লজ্জা! গুগলে, পর্ন সাইটে আরজি করের নির্যাতিতার ভিডিও খোঁজার হিড়িক...
RG Kar Rape Victim Google Search: ভিডিও এবং ছবি ছাড়াও গত ১৯ থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে নির্যাতিতার 'জাত'ও গুগলে সার্চ করেছেন মানুষ।
একই পৃথিবী, একদিকে ধর্ষণের বিচার চাইছে মানুষ, অন্যদিকে সেই মানবগোষ্ঠীরই অন্য অংশ ধর্ষণের ভিডিও সার্চ করে চলেছে ইন্টারনেটে। এই একই পৃথিবীতে। আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন সমাজের সমস্ত স্তরের বিপুল অংশের মানুষ। আরেক অংশের মানুষ? তারা নির্যাতিতাকে খুঁজছেন, খুঁজছেন গুগলে, খুঁজেছেন বিভিন্ন পর্ন সাইটে! এই লজ্জা, এই হতাশা, এই অবাক করা তথ্য যদি 'গুজব' মনে হয়, তাহলে সাম্প্রতিক 'গুগল ট্রেন্ড' তালিকায় চোখ বোলানো যেতে পারে।
গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের দেহ পাওয়া যায়। নির্মমভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। এরপর থেকেই নির্যাতিতার নাম গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ করতে থাকেন মানুষ। স্বাভাবিকও! অনেকেই মনে করবেন, এত বড় ঘটনায় সার্চ তো হবেই গুগলে। না, ঘটনার তথ্য জানতে ওই সার্চ করা হয়নি। মৃতার নামের পরে "rap(e) video" এবং “rap(e) photo" শব্দগুলি লিখে সবচেয়ে বেশি সার্চ হয়েছিল। Google Trends বিশ্লেষণ করে The Quint জানিয়েছে, ২০ অগাস্ট পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী গুগল প্রায় ১৬০-১৯০% বৃদ্ধি পেয়েছে এই বিশেষ সার্চ!
আরও পড়ুন- ভারতে পর্নোগ্রাফি দেখা, শেয়ার করা কি অপরাধ? কী বলছে দেশের আইন?
২০২২ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB) তথ্য বলছে, ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটি ধর্ষণ হয়। আর সাম্প্রতিককালে, ধর্ষিতা বা ধর্ষণের পর মৃত্যু হওয়া নির্যাতিতাদের নাম প্রায়ই গুগলে, এমনকী পর্ন সাইটেও সবচেয়ে বেশি খুঁজেছেন মানুষ। আরজি করের চিকিৎসকেরর ক্ষেত্রে, ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই ধর্ষণের প্রকৃতির বিভিন্ন গ্রাফিক এবং আঘাতের বিবরণ, নির্যাতিতার ছবি সমস্তটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
দ্য কুইন্ট জানাচ্ছে, ভিডিও এবং ছবি ছাড়াও গত ১৯ থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে নির্যাতিতার 'জাত'ও গুগলে সার্চ করেছেন মানুষ। ১৬ আগস্ট থেকে ধর্ষণের 'ভিডিও' খোঁজার হিড়িক পড়ে যায়! ১৭ থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই সার্চ করেন। আরও মজার বিষয় হলো, নির্যাতিতার ধর্ষণের ভিডিও মানুষ সবচেয়ে বেশি খুঁজেছেন রাতের বেলায়।
আরজি করের এই চিকিৎসকের ক্ষেত্রে, নির্যাতিতার নাম ৩,০০০ বারের বেশি সার্চ করা হয়েছিল 'এক্স ভিডিও' নামক একটি পর্নোগ্রাফি সাইটে৷ একটি ধর্ষণের ঘটনার পর, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পর্ন সাইটে কোন মানসিকতা থেকে এই ভিডিও সার্চ করতে থাকেন? এখানে উল্লেখ্য, এই মামলায় যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সঞ্জয় রায়ের পর্নের প্রতি আসক্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনে পাওয়া পর্নোগ্রাফির বিষয়বস্তু বেশ বিরক্তিকর এবং হিংসাত্মক ছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
আরও পড়ুন- স্বর্ণপদক জয়, সেরা হাসপাতালের তালিকা, আরজি করের মৃতার ডায়রিতে যা যা লেখা…
তবে আরজি করের ঘটনায় নির্যাতিতার নাম পর্ন সাইটে সার্চ করা নতুন ঘটনা নয়। কুখ্যাত কাঠুয়া ধর্ষণ মামলাতেও একই ঘটনা ঘটে! ৮ বছরের শিশুর ধর্ষণের ভিডিও খুঁজেছিল এই দেশেরই নাগরিকদের একাংশ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে তেলেঙ্গানায় হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে একটি হাইওয়ের কাছে এক মহিলার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। পরে জানা যায় মৃতা একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার, বয়স ২০-র কিছু বেশি। তাঁকে গণধর্ষণ করা হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরেও ওই একই পর্ন সাইটে 'ট্রেন্ডিং' হয়ে ওঠে মৃতার নামের ভিডিও সার্চ।
পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে ক্রমেই বাড়তে থাকা অপরাধের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র আছে কিনা এই নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে মনোবিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত সংযোগ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যে নাবালকরা ঘন ঘন পর্ন দেখে, তাদের আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে যায়। নানা ওয়েবসাইটগুলিতে পর্নোগ্রাফিক উপাদান এখন ভরপুর। আর শিশুদের তাতে নাগালও রয়েছে। বাবা-মায়ের নজর ফাঁকি দিয়ে মোবাইলে এই জাতীয় পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে শিশুরা, কিশোর এবং যুবকরা। অপরাধ করার প্রবণতাও তাই বাড়ছে।