‘কর্তব্যে গাফিলতি মুখ্যমন্ত্রীর’! ক্ষোভ উগরে দিলেন তিলোত্তমার মা
RG Kar Case: সুপ্রিম কোর্টের এদিনের শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং শুনে কিছুটা হলেও আজ আশ্বস্ত হয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। তবে লড়াই এখনও বাকি জানালেন তিলোত্তমার বাবা-মা।
দ্বিতীয় শুনানিতে প্রত্যাশাজনক কিছুই মেলেনি। মঙ্গলবার আরজি কর মামলার তৃতীয় শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। স্বাভাবিক ভাবেই এদিনের শুনানির দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। তাকিয়ে ছিলেন তিলোত্তমার পরিবারও। গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই মামলা নিয়ে তোলপার হয় গোটা রাজ্য। বিক্ষোভর স্বর জেগে উঠেছিল সমাজের সব শ্রেণি থেকেই। এদিন সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তরিপোর্ট পেশ করে সিবিআইও।
এদিন শুনানির আগেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের হাতে পৌঁছয় নির্যাতিতা তথা তিলোত্তমার বাবার একটি চিঠি। যে চিঠিটি সিবিআইকে লিখেছিলেন নির্যাতিতার বাবা। সেই চিঠিতেই এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলেই মঙ্গলবার শুনানিতে জানান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিলোত্তমার বাবা-র সেই চিঠি গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশও দেয় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এই চিঠিতে গুরুত্বপূর্ণ লিড রয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর সিবিআই-কে চিঠি দিয়েছিলেন তিলোত্তমার বাবা। সেই চিঠিতে যে সম্ভবনা এবং যে ইনপুট দিয়েছেন, সেই গুলো সিবিআই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। যাতে উইকিপিডিয়া থেকে নির্যাতিতার নাম মুছে দেওয়া হয়, সেই আদেশও দিয়েছে এদিন সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
সুপ্রিম কোর্টের এদিনের শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং শুনে কিছুটা হলেও আজ আশ্বস্ত হয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। তবে লড়াই এখনও বাকি জানালেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তাঁরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের ওপর তাঁদের ১০০ শতাংশ ভরসা আছে। এই বিচারব্যবস্থাকে সঠিকভাবে গাইড করে নিয়ে যাবে। সমাধান করার চেষ্টা করবে। তাঁদের কথায়, "আমরা প্রথম দিন থেকে বলে এসেছি, সুপ্রিম কোর্ট শুনানিতে সেটাই তুলে ধরেছে কারণ তথ্য প্রমাণ লোপাট করলে একটা সংস্থাকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। এখানে তথ্য প্রমান লোপাটের ঘটনা ঘটেছে এবং একজনকে গ্রেফতার করেছে।"
এদিন বিকেলে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকে অপসারণ করেছে রাজ্য সরকার। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অন্যতম দাবি ছিল যা। এ বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, 'আমি একটাই কথা বলব, যারা যারা এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছেন, যারা প্রমাণ লোপাটের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন, সবাইকে যেন তদন্তের আওতায় আনা হয় এবং সকলে যেন শাস্তি পায়। একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁদের। নির্যাতিতার মায়ের কথায়, "তাঁদেরকে আমরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের মত মনে করছি। বিচারের জন্য তারা যেভাবে কষ্ট করে রাস্তায় বসে রয়েছে এটা দেখলে আমাদেরই কষ্ট লাগে।" তবে তার পরেও তাঁরা মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি আসল জয় এখনও অধরা। তিলোত্তমার বাবা মা জানান 'আসল জয় আমাদের সেদিনই হবে, যেদিন আসল খুনিদের ধরা হবে এবং বিচার হবে।'
আরও পড়ুন:কর্মবিরতি থেকে কাজে ফিরছেন কবে? যা জানালেন আন্দোলনরত ডাক্তারেরা
ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে। তবে সন্দীপের বিরুদ্ধে প্রশাসন বা মুখ্য়মন্ত্রী যথাসময়ে পদক্ষেপ করেনি বলেই এদিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁর মায়ের দাবি, "২০২১ সালে যখন এই ডাঃ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তখন যদি মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপগুলো নিতেন তখন আমার কোল ফাঁকা হত না। আমার মেয়েটা এভাবে হারিয়ে যেত না।"
ইতিমধ্যেই আরজিকর কাণ্ডের তদন্তে বেশ খানিকটা এগিয়েছে সিবিআই। তবে এখনও আসল ঘটনা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তদন্তকারীরা। কবে সেই অন্ধকার ভেদ করে আলোর রেখা ফুটে উঠবে, তার অপেক্ষায় তিলোত্তমার বাবা-মায়ের পাশাপাশি গোটা দেশ।