দলের জয়-পরাজয়ে ক্রিকেট বোর্ডের কী এসে যায়? বারবার বিপর্যয়ের দায় কার

T20 World Cup: একই প্রণালী বারবার প্রয়োগ করে যদি ভারতীয় বোর্ড ভিন্ন ফলের আশা করে তাহলে বলতে হয়, জেতা-হারায় তাদের কিছু এসে যায় না।

হে অতীত, তুমি হৃদয়ে আমার...

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা সোশাল মিডিয়া প্রজন্মের ক্রিকেটার। তাঁরা খুব ইতিহাসের তোয়াক্কা করবেন, এমন ভাবা অন্যায়। কিন্তু ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের খেলোয়াড় জীবন থেকেই একটা ব্যাপারে দারুণ সুনাম। তিনি নাকি নিজের প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে পড়ুয়া। যে কোনও সফরে তিনি কিছু না কিছু পড়েন। সেসব বইয়ের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে ক্রিকেটের ইতিহাস। বিভিন্ন ক্রিকেট সাংবাদিক একাধিকবার এসব কথা লিখেছেন, তাই বিশ্বাস না করার কোনও কারণ নেই। উপরন্তু দ্রাবিড় যে সুবক্তা, তা আমরা সকলেই জানি। শুধু ইংরেজিটা চমৎকার বলেন তা নয়, বক্তব্যও থাকে জোরালো। দ্রাবিড়ের ২০১১ সালের ‘স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ওরেশন’ এত উৎকৃষ্ট ছিল যে, তা নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হয়েছিল। যে লোক বই পড়ে না, তার পক্ষে অত সুন্দর কথা বলা সম্ভব নয়।

এহেন পড়ুয়া এবং ক্রিকেট-ইতিহাসসচেতন দ্রাবিড় কি জানেন না যে, অস্ট্রেলিয়া যেমন গ্লেন ম্যাকগ্রা, ডেনিস লিলি, জেফ থমসন, ব্রেট লি-র দেশ, তেমনই রিচি বেনো আর শেন ওয়ার্নেরও দেশ? বল ঘোরাতে জানেন এমন লেগস্পিনাররা বরাবরই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফল হন, কারণ সে দেশের পিচের অতিরিক্ত বাউন্স তাঁদের ঘূর্ণিকে আরও বিষাক্ত করে তোলে। এই মুহূর্তে পায়ে গুলি খেয়ে হুইলচেয়ারে বন্দি ইমরান খান জানেন, ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ে কত বড় ভূমিকা ছিল লেগস্পিনার মুস্তাক আহমেদের। ন'টা ম্যাচে ১৬খানা উইকেট নিয়েছিলেন ১৯.৪৩ গড়ে, ওভার পিছু রান দিয়েছিলেন চারেরও কম। সেরা বোলিং করেছিলেন একেবারে ফাইনালে। মেলবোর্নের বিশাল মাঠে ইংল্যান্ড অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ আর অলরাউন্ডার ডারমট রিভ মুস্তাককে মারতে গিয়ে আউটফিল্ডে ক্যাচ তুলে আউট হন। গ্রেম হিক ঠকে যান মুস্তাকের গুগলিতে।

আরও পড়ুন: ক্ষমতার শীর্ষে, তবু বাঙালির চোখে কেন ‘বঞ্চিত’ সৌরভ?

লেগস্পিনারদের কথা বলে আলোচনা শুরু করলাম কেন? ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি ফাইনালে ১৯৯২ সালের মতোই আবার পাকিস্তান আর ইংল্যান্ড মুখোমুখি বলে? না। ভাগবত চন্দ্রশেখর আর অনিল কুম্বলের দেশ ভারত একজন পরীক্ষিত ও সফল লেগস্পিনারকে ডাগআউটেই বসিয়ে রেখে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিল বলে। যজুবেন্দ্র চহলের অস্ট্রেলিয়া সফর বেঞ্চে বসে শেষ হয়ে যাওয়াই ভারতের এবারের অভিযানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট যে আগাগোড়া ভুল পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ব খেতাব জিততে গিয়েছিল, তার এর চেয়ে বড় প্রমাণ নেই। মাঠে নেমে যেসব ভুলভ্রান্তি হয়েছে, সেসবের আলোচনা তো হবেই। কিন্তু পরিকল্পনাতেই ভুল থাকলে মাঠে নেমে আর ঠিক কাজটা করা হবে কী করে?

ভারতের মতো দেশে ক্রিকেট বোঝে না, এরকম লোকের সংখ্যা খুবই কম। ফলে অগণিত ক্রিকেটবোদ্ধাদের মধ্যে কেউ বলে বসতেই পারেন, ১৯৯২ সালের বস্তাপচা ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ধারণা দিয়ে আজকের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বোকামি। আচ্ছা, ইতিহাস চুলোয় যাক। এবারে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে লেগস্পিনাররা কী করেছেন সেটাই না হয় দেখা যাক। সুপার ১২ স্তর থেকে ফাইনালের আগে পর্যন্ত মোট নজন লেগস্পিনার খেলেছেন (ইংল্যান্ডের দুজন; আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবোয়ের একজন করে)। এঁরা মোট ১৩১ ওভার বল করে তুলে নিয়েছেন ৪১টা উইকেট। উইকেট পিছু খরচ করতে হয়েছে মাত্র ২২.২৯ রান, ওভারপিছু রান দিয়েছেন সাতেরও কম। একজনও লেগস্পিনারকে খেলায়নি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশ– ঠিক যে চারটে দেশ সেমিফাইনালে পৌঁছতে পারেনি।

 

যা শত্রু পরে পরে
এই আলোচনা শুরুতেই সেরে নেওয়ার আরেকটা কারণ হলো, ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেমিফাইনালে গোহারা হারার পর সটান দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন বোলারদের ঘাড়ে। স্বয়ং অধিনায়কসমেত ব্যাটাররা কী করেছেন, সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে তাই বলে নেওয়া দরকার যে, ঠিকঠাক বোলারদের খেলানোই হয়নি। অস্ট্রেলিয়ায় খেলা হলেই সমস্ত আলোচনা জোরে বোলারদের নিয়ে হয়ে থাকে। কারণ সবাই জানে সে-দেশের পিচ অন্য দেশের তুলনায় গতিময় হয়, বাউন্স বেশি থাকে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে অস্ট্রেলিয়ায় জিততে হলে দলে ভাল স্পিনার থাকা একইরকম জরুরি, বিশেষ করে সীমিত ওভারের খেলায়। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মাঠগুলো অস্ট্রেলিয়াতেই। যাঁরা নিয়মিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখে অভ্যস্ত তাঁরা জানেন, এই ফরম্যাটে সর্বত্রই বাউন্ডারি ছোট করে ফেলা হয়। ফলে দৌড়ে তিন রান নেওয়ার ঘটনা প্রায় দেখাই যায় না ভারত বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাঠে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলো এতটাই বড় যে বাউন্ডারি কমিয়ে আনার পরেও এবারের ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে প্রচুর তিন রান হতে দেখা গেছে। ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালে মহম্মদ শামির অবিমৃশ্যকারিতায় জস বাটলার একবার দৌড়ে চার রান পর্যন্ত নিয়ে ফেলেছেন। তা এত বড় বড় মাঠে স্পিনারকে চার, ছয় মারতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই টি-টোয়েন্টি যুগের আগেও যে দলে ভালো স্পিনার আছে, তারা অস্ট্রেলিয়ায় ভালো ফল করেছে।

১৯৯২ সালে কেবল পাকিস্তানের মুস্তাক নয়, নিউজিল্যান্ডের অফস্পিনার দীপক প্যাটেলও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন এই কারণে। স্পিনার যে বোলিং ওপেন করতে পারে, তার আগে কেউ কখনও ভাবেনি। প্রয়াত মার্টিন ক্রোয়ের ওই চাল প্রতিপক্ষকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল। প্যাটেল বেশি উইকেট নিতে পারেননি, কিন্তু ওভার পিছু রান দিয়েছিলেন ৩.১০। আরও আগে ১৯৮৫ সালে ভারত যখন অস্ট্রেলিয়ায় বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জেতে, সেই জয়েরও অন্যতম স্থপতি ছিলেন লেগস্পিনার লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণণ।

অথচ, এবার চহলের বদলে খেলে গেলেন অক্ষর প্যাটেল। যিনি উচ্চতার কারণে পিচ থেকে বাউন্স আদায় করতে পারেন বটে, কিন্তু বল ঘোরাতে হলে তাঁর দরকার স্লো টার্নার। অস্ট্রেলিয়ায় অমন পিচ পাওয়া যায় না, বরং সমান বাউন্সের পিচ হওয়ায় অক্ষরের মতো বোলারকে মনের সুখে প্রহারেণ ধনঞ্জয় করা যায়। হয়েছেও তাই। অক্ষর প্রায় ৪০ গড়ে পাঁচ ম্যাচে মোটে তিনটে উইকেট নিয়েছেন, ওভার-পিছু সাড়ে আটের বেশি রান দিয়েছেন। কিন্তু বোলিং আক্রমণের একমাত্র সমস্যা তিনি নন। দীর্ঘদিন সাদা বলের ক্রিকেটে টিম ম্যানেজমেন্টের অপছন্দের বোলার হয়ে থাকার পর রোহিত-দ্রাবিড়ের আমলে অশ্বিন হঠাৎই প্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তিনি প্রায় কোনও ম্যাচেই কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। অথচ পিচে স্পিনারদের জন্য যথেষ্ট সাহায্য ছিল। সেমিফাইনালের অ্যাডিলেডে তো ছিলই। চহলের চেয়ে অক্ষরের ব্যাটিং ক্ষমতা বেশি, তাই তাঁকে খেলানোই সমীচীন– এমন একটা যুক্তি টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ দেখা গেল, প্রায়ই তাঁর আগে ব্যাট করতে নামছেন অশ্বিন। তাহলে আর চহল খেললে কী ক্ষতি ছিল?

পেস বোলিং বিভাগে আবার গোড়ায় গলদ। তড়িঘড়ি আহত যশপ্রীত বুমরাকে ফেরানোর চেষ্টা হয়েছিল, সে চেষ্টা সফল হয়নি। শামি অতীতে টি-টোয়েন্টিতে ভাল করেননি, তা সত্ত্বেও তাঁকেই বুমরা-র জায়গায় নেওয়া হল। সুপার ১২-তে তবু ঠিকঠাক চলছিল, সেমিফাইনালে যখন তাঁরই বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, তখনই শামি ব্যর্থ হলেন। তরুণ অর্শদীপ (১০ উইকেট, ওভার পিছু ৭.৮০ রান) আর অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমার (মাত্র চার উইকেট, কিন্তু ওভার পিছু ৬.১৬) গোটা প্রতিযোগিতায় নেহাত খারাপ বল করেননি। কিন্তু সমস্যা হল তাঁরা একইরকম গতির সুইং বোলার। যেদিন বল তত সুইং করে না, সেদিন দু'-প্রান্ত থেকে দু'জনকে খেলতে হলে ব্যাটারদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। শামির গতি এঁদের চেয়ে বেশি, কিন্তু সুইং না হলেও ব্যাটারকে ঘামিয়ে তোলার মতো নয়; যা পাকিস্তানের হ্যারিস রউফ, ইংল্যান্ডের মার্ক উড বা দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যানরিখ নর্খ্যে পারেন। ফলে ভারতের বোলিং হয়ে গেল বৈচিত্র্যহীন। ভারতের দ্রুততম বোলার হয়ে গেলেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, যিনি আবার বিশেষ ফর্মে ছিলেন না। আসলে বিশেষ করে বুমরা অনুপস্থিত বলেই দরকার ছিল একজন এক্সপ্রেস গতির পেসার। কিন্তু ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে পারা উমরান মালিক বা মহসিন খানকে তো স্কোয়াডেই রাখা হয়নি। ছিলেন হর্ষল প্যাটেল, যাঁর গতি অর্শদীপ, ভুবনেশ্বরদের চেয়েও কম। তাঁকে খেলালে যে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতো অস্ট্রেলিয়ার পিচে, সেকথা রোহিত-দ্রাবিড় ঠিকই বুঝেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাঁকে তাহলে দলে রাখা হয়েছিল কেন? উত্তর দেওয়ার জন্য নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মাকে পাওয়া যাবে কি না, কে জানে!

শশী তারকায় তপনে
নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার অভাব বোলারদের ঘাড়ে চাপিয়ে রোহিত আসলে যাদের আড়াল করেছেন, এবার তাদের আলোচনায় আসা যাক। ক্রিকেটের যে ফরম্যাটে মাত্র ১২০টা বল খেলার জন্য হাতে দশখানা উইকেট থাকে, সেখানে বোলারদের ভূমিকা যে স্রেফ সহায়কের– একথা বোঝার জন্য ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার দরকার পড়ে না। টি-টোয়েন্টি জেতানোর দায়িত্ব সর্বদা মূলত ব্যাটারদের কাঁধে। যে দলের ব্যাটিং লাইন আপ বাংলাদেশ, জিম্বাবোয়ে, নেদারল্যান্ডসের মতো দলের সঙ্গেও ২০০ রান করতে পারে না; পার্থের সবচেয়ে গতিময় পিচে ১৪০ পর্যন্তও পৌঁছতে পারে না– সেই দলের অধিনায়ক যখন স্রেফ সেমিফাইনাল ম্যাচটা দশ উইকেটে হারার জন্য বোলারদের দিকে আঙুল তোলেন তখন হেসে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।

অধিনায়ক নিজে ছ'টা ম্যাচে মাত্র ১১৬ রান করেছেন, গড় ১৯.৩৩। তাঁর নির্ভরযোগ্য ওপেনিং পার্টনার কে এল রাহুলের গড় ২১.৩৩। দুটো অর্ধশতরান করেছেন জিম্বাবোয়ে আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাসকিন আহমেদের সামনে খেলতে গিয়েই তাঁর গলদঘর্ম অবস্থা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, রোহিত আর রাহুলের স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ১০৬.৪২ আর ১২০.৭৫। এই দুই বীরপুঙ্গবের কল্যাণে ওপেনিং জুটির ওভার-পিছু রান করার দিক থেকে ভারত সুপার ১২-তে খেলা দলগুলোর মধ্যে সবার নিচে, সবার পিছে (৪.৯৮, অর্থাৎ ১০৬ বল খেলে ৮৮ রান)।

যোগ্যতা অর্জন পর্ব পেরিয়ে সুপার ১২-তে উঠতে পারেনি যারা, তাদের মধ্যেও একমাত্র নামিবিয়া এক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে (৪.৪৪)।

এবার সবচেয়ে অপ্রিয় প্রসঙ্গে আসা যাক– বিরাট কোহলি। তিনি প্রতিযোগিতা শেষ করেছেন ব্র্যাডম্যানোচিত ৯৮.৬৬ গড়ে, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৪০। অতএব কোহলির ভক্তরা এবং তিনি যে শুধু ভারতের নয় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ব্যাটার তা প্রমাণ করতে ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা, বলে চলেছেন– আর কী করবে লোকটা? ঘটনা হলো, সূর্যকুমার যাদব গোটা প্রতিযোগিতায় অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেটে (১৮৯.৬৮) ব্যাট না করলে এবং সেমিফাইনালে হার্দিক একই কাজ (১৯০.৯০) না করলে কোহলির ওই অর্ধশতরানগুলো সত্ত্বেও ভারত সম্ভবত আরও আগেই প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিত। কারণ মোট রান জেতার মতো হতো না। একমাত্র ব্যতিক্রম পাকিস্তান ম্যাচ। সত্যিই ওই হারা ম্যাচটা কোহলি একা হাতে জিতিয়েছেন। একথাও সত্যি যে, শেষ দু'-ওভারে কোনও দিন ভুলতে না পারার মতো দুটো ছক্কা মারার প্রতিভা এই মুহূর্তে বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারের নেই। কিন্তু প্রথম ওভারে ব্যাট করতে নেমে ১৬০ রান তুলতে তাঁকে শেষ ওভার অবধি খেলতে হয়েছে এবং শেষ ওভারেও ম্যাচের লাগাম নিজের হাতে রাখতে পারেননি। শেষ বল খেলে উইনিং স্ট্রোক নিতে হয়েছে টেল এন্ডার অশ্বিনকে। সেদিন যা ঘটেছিল, তা এককথায় কামাল। কিন্তু কামাল একবারই ঘটে। কামাল ভুল প্রণালীকে সঠিক বলে প্রমাণ করে না। শেষ দু'ওভারে গোটাতিরিশেক রান বারবার তোলা যায় না। সুতরাং, ‘আগে ধরে খেলব, পরে মেরে পুষিয়ে দেব’ নীতি অচল। ইংল্যান্ড ম্যাচই তা প্রমাণ করে দিয়েছে। পঞ্চাশ করতে ৪০ বল খরচ করে ফেলার পর কোহলি ১৮তম ওভারে আউট হয়ে গেলেন, দলের রান তখন মাত্র ১৩৬।

কোহলির এই নীতির সপক্ষে যুক্তি হলো– ওপেনাররা ডুবিয়েছে, তিনে নেমে খেলাটা ধরতে হবে না? নইলে তো ইনিংস আগেই শেষ হয়ে যেত। পাটিগণিত কিন্তু এই ধরাধরি সমর্থন করে না। হিসাবটা একেবারে সোজা। টি-টোয়েন্টিতে একটা দলের জন্য বরাদ্দ ১২০টা বল, হাতে দশটা উইকেট। মানে উইকেটপিছু মাত্র ১২টা বল। একজন ব্যাটার ওর চেয়ে বেশি বল না খেললে কিচ্ছু এসে যায় না, বরং সেক্ষেত্রে পরের ব্যাটার বেশি সুযোগ পেয়ে যাবেন রান করতে। সুতরাং বারোটা বলে যত বেশি সম্ভব রান করার চেষ্টা করা উচিত, তার চেয়ে বেশি বল খেললে আরও বেশি রান করার চেষ্টা করা দরকার। তা না করে ১৩৬.৪০ স্ট্রাইক রেটে পুরো ইনিংস ব্যাট করা মানে পরের ব্যাটারদের কাজ কঠিন করে দেওয়া, হাতে থাকা উইকেটের অপচয়। মনে রাখা ভালো, এই প্রতিযোগিতায় পাওয়ার প্লে-তে ওভার-পিছু রান করায় শেষ থেকে দ্বিতীয় হয়েছে ভারত (৫.৯৭; প্রথম স্থানে নেদারল্যান্ডস)।

পাওয়ার প্লে-তে অত কম রান করে টি-টোয়েন্টি খেতাব জেতা যায় না। এতে কোহলির দায় কিন্তু কম নয়। কারণ তিনি প্রায়শই পাওয়ার প্লে চলাকালীনই ব্যাট করতে নেমেছেন। টি-টোয়েন্টি একেবারেই স্ট্রাইক রেটের খেলা। কোহলির কেরিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৯৬। মোট রান আর গড়ে যত ওপরেই থাকুন, এতে তিনি পৃথিবীর প্রথম ৭০ জনের মধ্যেও নেই (তথ‍্য সূত্র: ইএসপিএন প্রদত্ত পরিসংখ্যান, ইএসপিএন ক্রিকইনফো ডট কম)‌। নিজে অধিনায়ক থাকার সময়ে কোহলি টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়েও ‘ইনটেন্ট’ শব্দটা বারবার ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ, পিচ যেমনই হোক, পরিস্থিতি যা-ই হোক, প্রতিপক্ষের বোলিং সবল না দুর্বল, সেসব দেখা চলবে না। সারাক্ষণ রান করার চেষ্টা করে যেতে হবে, মন্থর গতিতে রান করা মানেই নাকি নিজের দলের ওপর চাপ তৈরি করা। কথাটা অবশ্য চালু করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই ইনটেন্টের অভাবেই তো অজিঙ্ক রাহানের সাদা বলের কেরিয়ার বলে কিছু হলো না। চেতেশ্বর পূজারাকে বহুবার শতরান করেও শুনতে হয়েছে তাঁর ইনটেন্টের অভাব আছে। আশ্চর্যের কথা, ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে কোহলির নিজের ইনটেন্টের দেখা পাওয়া যায় না। সুনীল গাভাসকর, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, সচিন তেন্ডুলকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণের দেশের কোহলি অ্যাডাম জাম্পা, লিয়াম লিভিংস্টোন, আদিল রশিদের মতো স্পিনারকেও পিটিয়ে উঠতে পারেন না।

আদতে এসব দোষ এবারের ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জানা গেল, এমন নয়। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে এইসব দোষেই ভারত সেমিফাইনালেও পৌঁছতে পারেনি। এ-বছর এশিয়া কাপেও এইসব কারণেই আফগানিস্তান ছাড়া কারও সঙ্গেই পরাক্রম দেখানো সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও কেন এই তারকাদের বাদ দেওয়া যায় না, কীভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে আইপিএল– সেসব নিয়ে এই ওয়েবসাইটেই আগে লিখেছি, পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। বরং অন্য কয়েকটা প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করা যাক।

কচি তারা, কথা ফোটে নাই
২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ভারত আর কোনও খেতাব জেতেনি। আজ দ্রাবিড়-রোহিতের ব্যর্থতায় শাস্ত্রী-কোহলির যে ভক্তরা উল্লসিত, তাঁরাও নিশ্চয়ই এ-তথ্য ভুলে যাননি। সর্বগ্রাসী মিডিয়া হাইপ আর মনভোলানো বিজ্ঞাপনী চাকচিক্য এতদিন সব ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল, ইংল্যান্ড একেবারে দশ উইকেটে জিতল বলেই সম্ভবত আর সামলাতে পারা যাচ্ছে না। বহু চাটুকারেরও মুখ খুলে গেছে। তবু এই চূড়ান্ত পণ্যায়নের যুগে যেহেতু ক্রিকেট তারকাদের একেকজনের ওপর কোটি কোটি টাকা লগ্নি হয়ে আছে, সেহেতু এঁদের ঢাল হয়ে এখনও কিছু সংবাদমাধ্যম, ক্রিকেট-লেখক এবং অতশত না-বোঝা নিষ্পাপ ভক্ত দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। নরেন্দ্র মোদির সরকারের একটা ব্যর্থতাও অস্বীকার করতে না পেরে যেমন এক শ্রেণির মানুষ বলেন “ইফ নট মোদি, দেন হু”, তেমনই এঁরাও বলতে শুরু করেছেন, এদের বাদ দিলে খেলবে কারা?

ঘটনা হলো, এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে এর চেয়ে অবান্তর প্রশ্ন নেই। মুম্বইয়ের পৃথ্বী শ দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত একটাই টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এবং কোনও রান করতে পারেননি। কিন্তু আইপিএল এবং ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ৯২ ম্যাচে তিনি করে ফেলেছেন ২৪০১ রান; স্ট্রাইক রেট ১৫১.৬৭; সর্বোচ্চ ১৩৪। ওই ১৩৪ রান তিনি করেছেন মাত্র ৬১ বলে, গত মাসে আসামের বিরুদ্ধে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে। ওই প্রতিযোগিতাটি হলো ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা। তাহলে আইপিএল কী? এ প্রশ্ন উত্থাপন করিয়া লজ্জা দিবেন না।

ভারতীয় দলের তারকারা ইদানীং যত খেলেন, তার সমান বা হয়তো তার চেয়েও বেশি বিশ্রাম নেন। সেই সুবাদে ঝাড়খণ্ডের উইকেটকিপার ব্যাটার ঈশান কিষণকে তো অনেকেই চিনে গেছেন। ভারতের হয়ে যে ক'টা টি-টোয়েন্টি আর একদিনের ম্যাচ তিনি এখনও অবধি খেলেছেন, তাতে ধোনির মতো অভাবনীয় কিছু না করলেও, প্রমাণ হয়েছে, তাঁর আরও সুযোগ প্রাপ্য। স্রেফ ওপেনিং ব্যাটার হিসেবেও তিনি খেলেছেন এবং খেলতে পারেন।

কিন্তু কাব্যে সবচেয়ে উপেক্ষিত কেরলের সঞ্জু স্যামসন। তিনি যে সিরিজে দলে সুযোগ পান, সেখানে একটা-দুটো ম্যাচে খেলেন, সেখানে সফল বা ব্যর্থ যা-ই হন, পরের সিরিজে বাদ পড়ে যান। আবার হয়তো তার পরের সিরিজে ফেরত আসেন। তারকাদের ট্র্যাফিক জ্যামে মাথা গলাতে পারেন না আর কী। এ-পর্যন্ত ভারতের হয়ে ১৬টা টি-টোয়েন্টিতে ১৩৫.১৫ স্ট্রাইক রেটে ২৯৬ রান করেছেন। উইকেটের পিছনে সাতটা ক্যাচ নিয়েছেন, দুটো স্টাম্পিং করেছেন। সঞ্জুর বয়স ইতিমধ্যেই ২৮, ঈশান ২৪, পৃথ্বী ২৩। এছাড়াও আছেন শ্রেয়স আয়ার, শুভমান গিলরা। আছেন আইপিএলে সাফল্য পাওয়া ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (২৫), রাহুল ত্রিপাঠী (৩১), ফিনিশার হিসেবে একাধিকবার চমকে দেওয়া রাহুল টেওয়াটিয়া (২৯)। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো বহু দেশ টি-টোয়েন্টিতে এমন অনেককে খেলায়, যাঁরা অন্য কোনও ফরম্যাটে সুযোগ পান না। ভারতও চাইলে তেমন করতেই পারে। টি-টোয়েন্টি অন্যরকম, তার চাহিদাও অন্যরকম।

মাঝখানে নদী ওই
ওপরের নামগুলো গত কয়েক মাসে তারকাদের অনুপস্থিতিতে যেটুকু সুযোগ পাওয়া গেছে, তার সদ্ব্যবহার করা ক্রিকেটারদের। কিন্তু ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি থেকে শুকনো মুখে ফেরা দলের মধ্যেই এমন দু'জন আছেন, যাঁরা উপর্যুপরি ব্যর্থ হওয়া তারকাদের জায়গা নিতে পারেন। একজন ঋষভ পন্থ। টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ৩১ ম্যাচের কেরিয়ারেই যেসব ইনিংস তিনি খেলে ফেলেছেন, তাতে তাঁর প্রতিভাকে সন্দেহ করার আর উপায় নেই। কিন্তু তার সঙ্গে মানানসই সাফল্য সাদা বলের কেরিয়ারে এখনো দেখা যায়নি। তার অনেকখানি দায় শাস্ত্রী-কোহলি এবং দ্রাবিড়-রোহিতের। পাঁচ বছর হয়ে গেল, ব্যাটিং অর্ডারে ঋষভের জায়গা কোথায় তা এখনও স্থির হলো না। অথচ সাদা চোখেই দেখা যায়, তাঁর মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটার যত বেশি বল খেলার সুযোগ পায়, দলের পক্ষে তত ভাল। ইংল্যান্ডে একটা ম্যাচে ওপেনার হিসেবে খেলিয়েই সেই পরীক্ষায় দাঁড়ি টেনে দিলেন দ্রাবিড়-রোহিত; আগের কোচ, অধিনায়ক তো সে-চেষ্টাও করেননি। ভাবলে শিউরে উঠতে হয়, সচিন একদিনের ক্রিকেটে কত নম্বরে ব্যাট করবেন, তা নিয়ে অজিত ওয়াড়েকর-আজহার ১৯৯৪ সালে অকল্যান্ডের সেই ইনিংসের পরেও এমন টালবাহানা করলে কী হতো?

অন্যজন দীপক হুড়া। বরোদার এই ২৭ বছর বয়সি ব্যাটার ভারতের হয়ে ১৩টা টি-টোয়েন্টিতে ১৫৩.৪০ স্ট্রাইক রেটে শতিনেক রান করে ফেলেছেন। জুন মাসে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫৭ বলে ১০৪ করেছেন। তবু তাঁর জায়গা পাকা নয়, কারণ ওই ট্র্যাফিক জ্যাম। ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে মাত্র একটা ম্যাচ খেলতে পেলেন পার্থে সবচেয়ে কঠিন উইকেটে।

বলে রাখা ভালো, কেবল টি-টোয়েন্টি নয়। রোহিত, শিখর ধাওয়ান, কোহলিরা একদিনের ক্রিকেটে যে ব্যাটিংটা করেন, সেটাও প্রায় প্রাক-জয়সূর্য-কালু যুগের ব্যাটিং। বিশেষত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে ওই ব্যাটিং সব দল বাতিল করে দিয়েছে। সেই কারণেই ভারত ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও ঝুরি ঝুরি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছে গত ন'বছরে, কিন্তু বড় প্রতিযোগিতা এলেই ব্যর্থ। কারণ কোনও বড় দল, বিশেষ করে নকআউট স্তরের ম্যাচে, শেষের দিকের ওভারে এত লুজ বল ফেলে না বা ফিল্ডিংয়ে এত ভুলভ্রান্তি করে না যে, পাওয়ার প্লে-তে কম রান করার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যাবে। বরং সেসময় আসার আগেই আউট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যেমন নতুন বলেই রোহিত, রাহুল, কোহলি আউট হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে শুধু খেলোয়াড় পরিবর্তন নয়, পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তন না আনলে সামনের বছর ঘরের মাঠে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও একইরকম বিপর্যয় ঘটবে।

একই প্রণালী বারবার প্রয়োগ করে যদি ভারতীয় বোর্ড ভিন্ন ফলের আশা করে তাহলে বলতে হয়, জেতা-হারায় তাদের কিছু এসে যায় না। তেমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়, কারণ আইপিএল আর ভারতীয় ক্রিকেট দলের ম্যাচের সম্প্রচার সত্ত্ব থেকে এত বিপুল অর্থ আয় হয় যে, দলের জয়-পরাজয়ে কেবল ক্রিকেটপ্রেমীদেরই উত্তেজিত হওয়া সাজে। বোর্ডকর্তারা অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স দেখে নিয়ে সুখে নিদ্রা যেতে পারেন।

এতক্ষণে অরিন্দম…
কারা যেন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিষম চিন্তিত হয়ে দ্রাবিড়কে প্রশ্ন করে ফেলেছিল, ভারতীয় ক্রিকেটারদের কি অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে দেওয়া উচিত? ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা তো অনেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলেন। হয়তো তারই সুবিধা পেয়ে গেলেন। দ্রাবিড়, ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট ক্রিকেটারদের একজন, মহা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছেন, সে তো ভারি মুশকিলের ব্যাপার হবে। (তথ‍্য সূত্র: ইএসপিএন (Siddharth Monga, 10 Nov, 2022) অন্য দেশের লিগগুলোর সময়ে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট চলে যে! ভারতীয়রা ওখানে খেলতে গেলে আমাদের রঞ্জি ট্রফিটা উঠে যাবে যে! শুনে মাইকেল মধুসূদন মনে পড়ে: “এতক্ষণে” –অরিন্দম কহিলা বিষাদে / জানিনু কেমনে আসি লক্ষণ পশিল/রক্ষঃপুরে!...”

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আর্থিক পেশির জোরে যখন আইপিএলের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ফিউচার ট‍্যুরস প্রোগ্রামে জায়গা খালি করিয়েছে তখন আর পাঁচজন অনুগত প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতোই দ্রাবিড় চুপচাপ ছিলেন। ইতিমধ্যে বোর্ড আইপিএলে আরও দুটো দল যোগ করেছে, সম্প্রচার সত্ত্বের দাম যত বাড়ানো হচ্ছে, তত টাকা পাওয়া যাচ্ছে দেখে আগামী কয়েক বছরে ম্যাচের সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এখন সারা পৃথিবীতে একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগ গজাচ্ছে। সেসব দেশের ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের খেলোয়াড়দের এতকাল আইপিএলের জন্য ছেড়ে এসেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ রেখে আইপিএল চলবে– এ ব্যবস্থাও মেনে নিয়েছে। এখন যদি বিস্মিত দ্রাবিড় বলেন– হায়, তাত, উচিত কি তব/একাজ– তাতে তো চিঁড়ে ভিজবে না। উচিত-অনুচিতের সীমা তো ক্রিকেট কবেই পেরিয়ে এসেছে।

More Articles