পদত্যাগে রাজি আছি, কেন এ কথা বললেন মমতা?

Mamata Banerjee: দিন কয়েক ধরে আরজি কর বিক্ষোভ থেকে বারবার উঠে এসেছে মুখ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি পদত্যাগ করলেই কি মিটবে সমস্ত সমস্যা?

তৃতীয় দিনেও জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক হল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কার্যত দু'ঘণ্টারও বেশি সময় নবান্নে অপেক্ষা করে করে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মমতা। সেই বৈঠকে তাঁর গলায় ঝরে পড়ল হতাশার সুর। হাত জোড় করে জানালেন, পদত্যাগ করতে পারেন।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা রাজ্য। বিভিন্ন জায়গায় লাগাতার চলেছে বিক্ষোভ-আন্দোলন। সেই বিক্ষোভ থেকে বারবার উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। তবে গোড়া থেকেই আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সংবেদনশীল ভাবই দেখিয়েছেন মমতা। গোল বাঁধে কিছুদিন আগে নবান্ন থেকে প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁর উৎসবে ফেরার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। তার পর থেকে গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মমতা।

এরই মধ্যে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ যেন আরও বিপাকে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক আবেদন কোনও কিছুই কাজে ফেরাতে পারেনি জুনিয়র ডাক্তারদের। গত তিন-চার দিন ধরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে তাঁদের ধর্না চলছে। রয়েছে তাঁদের ছ'দফা দাবি। মঙ্গলবার থেকেই তাঁদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলে আসছেন মমতা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা বানচাল হয়েছে প্রতিবার। বৃহস্পতিবার নবান্নে হাজির হন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল। ছিলেন মমতাও। তবু লাইভ সম্প্রচারের শর্ত পূরণ না হওয়ায় বৈঠক হল না শেষমেশ।

আরও পড়ুন: ক্ষমা চাইলেন মমতা, আরও একবার ফিরে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা

খালি হাতে সাংবাদিক বৈঠকে ফিরলেন মমতা। সেখানে তিনি জানালেন, ‘‘আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওরা বিচার চায় না, চেয়ার চায়। আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে পারি।’’ তার পর নীরবে নবান্ন থেকে বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন হঠাৎ পদত্যাগের কথা বললেন মমতা। দু'দিন আগেই প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, চাইলেও বাংলাদেশ হবে না এ রাজ্য। তার এক সপ্তাহ না যেতেই কেন পদত্যাগের কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠমহলে এ কথা নাকি আগেও বলেছেন মমতা।

দিন কয়েক ধরে আরজি কর বিক্ষোভ থেকে বারবার উঠে এসেছে মুখ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি পদত্যাগ করলেই কি মিটবে সমস্ত সমস্যা। এ সমস্যার আশু সমাধান মিলবে কি একমাত্র সেই পথেই? প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসকেরাও কি আদৌ মমতার পদত্যাগ চাইছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করলে কি তাঁদের ছ'দফা দাবি পূরণ হবে? মমতা পদত্যাগ করলেই বা তাঁর বিকল্ হয়ে উঠবেন কে? তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? মমতা পদত্যাগ করলে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা সামাল দিতে পারবে তো প্রশাসন?

এদিন লাইভ থেকে হতাশা ঝরে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিন দিন ধরে লাগাতার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করেছেন মমতা। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিস্ফলতায় রূপান্তরিত হয়েছে তাঁর অপেক্ষা। এদিন মমতা বলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছিলাম, নির্যাতিতার বিষয়ে শোকপ্রস্তাব নিতাম বৈঠকে। আমি পরিবারের সঙ্গে একমত। আমি নিজেও বিচার চেয়ে মিছিল করেছি। সিবিআই তাড়াতাড়ি তদন্ত করুক।’’

তাঁর হাত থেকে আরজি কর মামলার তদন্ত কার্যত কেড়ে নিয়ে সিবিআইয়ের হাতে সঁপেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি করের দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে এগোলেও আরজি করের চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা মামলায় নতুন কোনও রাস্তা খোলেনি সিবিআইয়ের হাত ধরে। বরং রাজ্যপুলিশের হাতে ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ারই ধর্ষণ মামলায় দায়ী, এই তত্ত্বেই মান্যতা দিয়েছে সিবিআই।

আরজি করের ঘটনার পর থেকেই কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার প্রভাব পড়ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয়। বারবার আবেদন করেও তাঁদের কাজে ফিরতে রাজি করাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও কাজ হয়নি। ৬ দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্না দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য চার দফা শর্তও রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। সেই শর্ত পূরণ না হওয়াতেই বৈঠকে আপত্তি জানান বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা। নবান্নের সভাঘরে ঢোকেননি পর্যন্ত তারা। নবান্নের তরফে ভিডিও করার বিকল্প দেওয়া হলেও রাজি হননি তাঁরা।

বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে বলেন, মমতা বলেন, ‘‘ভিডিয়ো রেকর্ড করা হবে, জানানো হয়েছিল। তিনটি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। চাইলে ভিডিয়োর রেকর্ড তাঁদের হাতে তুলে দিতাম। সুপ্রিম কোর্ট যে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারে, আমরা পারি না। মামলা বিচারাধীন। সিবিআই দেখছে। চাইলে আমরা তাদের ভিডিয়ো রেকর্ড দিতাম। কোর্টকেও দিতে পারতাম।’’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি বিচারাধীন। তাই কিছু বিষয় মানতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা দূর হয়। চিঠিতেও লিখে দিয়েছিলাম। খোলা মন নিয়ে আলোচনার কথা বলেছিলাম। যে কোনও বিষয় তুলতে পারতেন। তার পর সংবাদমাধ্যমকে জানাতেন। বৈঠক ইতিবাচক হলে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করতাম।’’

আরও পড়ুন: মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন মমতা

কার্যত গলায় ক্ষোভ, হতাশা ঝরিয়ে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা সকলকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলাম। কেন তাঁরা আসেননি, সেটা সংবাদমাধ্যমকে বলতে পারতেন। আমি নিজেও ফোন আনিনি। ওঁদেরও বারণ করা হয়। আমি এবং চন্দ্রিমা ছাড়া কাউকে ডাকিনি, যাতে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।’’ রাজ্য জুড়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভে যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় অচলাবস্থা শুরু হয়েছে, সে প্রসঙ্গ তুলে মমতা এদিন বলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে এখন পর্যন্ত ২৭ জন মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারে। ’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য,‘‘আমি ইমার্জেন্সির সমর্থক নেই। আন্দোলনেই আমার জন্ম।’’ এরপরেই তাঁর মুখে শোনা যায় পদত্যাগের কথা।

নবান্ন থেকে বেরিয়ে এদিন পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরাও। জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার সংক্রান্ত বক্তব্য তাঁকা মোটেও ভালো ভাবে নেননি। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা চেয়ারে ভরসা রেখেই এসেছিলাম। চেয়ার নিয়ে মন্তব্যে আমরা হতাশ। চেয়ারের প্রতি ভরসা রয়েছে বলে অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা করব।’’

 

More Articles