বর্তমান দেশের দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী! কে এই কেজরি-ঘনিষ্ঠ অতিশী মারলেনা?

Atishi Marlena Singh: তাঁর মারলেনা উপ পদবিটি পরিবারেরই দেওয়া। মার্ক্স এবং লেনিন নাম দু'টির মিশ্রণ ঘটিয়েই নাকি এই মধ্যনাম।

দেশে এই মুহূর্তে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী একজনই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন অতিশী মারলেনা। দিল্লির রাজনীতির ইতিহাসে সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিতের পর তৃতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন অতিশী। ইস্তফা দিয়ে পরিষদীয় বৈঠকের পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁরই নাম ঘোষণা করেছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বরাবরই আম আদমি পার্টিকে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এই নেত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচক অতিশী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পর ক্রমাগত বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন। আপ সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, নারী ও শিশু কল্যাণ সহ পিডব্লিউডি বিভাগের মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার তাঁর হাতেই ক্ষমতাভার ন্যস্ত করতে চাইলেন কেজরিওয়াল।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিজয় সিং এবং তৃপ্তা ওয়াহির কন্যা অতিশীর জন্ম ১৯৮১ সালের ৮ জুন। জানা যায়, তাঁর মারলেনা উপ পদবিটি পরিবারেরই দেওয়া। মার্ক্স এবং লেনিন নাম দু'টির মিশ্রণ ঘটিয়েই নাকি এই মধ্যনাম। বামপন্থায় গভীরভাবে বিশ্বাসী এই পরিবারের কন্যা অতিশী অবশ্য পরে মারলেনা অংশটি বাদ দেন যাতে তাঁর মতাদর্শ তাঁর কাজের অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। দিল্লিতেই স্প্রিংডেলস স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন অতিশী। সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি, তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। সেখান থেকেই স্নাতকোত্তর করেন তিনি।

আরও পড়ুন- সুপ্রিম নির্দেশে জামিন কেজরিওয়ালের! নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন দিল্লির মুখমন্ত্রী?

আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অতিশী এই দলের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৩ সালে আপের নীতি-নির্ধারণী কমিটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়াতে জল সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় অতিশীকে। সেখানে আপ নেতা আলোক আগরওয়ালের পাশে সারাক্ষণ সক্রিয়ভাবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব দিল্লি থেকে অতিশীকে প্রার্থী করে আপ। তবে সেবার বিজেপির প্রার্থী ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরের কাছে ৪.৭৭ লক্ষ ভোটে হেরে যান অতিশী। ২০২০ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লির কালকাজি কেন্দ্র থেকে আপ প্রার্থী হন অতিশী। সেখানে তিনি বিপক্ষের বিজেপি নেতা ধরমবীর সিংকে ১১,৪২২ ভোটে হারিয়ে জেতেন।

এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন পদত্যাগ করলে দিল্লি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় অতিশীকে। দিল্লির অর্থ, শিক্ষা, পর্যটন, সংস্কৃতি, নারী ও শিশুকল্যাণ সহ বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন অতিশী। দিল্লির সরকারি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা সারা দেশের মানুষের কাছেই উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এই ব্যাপক পরিবর্তনের নেপথ্যে অতিশী মারলেনার অবদান অনস্বীকার্য। দিল্লির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ৪৩ বছরের অতিশী।

অতিশীকে নিয়ে বিতর্কও কম নেই। সবচেয়ে প্রথম বিতর্ক তো শুরু হয় মার্ক্স-লেনিন মিশ্রণের 'মারলেনা' নিয়েই। ২০১৮ সালের অগাস্টে অতিশী বলেছিলেন, ‘‘মারলেনা আমার পদবি নয়। আমার উপাধি সিং, যা আমি কখনও ব্যবহার করিনি। মারলেনা নামটি আমার বাবা-মা দিয়েছিলেন। আমি আমার নির্বাচনী প্রচারের জন্য শুধুমাত্র অতিশী ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

আরও পড়ুন- কেজরিওয়ালই শেষ নয়, আপকে শেষ করতে বিজেপির যে ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করলেন অতিশী

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ দিল্লি বিজেপির সহ-সভাপতি রাজীব বব্বরের দায়ের করা মানহানির মামলার জবাবে অতিশী মারলেনা এবং দলের অন্য তিন নেতাকে আদালতে তলব করা হয়েছিল। বিজেপি দিল্লির ভোটার তালিকা থেকে ৩০ লক্ষ নাম মুছে দিয়েছে বলে দাবি করেন অতিশীরা। আদালত অভিযোগটিকে প্রাথমিকভাবে মানহানিকর বলে মনে করে। এবছরই বিজেপি নেতা প্রবীণ শঙ্কর কাপুর অতিশী এবং কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে শিকারের অভিযোগে আবারও একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন।

নির্বাচনে যে হলফনামা অতিশী জমা দিয়েছিলেন, সেই তথ্য অনুযায়ী, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে অতিশী এবং তাঁর স্বামীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১.৪১ কোটি টাকা। অতিশীর ব্যাঙ্ক এবং অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে জমা রয়েছে ১ কোটি ৮৭ হাজার ৩২৩ টাকা। এলআইসি এবং অন্যান্য বিমা পলিসি রয়েছে ৫ লক্ষের। আরও ১৮ লক্ষ ৬০ হাজার রয়েছে এনএসএস এবং ডাকসঞ্চয় মিলিয়ে।

অতিশীর স্বামী প্রবীণ সিং একজন গবেষক এবং শিক্ষাবিদ। আইআইটি এবং আইআইএম আমদাবাদ থেকে পড়াশোনা করেছেন প্রবীণ। দিল্লিতেই আলাপ তাঁদের। অতীশি এবং প্রবীণ সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে একই চিন্তাভাবনা পোষণ করেন। রাজনীতিতে আসার আগে, অতীশি প্রবীণের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জৈব চাষ এবং শিক্ষাগত সংস্কারের কাজ করেছেন সাত বছর ধরে।
প্রবীণ প্রায় ৮ বছর ধরে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসাবে কাজ করেছেন। প্রবীণ সম্ভাবনা ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক পলিসি অ্যান্ড পলিটিক্সের সঙ্গেও যুক্ত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ইতিহাস, মূলধারার অর্থনীতি এবং এর ত্রুটি, উন্নয়নের অর্থনীতির বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

More Articles