আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্ট! কীভাবে সত্যি-মিথ্যা ধরা পড়ে এই পরীক্ষায়?

RG Kar Polygraph Test: পলিগ্রাফ টেস্টের জন্য অভিযুক্তকে এই পরীক্ষায় মত দিতে হয়।

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এখনও অবধি একজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনা তারপর নানাদিকেই বাঁক নিয়েছে। সাধারণ মানুষের এমন ব্যাপক আন্দোলন শেষ কবে এই রাজ্য দেখেছে, মনে পড়ে না। ট্রেনে, মেট্রোয়, বাসে, বন্ধুবৃত্তে, ঘরে অস্থির মানুষের চর্চা এখন আরজি কর ঘিরেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নও উঠছে, সঞ্জয় রায়কে পাকড়াও করার প্রায় সপ্তাহখানেক অতিক্রান্ত। পুলিশ কি কোনও তথ্যই বের করতে অপারগ সঞ্জয়ের থেকে? এই মামলার তদন্তভার এখন চলে গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই আরজি কর হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে থ্রিডি ম্যাপিং করেছে, সূক্ষতর প্রমাণও যাতে চোখ না এড়িয়ে যায় তার ব্যবস্থা করেছে। এবার সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্টের ব্যবস্থাও করেছে সিবিআই।

সোমবার সিবিআইকে পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি দেয় শিয়ালদা কোর্ট। পলিগ্রাফ টেস্ট আসলে কী? মূলত এটি একটি মানসিক পরীক্ষা। পলিগ্রাফ টেস্টেরই অন্য নাম লাই ডিটেক্টর টেস্ট। জন অগাস্টাস লারসন ১৯২১ সালে প্রথম পলিগ্রাফ টেস্ট তৈরি করেছিলেন। এই টেস্টে শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া যেমন হার্ট রেট, রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমে অভিযুক্ত সত্যি বলছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হয়। তবে পলিগ্রাফ টেস্টের জন্য অভিযুক্তকে এই পরীক্ষায় মত দিতে হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি মত দিলে, তবেই তদন্তকারী সংস্থা আদালতকে তা জানাবে। আদালত তারপর অনুমতি দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পলিগ্রাফ টেস্ট হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিগ্রাফ টেস্টের সময় যখন অভিযুক্তকে কোনও প্রশ্ন করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রঃশ্বাসের মতো বিভিন্ন শারীরিক মানদণ্ড মাপা হয়। যখন কেউ মিথ্যে কথা বলে, তখন সাধারণত সেইসব মানদণ্ডের হেরফের হয়ে থাকে। এর মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি মিথ্যে বলছে কিনা। 

আরও পড়ুন- যৌনাঙ্গে ক্ষত, শরীরের ২৪ জায়গায় চোট! নারকীয় অত্যাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে

কীভাবে পলিগ্রাফ টেস্ট হয়:

১. বেশ কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া পরিমাপের জন্য ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে সেন্সর সংযুক্ত করা হয়, যেমন:
- হৃদস্পন্দন
- রক্তচাপ
- শ্বাসের হার
- ত্বক পরিবাহিতা বা ঘাম
- পেশির কার্যকলাপ

২. ব্যক্তিকে একাধিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
- কিছু নিরপেক্ষ প্রশ্ন
- প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন (ইস্যু সম্পর্কিত)
- তুলনামূলক প্রশ্ন (প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের মতোই কিন্তু একটু ঘুরিয়ে)

৩. পলিগ্রাফ মেশিন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় ওই ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে।

কী কী মাপা হয়:

১. শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন হলে বোঝা যায় ব্যক্তি মানসিক চাপ বা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে কিনা। অর্থাৎ মিথ্যে বা বানিয়ে কথা বলছে সে।
২. পলিগ্রাফ টেস্টের পরীক্ষক দেখেন যে নিম্নলিখিত বদলগুলি হচ্ছে কিনা:
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
- রক্তচাপের পরিবর্তন
- শ্বাসের হার পরিবর্তন
- ঘামছে কিনা
- পেশির কার্যকলাপে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা

পলিগ্রাফ টেস্টের প্রকারভেদ:

১. তুলনামূলক প্রশ্ন পরীক্ষা (CQT): প্রাসঙ্গিক এবং তুলনামূলক প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে তুলনা করে।
২. প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক পরীক্ষা (RIT): প্রাসঙ্গিক এবং নিরপেক্ষ প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে তুলনা করে।
৩. ডাইরেক্টেড লাই টেস্ট (DLT): উপরের দুই পদ্ধতির সংমিশ্রণ ব্যবহার করে।

পলিগ্রাফ টেস্ট কি নির্ভুল হবেই?

১. পলিগ্রাফ টেস্ট নির্ভুল নয়। ভুল ফলাফল উঠে আসতেই পারে।
২. অনেক ব্যক্তিই তাদের শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়াগুলি পরিচালনা করতে, নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
৩. পরীক্ষকের ব্যাখ্যাও ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
৪. পলিগ্রাফ টেস্টের ফলাফল সবসময় আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হয় না।

More Articles