এফআইআরে এত দেরি! অধ্যক্ষ কী করছিলেন? রাজ্যকে যে যে প্রশ্ন করল সুপ্রিম কোর্ট
RG Kar Rape Case Supreme Court: প্রধান বিচারপতি বলেন, “একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?”
এফআইআর দায়ের করতেই গড়িমসি! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তে দেশের শীর্ষ আদালতে ব্যাপক তিরস্কারের মুখে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাজ্যকে প্রশ্ন করেছে, এফআইআর দায়েরে কেন এত দেরি করা হলো? এই দেরি হওয়ার জন্য আরজি কর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। কার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কখন প্রথম এফআইআর দায়ের হয়েছিল, সেই তথ্য জানতে চান বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা। বিচারপতির এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, ১১টা ৪৫ মিনিটে মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম এফআইআর হয়েছিল। এরপরে অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান।
এরপরই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “বিকেলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল ১১টা ৪৫ মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ? ওই সময়ে মৃতার বাবা-মা ছিলেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এফআইআর দায়ের করা।” এখানেই শেষ নয়। প্রধান বিচারপতি জানান, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবং খোদ অধ্যক্ষ এই খুন ও ধর্ষণকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিলেন। প্রথমে পরিবারকে মৃতদেহ অবধি দেখতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার বিষয়টি অস্বীকার করলে প্রধান বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এটি পরিষ্কার যে খুন করা হয়েছে। প্রথমে এফআইআরে কি তা উল্লেখ ছিল? অধ্যক্ষ কী করেছেন?” সন্দীপ ঘোষ আরজি করের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কীভাবে আবার অন্য কোথাও যোগ দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন- আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্ট! কীভাবে সত্যি-মিথ্যা ধরা পড়ে এই পরীক্ষায়?
শীর্ষ আদালত আরও জানায়, ১৪ অগাস্ট রাজ্য সরকারের প্রশাসন কেন আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের বিষয়টি সামলাতে পারল না, বিষয়টি মাথাতেই ঢুকছে না আদালতের। এই তদন্তে পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে হাসপাতাল এবং স্থানীয় পুলিশকেও এক হাত নেন প্রধান বিচারপতি। আরজি করের সামগ্রিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রথমে ঠিকভাবে এফআইআর করা হয়নি। পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?” শীর্ষ আদালত বলে, "অধ্যক্ষ কী করছিলেন? এফআইআর দায়ের করা হয়নি, মৃতদেহ বাবা-মায়ের কাছে দেরিতে তুলে দেওয়া হলো। পুলিশ কী করছিল? এক গুরুতর অপরাধ ঘটেছে, অপরাধের স্থলটি একটি হাসপাতাল!” প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজ্য কীভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?” রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সলিসিটর জেনারেল বলেন, “৫০০ লোকের জমায়েত হলে আমরা বলি ভালো লোক এসেছে। সেখানে সাত হাজার লোক হাসপাতাল ভাঙচুর করল। এটা কি আইনশৃঙ্খলার নমুনা?”
চিকিৎসা পেশায় হিংসা রুখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সাত জনের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, এই টাস্ক ফোর্সে বিভিন্ন চিকিত্সকরা থাকবেন, যাঁরা সারা ভারত জুড়ে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেবেন যাতে কাজের নিরাপত্তা বজায় থাকে এবং তরুণ বা মধ্যবয়সি চিকিৎসকরা কাজের পরিবেশে নিরাপদ থাকেন। এই টাস্ক ফোর্সে সার্জন অ্যাডমিরাল আর কে সারিয়ান, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলজির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ ডি নাগেশ্বর রেড্ডি, দিল্লির এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ এম শ্রীবাস, বেঙ্গালুরুর নিমহান্সের ডাঃ প্রথমা মূর্তি, ডাঃ গোবর্ধন দত্ত পুরী, এইমস যোধপুর, ড. গঙ্গারাম হাসপাতালের ডাঃ সোমিকরা রাওয়াত, অধ্যাপক অনিতা সাক্সেনা, জেজে গ্রুপ অফ হাসপাতালের পল্লবী সাপলে এবং গুরগাঁওয়ের পারস হাসপাতালের চেয়ারপারসন (নিউরোলজি) পদ্মা শ্রীবাস্তব থাকছেন।