাজ্যজুড়ে, প্রাক-স্বাধীনতার রাতে। এমন ঐতিহাসিক রাত এই বাংলা শেষ কবে দেখেছে এই নিয়ে গর্বে যখন ভেসে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া, ঠিক তখনই চরম হামলা আরজি কর হাসপাতালে! ভয়াবহ তাণ্ডব চলল পুরো হাসপাতালজুড়ে যেখানে ধর্ষিতা হয়েছেন চিকিৎসক! কারা চালাল এই হামলা? খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বুধবার, ১৪ অগাস্ট যে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে তা তো জানা ছিলই। সেই হিসেব কষেই কি পরিকল্পনামাফিকই তাণ্ডব চালানো হলো আরজি করে? কারা রয়েছে এর নেপথ্যে?
রাজ্যের নানা অংশের মতো বুধবার রাত ১২টা নাগাদ আরজি করের সামনেও রাত দখলের কর্মসূচি শুরু হয়। এর কিছু পরেই একদল উন্মত্ত ব্যক্তি আচমকাই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ে। এলোপাথাড়ি ভাঙচুর চালাতে থাকে তারা। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে সারা হাসপাতাল জুড়ে অভাবনীয় তাণ্ডব চলে। এই সময়ে কোথায় ছিল পুলিশ, এই প্রশ্নও ওঠে। কারণ এই জমায়েত ঘিরে সর্বত্রই পুলিশ মোতায়েন ছিল। পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতাল মূল অপরাধের স্থান হওয়াতে সেখানে তো বেশি পুলিশ থাকার কথা। তারা এই আধঘণ্টা সময় কেন দিলেন তাণ্ডবকারীদের? তাণ্ডবে হাসপাতাল বিপর্যস্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। হামলাকারীদের ছোড়া ইঁটে অনেক পুলিশকর্মী আহতও হন। কিন্তু হামলা চালাল কারা?
আরও পড়ুন- পরিকল্পনা করেই রাত দখলের মধ্যে আরজি করে ব্যাপক ভাঙচুর? নেপথ্যে কারা?
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারীদের অনেকেই নাকি রাতের মিছিলে ছিলেন। অর্থাৎ রাতের মিছিলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবেই। হামলাকারীদের অনেকের গায়েই নাকি ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিশার্টও ছিল। যারা বিচার চাইছেন, তারাই ভাংচুর করে সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাটও করছেন? এই হিসেব তো মিলছে না। বিরোধীরা খুব স্পষ্টভাবেই অভিযোগ তুলছে, এই ঘটনায় হাত রয়েছে শাসক তৃণমূলের। রাতের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের চরিত্র ঘেঁটে দিতেই এই পরিকল্পনা।
হাসপাতালের ভিতরে গত রাতে ত্রস্ত ছিলেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আন্দোলনকারীদের মঞ্চ ভেঙে দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলের নানা ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারীদের কেউ কেউ হাফপ্যান্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি পরেও চলে এসেছে। তাহলে কি স্থানীয় যুবকদের যৎসামান্য পারিশ্রমিকেই ব্যবহার করা হলো? পুলিশের একাংশও মনে করছে, দমদম, টালা, সিঁথি ও দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার কিছু যুবকই এর নেপথ্যে। এই যুবকরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে এই কাজ করেননি তা বলাই বাহুল্য। মধ্যরাতে, অন্য আন্দোলনে যখন সবাই ব্যস্ত তখনই এই হামলা যে নেহাত কাকতালীয় নয় এ শিশুরও বোধগম্য।
আরও পড়ুন- ‘সুযোগসন্ধানী নাটক’! মেয়েদের রাত দখল নিয়ে কী বলছেন কুণাল ঘোষ?
‘রাত দখলের’ কর্মসূচিকে নিয়ে চরম কটাক্ষ করেছিলেন কুণাল ঘোষ। শুরু থেকেই এই মধ্যরাতের আন্দোলনকে বাম ও বিজেপির কর্মসূচি বলে দাগানোর চেষ্টা হয়েছে। আরজি করের হামলাতেও সিপিএম-বিজেপির ভূতই দেখছেন শাসকদলের অনেকে। আর বিরোধীরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুন্ডারাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মধ্যরাতের কর্মসূচি অরাজনৈতিক ছিল। কিন্তু এর ব্যাপকতা দেখে শাসক বয় পেয়েছে বলেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে নিজস্ব গুন্ডাদের ঢুকিয়ে আন্দোলন বানচালের চেষ্টা হয়েছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্যই হামলা চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা জরুরি বিভাগ ঘিরেই মূল তাণ্ডব চালায়। কোলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয় লাঠি, রড, ইট, পাথর দিয়ে! তবে ক্রাইম স্পট অর্থাৎ জরুরি বিভাগের চারতলার যে সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, হামলাকারীরা সেখানে গিয়েছিলেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে, মূল ঘটনাস্থলে কেউ যাননি। তা অক্ষত রয়েছে। এই হামলাকারীদের আক্রমণে ডিসি নর্থও গুরুতর আহত হয়েছেন।