মহিলাদের রাতের শিফটে কাজ নয়! কেন রাজ্যকে বিজ্ঞপ্তি মুছতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের?
Supreme Court RG Kar Hearing: রাজ্য বলেছিল, কোনও পরিস্থিতিতেই মহিলা চিকিৎসকদের ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না।
মহিলারা চেয়েছিলেন নিরাপত্তা, চেয়েছিলেন কর্মস্থলে সুস্থ পরিবেশ। সরকার মহিলাদের রাতে কাজ করতেই প্রায় বারণ করে দিয়েছিল। আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার পরে মহিলাদের কর্মস্থল সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কড়া কথা শুনিয়েছে রাজ্যকে। তড়িঘড়ি সেই বিজ্ঞপ্তি মুছে ফেলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। আরজি করের ঘটনার কিছুদিন পরেই যখন জানা যায়, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বলেছেন 'অত রাতে একা মহিলা কী করছিলেন’, সেই প্রতিবাদে রাত দখলের ডাক দেন মেয়েরা। আর সরকার মেয়েদের সম্মিলিত ক্ষোভকে দমাতে মহিলাদের রাতের শিফটে কাজ করাই বন্ধের ব্যবস্থা করতে থাকে। কী লিখেছিল সরকার ওই বিজ্ঞপ্তিতে? কেনই বা সুপ্রিম নির্দেশে তা মুছে ফেলতে হচ্ছে?
সরকার বলেছিল, রাতে কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অন্তত ১৭টি পদক্ষেপ করবে রাজ্য প্রশাসন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল মহিলারা কখন কাজ করবেন, আর কখন করবেন না এই সংক্রান্ত নির্দেশও। রাজ্য বলেছিল, কোনও পরিস্থিতিতেই মহিলা চিকিৎসকদের ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে না, বেসরকারি ক্ষেত্রেও 'যতদূর সম্ভব মহিলাদের রাতের শিফট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে' বলে জানিয়েছিল সরকার। সরকার মেয়েদের কাজ করার সময়সীমা বেঁধে কোন মধ্যযুগকে ডেকে আনছে এই নিয়ে ক্ষোভ জনমানসে আরও তীব্র হয়। এবার সেই বিজ্ঞপ্তি আদালতের কাছেও সমালোচিত, নিন্দিত হলো।
আরও পড়ুন- সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন! ডাক্তারদের কাজে ফেরা নিয়ে যা জানাল শীর্ষ আদালত
এমন অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কী ভেবে সরকার এমন অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার আরজি কর কাণ্ডের শুনানি চলাকালীন ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন রাজ্যকে, “নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এ কথা বলতে পারেন না। বিমান পরিষেবা, সেনায় অনেক মহিলা রাতে কাজ করেন। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি কেন?” রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিজ্ঞপ্তির ওই বিতর্কিত অংশ মুছে ফেলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, "মহিলারা এই ধরনের কোনও ছাড় চান না। তাঁরা চান সমান সুযোগ। মহিলা ডাক্তারেরা সব পরিস্থিতিতে কাজ করতে চান। তাঁদের সব পরিস্থিতিতে কাজ করা উচিত। রাজ্যকে এটি সুনিশ্চিত করতে হবে।” রাজ্যের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও ছিল সরকারের তরফে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল,
১. রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে মহিলাদের জন্য পৃথক বিশ্রামকক্ষ, শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
২. 'রাত্তিরের সাথী' নামে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। এই বাহিনীর প্রধান কাজ হবে রাতে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়া।
৩. কর্মস্থলে মহিলাদের জন্য 'সেফ জোন' তৈরি, পর্যাপ্ত সিসিটিভির ব্যবস্থা হবে।
৪. রাতের শিফটে মহিলাদের সুরক্ষা দিতে 'রাত্তিরের সাথী' নামের মোবাইল অ্যাপে নিকটবর্তী থানার সঙ্গে মহিলাদের দ্রুত যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করা হবে।
৫. বিপদের আশঙ্কা করলে ১০০ অথবা ১১২ নম্বরে পুলিশকে ফোন।
৬. মত্তদের চিহ্নিত করতে হাসপাতালে রাতে নিঃশ্বাস পরীক্ষার বন্দোবস্ত।
৭. যৌন হেনস্থা থেকে রক্ষা পেতে 'বিশাখা কমিটি'-কে সক্রিয় করা।
৮. সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালে মহিলাদের সুরক্ষা বিষয়ে সকলকে সংবেদনশীল করার বিষয় জোর দেওয়া।
৯. রাতে মেয়েদের দলগতভাবে কাজ করার নির্দেশ।
১০. 'রাত্তিরের সাথী' আচরণবিধি নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সচেতন করা।
১১. সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে রাতেও পুলিশের টহল দেওয়া।
১২. মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে প্রতি তলায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
১৩. হাসপাতালের সকলের পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা
১৪. সুরক্ষার জন্য মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে পুলিশ নিরাপত্তা আধিকারিক নিযুক্ত করা হবে।
১৫. মহিলা চিকিৎসকদের ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না।
১৬. সম্ভব হলে মহিলাদের রাতের শিফট বাতিল করার চেষ্টা করতে হবে।
১৭. মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীও রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
রাজ্য বাকি পদক্ষেপগুলি কতটা করেছে? প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এদিন রাজ্যের আইনজীবীকে বলেছেন, মহিলা ডাক্তারেরা বিশ্রাম নিতে গেলে সেখানে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবতে হবে। তবে সর্বাগ্রে মহিলারা কখন কাজ করবেন আর কখন করবেন না এমন বিচিত্র নির্দেশ তুলে নিতে হবে রাজ্যকে।