'ভরসা হারিয়েছি'! মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টা পরেই কেন এমন বলছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
Junior Doctor Meeting: বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপরেই হতাশ হন।
সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বেরিয়ে ধর্নাস্থলে গিয়ে জানান সদর্থক আলোচনা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বুধবার আবার বৈঠক হলো। এবার জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন তারা হতাশ! হতাশ, ফলে কর্মবিরতিও কাটছে না। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের বেশিরভাগ দাবিই মানা হয়েছে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররাও তাই বলেন। তাঁদের দাবি মতোই পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ অধিকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিকাঠামো উন্নয়নের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবু ডাক্তাররা বলেছিলেন, তাঁদের বাকি দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বাকি দাবিগুলি নিয়ে বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপরেই হতাশ হন। এতই হতাশ যে বৈঠকের মিনিটসেও আন্দোলনকারীরা সই করেননি।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে চারবার ভেস্তে যায় বৈঠক। অবশেষে নবান্ন থেকে পঞ্চম ও শেষ মেল আসে। তাতে জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে চান। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি থেকেও সরে আসেন। দীর্ঘ সেই বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি নর্থকে সরানো হবে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও সরানো হবে। বিনীত গোয়েলের জায়গায় নতুন কমিশনার হন মনোজ ভার্মা। তবে জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, তাঁদের চতুর্থ ও পঞ্চম দফা পূরণ হয়নি তাই তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ-সহ বাকি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কী কী ছিল তাঁদের বাকি দাবি?
আরও পড়ুন- পুলিশ কমিশনার পদ থেকে সরলেন বিনীত! কেন মনোজেই আস্থা রাজ্য সরকারের?
তাঁদের প্রথম দাবি— প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম, আলাদা শৌচাগার, প্রতিটি রেস্ট রুমের সামনে সিসিটিভি, যথাযথ নিরাপত্তাকর্মী, প্রতিটি অন কল রুমে প্যানিক বাটন, প্রতিটি হাসপাতালের ফাঁড়িতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় নারী পুলিশকর্মী নিয়োগ করতে হবে। হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে আইসিসি গঠন করতে হবে। কলেজ স্তরে এই দাবিগুলিকে রূপায়ণ করার জন্য রাজ্য সরকারকে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদেরও রাখতে হবে।
দ্বিতীয় দাবিতে জুনিয়র ডাক্তাররা একটি কেন্দ্রীয় ‘রেফারাল সিস্টেম’ গড়ে তোলার কথা বলছেন যাতে প্রতিটি হাসপাতালে কোন বিভাগে কোন সময়ে ক’টি বেড খালি আছে, সেই তথ্য সকলে জানতে পারেন। এতে রোগী হয়রানি বন্ধ হবে, হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে গড়ে ওঠা দালালচক্রের অবসান ঘটবে। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যথাযথ সংখ্যক কর্মী নিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বদলে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন, রক্তপরীক্ষা সহ অন্যান্য যাবতীয় পরীক্ষার পরিকাঠামো গঠনের দাবি করেছেন তারা।
ডাক্তারদের তৃতীয় দাবি হুমকির সংস্কৃতির অবসান। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করা, দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন, দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য স্তরে বিশেষ কমিটি গড়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এই লক্ষ্যে সব মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্ট ডক্টরস’ অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে স্বীকৃতি, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি করেছেন তারা।
আরও পড়ুন-নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরা বৈঠকের মিনিটসে সই করেননি। জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে পাঁচ নম্বর দাবিটি ছিল থ্রেট কালচারের অবসান। তাঁরা বলছেন, এই হুমকি সংস্কৃতির অবসানের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন, আরডিএ গঠনের জন্য নির্বাচন করা নিয়ে বৈঠকে আশ্বাস দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু মিনিটসে তার উল্লেখ নেই। মিনিটসে সুপ্রিম কোর্টে যে নিরাপত্তার বিষয়গুলো বলা ছিল শুধু সেগুলিরই উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারী ডাক্তারদের।
বৈঠক শেষে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, “এদিনের আলোচনা হতাশাজনক। আজকের ঘটনায় প্রমাণ হল, কেন স্বচ্ছতার প্রশ্নে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। আমরা কিছুটা হলেও ভরসা হারিয়েছি। আমাদের দাবি নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা ই-মেল করে জানানো হবে বলেছেন মুখ্যসচিব।” যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তারা আস্থা রেখেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে কি আন্দোলনকারীদের সেই ভরসা টলমলে হয়ে গেল তবে? এই সমস্ত দাবি নিয়ে সরকারের থেকে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাঁরা অবস্থান এবং কর্মবিরতি তুলবেন না বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বৈঠকের পর বৈঠকে সেই সমাধান হবে কি?