কেবল মরক্কো নয়, আফ্রিকার দেশগুলির কাছে বিশ্বকাপ মানে স্পর্ধা দেখানোর মঞ্চ
Fifa World Cup 2022 : আফ্রিকার কাছে বিশ্বকাপ আসে স্বপ্ন আর কষ্টের যৌথ ককটেল রূপে। পৃথিবীর কাছে নিজেদের মেলে ধরার একটা সুযোগ এই দেশগুলো কিছুতেই ছাড়তে চায় না।
২০২২ সালের বিশ্বকাপে আয়োজক দেশের পর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বাদ দিলে বিশ্বকাপের মাঠে সবচাইতে বেশি সমর্থন পেয়েছে মরক্কো। সেটার কারণ যত না রাজনৈতিক, তার চাইতে বেশি ফুটবলজনিত। মরক্কোর অসম্ভব শৃঙ্খলিত ডিফেন্স, পরিশ্রমী মিডফিল্ড আর বুদ্ধিদীপ্ত গেম ম্যানেজমেন্ট এই দলটাকে নিয়ে গেছে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। কয়েকজন তারকা প্লেয়ার থাকলেও, মরক্কোর সাফল্যের আসল কারণ দুর্ধর্ষ টিমগেম। বাঘা বাঘা দল তল পায়নি তাদের বিরুদ্ধে। হ্যাজার্ড-দে ব্রুইনে-লুকাকুদের বেলজিয়াম, গ্রুপে এক ম্যাচে সাত গোল দেওয়া স্পেন, আগের রাউন্ডে ছ'গোল দিয়ে বিপক্ষকে মাটি ধরানো পর্তুগাল, সকলের বিরুদ্ধেই ক্লিনশিট রেখেছে তারা। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ চারে পৌঁছে চমকে দেওয়ার পাশাপাশি মন ছুঁয়ে গেছে ম্যাচ শেষে বোফাল-হাকিমিদের মায়ের সঙ্গে বিজয় উদযাপনের অসম্ভব মিষ্টি সব দৃশ্য।
আফ্রিকান কোনও দেশ শিগগিরই বিশ্বকাপ জিতবে এমন একটা ভবিষ্যৎবাণী পেলে করেছিলেন অনেক বছর আগে। আফ্রিকার এখনও অবশ্য বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা হয়নি। তবে আফ্রিকাকে ছাড়া বিশ্বকাপ একেবারেই ভাবা যায়না। উজ্জ্বল জামাকাপড় বা রঙিন পেন্ট আঁকা ফ্যানেরা যখন নানান বাদ্যযন্ত্র আর সুন্দর সব অপরিচিত অলংকার গায়ে-মাথায় চাপিয়ে বিশ্বকাপের গ্যালারিতে পৌঁছন, তখন সত্যিই মনে হয় বিশ্বজোড়া মেলা বসেছে। আনন্দ হয় ভারী।
বিশ্বকাপের প্রথমদিকে আফ্রিকান দেশের উপস্থিতি ছিল নেহাতই গৌণ। একেবারে সরাসরি নকআউট রাউন্ড দিয়ে শুরু হওয়া ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপে মিশর প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে একটিমাত্র ম্যাচ খেলে ৪-২ গোলে হারে হাঙ্গেরির কাছে। ফৌজি পরপর দুটো গোল দেওয়ায় ২-০ থেকে ২-২ করে প্রথমার্ধ শেষ করেছিল মিশর। দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করে ম্যাচ নিয়ে যায় হাঙ্গেরি।
এরপরের ৩৬ বছর বিশ্বকাপে কোনও আফ্রিকান দল খেলেনি। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে চলা বিশ্বকাপটা পুরোপুরি বয়কট করেছিল আফ্রিকান দেশগুলো। অন্তত একটা কোয়ালিফিকেশন স্পট তাদেরকে দেওয়া না হলে তারা খেলবে না এমনটাই ছিল তাদের দাবি। ১৯৭০ থেকে সেটা নিশ্চিত করেছিল ফিফা। সেই টুর্নামেন্টেই মরক্কো প্রথম কোনও আফ্রিকান দল হিসেবে একটি পয়েন্ট অর্জন করে বুলগেরিয়ার সাথে ১-১ ড্র করে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তারা গার্ড মুলার-বেকেনবাওয়ারের পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে লিড ধরে রেখেছিল আধঘন্টারও বেশি সময় জুড়ে।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে জাইরে পরপর তিনটে ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় একটাও গোল না দিয়ে। ব্রাজিল তাদের বিরুদ্ধে ফ্রি-কিক পেয়ে বল বসানোর পর জাইরের এক ডিফেন্ডার ছুটে গিয়ে বলটায় লাথি মেরেছিলেন। ওটা ছিল তাঁর প্রতিবাদের ভাষা, কারণ জাইরের খেলোয়াড়দের প্রাপ্য পারিশ্রমিকের থেকে বঞ্চিত করছিলেন করছিলেন কর্মকর্তারা।
১৯৭৮-র বিশ্বকাপে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনটে গোল দিয়ে ম্যাচ জিতেছিল তিউনিসিয়া। প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। আফ্রিকান দলের সেই প্রথম জয় কোনও বিশ্বকাপ ম্যাচে। তারা একটা গোলশূন্য ড্র করেছিল সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে চলা পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধেও।
চার বছর বছর পর এই পশ্চিম জার্মানিকে হারানোর মাধ্যমেই প্রথমবার কোনও আফ্রিকান দল পাবে বিশ্বকাপে ইউরোপীয় দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ জয়ের স্বাদ। আলজেরিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারায় পশ্চিম জার্মানিকে। তারা জিতেছিল চিলির বিরুদ্ধেও। গ্রুপের শেষ ম্যাচ ছিল অস্ট্রিয়া আর পশ্চিম জার্মানির। পশ্চিম জার্মানি ১-০ বা ২-০ জিতলে তবেই নিশ্চিতভাবে আলজেরিয়া ছিটকে গিয়ে অস্ট্রিয়া আর পশ্চিম জার্মানি পরের রাউন্ডে যেত। ম্যাচের শুরুতে চেপে আক্রমণ করে একটা গোল জার্মানরা তুলে নেবার পর বাকি ম্যাচে শুধু বল উড়িয়ে আর পাস পাস খেলে কাটিয়েছিলেন দু'দলের খেলোয়াড়রা। হিহনের এল মোলিনন মাঠে পরিষ্কারভাবে ষড়যন্ত্র করে ঘটানো এই কাণ্ডকে 'ডিসগ্রেস অফ্ হিহন' নামে ডাকা হয়। এরপর থেকে ফিফা আইন করে গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলোকে একসঙ্গে খেলানোর নির্দেশ দ্যায়, যাতে এমনকিছু আর না দেখতে হয়।
আলজেরিয়ার অধরা স্বপ্ন অবশ্য পরের বিশ্বকাপে পূরণ করে মরক্কো। তারা প্রথম কোনও আফ্রিকান দেশ হিসেবে নকআউটে উঠেছিল। সেই মরক্কো দলও এবারের মতই খুব আঁটোসাঁটো ডিফেন্সিভ প্রদর্শন দেখিয়েছিল। গ্রুপে একটিমাত্র ম্যাচে একটা অপ্রাসঙ্গিক কনসোলেশন গোল হজম করা ছাড়া বিশ্বকাপের হবু ফাইনালিস্ট পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচ ৮৮ মিনিট অব্দি গোলশূন্য রাখবার পর একটিমাত্র গোল খেয়েছিল তারা।
১৯৮২-র টুর্নামেন্টে ক্যামেরুন তিনটে ম্যাচ ড্র করে অপরাজেয় থেকেও ছিটকে গেছিল টুর্নামেন্টের থেকে, কিন্তু ১৯৯০-এর ইতালি বিশ্বকাপে তারাই হবে বিশ্বকাপের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। আফ্রিকান ফুটবলকে এতটা জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ফুটিয়ে কেউই তুলতে পারেনি সেভাবে। পারল ক্যামেরুন। তাদের অন্যতম হাতিয়ার, ৩৮ বছর বয়সী রজার মিল্লা, রাতারাতি হয়ে ওঠেন বিশ্বকাপের এক অবিস্মরণীয় আইকন। ক্যামেরুন প্রথম ম্যাচে হারিয়েছিল গত টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন, মারাদোনার আর্জেন্টিনাকে। পরের ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নেমে ম্যাচের শেষ পনেরো মিনিটের মধ্যে দুই গোল দিয়ে রোমানিয়াকে হারানোয় প্রধান ভূমিকা নেন মিল্লা। তারপর শেষ ষোলোর সেই বিখ্যাত ম্যাচে গোলের অনেকটা বাইরে কলম্বিয়ার বিখ্যাত কিপার হিগুয়েতার পায়ের থেকে বল কেড়ে নিয়ে গোল করেন তিনি। সেই ম্যাচেও সম্পন্ন করেছিলেন ব্রেস। সেই প্রথমবার নকআউট পর্যায়ে ম্যাচ জিতেছিল আফ্রিকার কোনো দেশ।
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ক্যামেরুন ভাল খেলেনি। খেলার কথা ছিলনা মিল্লারও। তবে প্রেসিডেন্টের অনুরোধে তিনি দলে যোগ দ্যান। বিয়াল্লিশ বছর বয়সে একটা গোলও করেন বিশ্বকাপে, প্রবীণতম স্কোরার হিসেবে নিজেরই চার বছর আগে গড়ে যাওয়া রেকর্ড ভেঙে। তবে স্রেফ গোলগুলোই তাঁকে গণস্মৃতিপটে পাকা আসন দ্যায়নি। গোলের সেলিব্রেশন তিনি করতেন একেবারে স্বকীয় কায়দায়। ফুটবলে আজকের যে রঙিন গোল সেলিব্রেশনের ট্র্যাডিশন, তাতে তিনি এক উজ্জ্বল পথপ্রদর্শকের মতো। কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে হাঁটু আর কোমর বেঁকিয়ে আকাশে হাত তুলে ওই নাচ বিশ্বকাপের সবচেয়ে পরিচিত ফ্রেমগুলোর মধ্যে একটা। অপেক্ষাকৃত সাধারণ মাপের এক খেলোয়াড় হিসেবে পপুলার কালচারে তাঁর প্রভাব প্রায় অচিন্তনীয়।
নাইজেরিয়া ১৯৯৪ বিশ্বকাপে হবু সেমিফাইনালিস্ট বুলগেরিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল। ইতালির বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে ৮৮ মিনিট অব্দি এগিয়ে থেকেও ব্যাজ্জোর জোড়া গোলে তারা হেরে যায়। পরের টুর্নামেন্টেও তারা নকআউটে উঠেছিল। গ্রুপে হারিয়েছিল স্পেনকে।
২০০২ সালের বিশ্বকাপে জ্বলে ওঠে সেনেগাল। পাপা বৌবা দিওপের গোলে তারা প্রথম ম্যাচে হারিয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও ইউরোজয়ী ফ্রান্সকে। দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন সিসে। তিনি এই বিশ্বকাপে ছিলেন সেনেগালের কোচ। এইবার সেনেগাল আবারও শেষ ষোলোয় উঠেছিল। কোয়ালিফিকেশন তারা নিশ্চিত করে বৌবার অকালমৃত্যুর তারিখেই। আশ্চর্য সমাপতন অথবা কাব্যিক সুবিচার। ২০০২ সালে হেনরি কামারা জোড়া গোল দিয়ে সুপার সিক্সটিনে জেতান সেনেগালকে সুইডেনের বিরুদ্ধে। সেনেগালের কোয়ার্টারফাইনাল খেলার স্মৃতি সুখকর হয়নি অবশ্য। তুরস্ক তাদের বিরুদ্ধে জিতে শেষ চারে উঠে গেছিল। পরের টুর্নামেন্টে ঘানা উঠেছিল নকআউটে।
তবে ঘানার আসল খেলা দেখা গেছিল ২০১০ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপটা আফ্রিকার ক্রীড়াইতিহাসের একটা জলবিভাজিকা মুহূর্ত। প্রথমবার আফ্রিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। ঘানা উঠেছিল শেষ আটে। সেখানে সেই কুখ্যাত ম্যাচে তারা উরুগুয়ের কাছে পেনাল্টিতে হারে। দুটো দূরপাল্লার অসাধারণ গোলে ১-১ হবার পর ম্যাচ গেছিল অতিরিক্ত সময়ে। তার ইনজুরি টাইমে উরুগুয়ের বক্সে ডামাডোলের মধ্যে গোল প্রায় হয়েই যাচ্ছিল, এমন সময়ে সুয়ারেজ হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান। তিনি লাল কার্ড দেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আসামোয়া জিয়ান পেনাল্টিটা বারে মারেন। শুটআউটে নার্ভ ধরে রেখে সেমিফাইনালে ওঠে ফোরলানের উরুগুয়ে।
২০১৪-তে আলজেরিয়া আর নাইজিরিয়া উঠেছিল শেষ ষোলোয়। ২০১৮তে শেষ ষোলোয় পৌঁছয়নি একটিও আফ্রিকান দল-৩৬ বছরে প্রথমবার। তবে সেনেগালের ছিটকে যাওয়াটা খুবই নিষ্ঠুর ছিল। পয়েন্ট বা গোলসংখ্যায় সমান হলেও জাপানের থেকে বেশি হলুদ কার্ড দেখায় তারা ছিটকে যায় টুর্নামেন্টের থেকে। ইজিপ্টের ৪৫ বছর বয়সী কিপার এসাম এল হাদারি বয়স্কতম প্লেয়ার হবার পাশাপাশি একটা পেনাল্টি বাঁচানোর বিরল কৃতিত্বও অর্জন করেছিলেন।
এই বিশ্বকাপে অবশেষে সেমিফাইনাল খেলতে পারল আফ্রিকার কোনও দেশ। তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচটা জিতলে নিজেদের অসাধারণ প্রদর্শনের পুরস্কার রূপে একটা মেডেল নিয়ে ফিরতে পারবে তারা স্বদেশে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফ্রিকার কৃতিত্ব অবশ্য শুধু সেই মহাদেশের জাতীয় দলের মধ্যেই সীমিত নয়। প্রচুর অভিবাসী পরিবারের সন্তান বিশ্বকাপে বিশাল ছাপ ফেলেছেন। নেদারল্যান্ডসের রুড হুলিট, এডগার ডেভিডস এবং রাইকার্ড কিংবা ফ্রান্সের টিগানা, জিদানদের পাশাপাশি পোগবা, কান্তে, এমবাপের কথা উল্লেখ করার মতো। তাছাড়া বেশ কয়েকজন বিশ্বকাপ-জয়ী ফুটবলার স্বয়ং আফ্রিকার থেকে অভিবাসী। ১৯৮২তে বিশ্বকাপ জয়ী স্বনামধন্য ডিফেন্ডার জেন্টাইলের শৈশব কেটেছিল লিবিয়াতে। দেসাইই জন্মেছিলেন ঘানায়। প্যাট্রিক ভিয়েরার শৈশব কেটেছিল সেনেগালে। উমতিতি জন্মেছেন ক্যামেরুনে। এই বিশ্বকাপে নিজের জাত চিনিয়েছেন চৌমিনি। তিনি ক্যামেরুনিয়ান বংশোদ্ভুত। তাঁর সতীর্থ কামাভিঙ্গা অ্যাঙ্গোলাতে রিজিউজি ক্যাম্পে জন্মেছিলেন।
আফ্রিকার কাছে বিশ্বকাপ আসে স্বপ্ন আর কষ্টের যৌথ ককটেল রূপে। পৃথিবীর কাছে নিজেদের মেলে ধরার একটা সুযোগ এই দেশগুলো কিছুতেই ছাড়তে চায় না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মের চতুঃবার্ষিক কুম্ভমেলায় তারা দেখিয়ে দিতে চায় যে যতই তাদের ওপর প্রথম বিশ্বের শক্তিরা সর্বত্র ক্ষমতা দেখিয়ে যাক, ৯০ গজ বাই ১২০ গজের মাঠে তারা সবার মহড়া নিতে পারে। সেখানেই উত্তর দেওয়া যায় যাবতীয় বর্ণবিদ্বেষের, অত্যাচারের, অপমানের। ফুটবল মাঠ হঠাৎই আর নিছক মাঠ থাকেনা। হয়ে ওঠে প্রতিস্পর্ধার মহাঙ্গণ। আফ্রিকা নিজেকে সমস্ত রঙে-রূপে উজাড় করে মেলে ধরে। ধারে-ভারে অনেক বড়ো টিমের থেকে ছিনিয়ে নেয় পয়েন্ট। আমরা, তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের মানুষেরা হাততালি দিয়ে উঠি। এই একটা মাস আফ্রিকা তো শুধু আফ্রিকার নয়, আফ্রিকা সক্কলের। তাই মিল্লা থেকে শুরু করে আমরাবাত, গরিব দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছে জায়গা করে নেন সহজেই।
দুঃখের কথা আজও আফ্রিকার ফুটবল বলতে অনেকে বোঝে ট্যাকটিক্যালবোধ-বিহীন একগুঁয়ে শারীরিক ফুটবল, ওঝাদের ঝাড়ফুঁক, তুকতাক, নানান কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথার গল্প আর চাপের মুখে চোক করে যাবার অভ্যেস। এইসবের মধ্যে লুকোনো আছে বর্ণবাদের সুপ্ত বীজ। সেসবকে নির্মূল করে ভালোবাসতে যদ্দিন না শেখা হয়ে উঠছে, ততদিন আফ্রিকাকে নিচু চোখে দেখা হবেই, নানান মিথ আর স্টিরিওটাইপের সরলীকরণে ঘিরে দেওয়া হবে তাদের সরব এবং জটিল উপস্থিতি। পশ্চিমি দৃষ্টি আজও আফ্রিকাকে করে দ্যায় চিরকালীন "অপর", সেই ঔপনিবেশিক রীতি মেনেই। আফ্রিকার লড়াই শুধু গোল বা সেভ দিয়ে বিচার তাই করা যায়না। বিশ্বকাপে আফ্রিকার লড়াই হলো ঔপনিবেশবাদ উত্তর পৃথিবীতে স্বকীয় উপস্থিতি জানান দেবার লড়াই। ইউরোপের দেওয়া নাম অনুসারে অন্ধকার মহাদেশের এ যেন নিজেদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে পরিচিত হবার লড়াই।